আসানসোল, 28 এপ্রিল: অবশেষে 47 দিন পর আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য সাধন চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের দফতরে প্রবেশের সুযোগ পেলেন । কড়া পুলিশি প্রহরায় শুক্রবার দুপুরে তিনি নিজের দফতরে যান । প্রায় আড়াই ঘণ্টা তিনি অফিসে ছিলেন । অন্যদিকে, বাইরে তখন তুমুল আন্দোলন, স্লোগান । আড়াই ঘণ্টা পর উপাচার্য যখন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান, তখন তাঁকে ঘিরে চোর চোর স্লোগান ওঠে ।
গত 47 দিন ধরে আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আন্দোলন । শিক্ষক-অশিক্ষক-কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে সরগরম রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় । তাঁদের দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ । অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী এর আগে দুবার বিশ্ববিদ্যালয় ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন । শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে তাঁকে ফিরে যেতে হয়েছে । শুক্রবার কড়া পুলিশি প্রহরায় কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এলেন এবং নিজের পক্ষে প্রবেশ করলেন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী ।
বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল কলেজের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারকে বরখাস্ত করা নিয়ে । কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারকে বরখাস্ত করেছিলেন । কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছিলেন যে, রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার সরকারি নির্দেশিকা না মেনে ধর্মঘটের দিনে বেশ কিছু শিক্ষককে বেতন পাইয়ে দিয়েছেন । শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের অ্যাটেডেন্স রেজিস্টার অর্থমন্ত্রকে পাঠানোর ক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি করছেন । সেই কারণেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে ।
এই ঘটনার পরে শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি হয় ৷ উপাচার্যের বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে, উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষকেরা । পরবর্তীকালে শিক্ষকদের সঙ্গে এই আন্দোলনে যোগ দেন কলেজের অশিক্ষক-কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রীরা । টানা 47 দিন ধরে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে এই আন্দোলন চলছে ।
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী । হাইকোর্ট রায় দেয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এবং তার আশপাশে 50 মিটার পর্যন্ত কোনও আন্দোলন করা যাবে না । এরপরই শুক্রবার পুলিশি প্রহরার মধ্য দিয়ে উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী আসেন । সাধন চক্রবর্তী যখন বিশ্ববিদ্যালয় ঢোকেন, ছাত্রছাত্রীরা "উই শ্যাল ওভারকাম" গানটি গাইতে শুরু করেন এবং চলতে থাকে স্লোগান । সেই স্লোগানের মাঝখান দিয়েই উপাচার্য নিজের চেম্বারে যান এবং প্রায় আড়াই ঘণ্টা নিজের চেম্বারে তিনি ছিলেন ।
আড়াই ঘণ্টা পর চেম্বার থেকে বের হয়ে উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী জানান "বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষাঙ্গন, এটা রণাঙ্গন নয় । এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ । যেখানে কোনও শব্দ শোনা যেত না । কিন্তু যা হচ্ছে সেটা সঠিক নয় । আমি ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করব এবং আমার আশা এই সমস্ত কিছুই কেটে যাবে । যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে সেই ক্ষতির যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করতে হবে ।"
এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বেরিয়ে যান । পুলিশের প্রহরার মধ্যেই তিনি গিয়ে গাড়িতে বসেন । ছাত্রছাত্রীদের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকরা চোর চোর বলে স্লোগান দিতে থাকেন । সেই স্লোগানের মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বেরিয়ে যান উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী ।
আরও পড়ুন: শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আটকে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ