আসানসোল, 23 ডিসেম্বর: প্রাগৈতিহাসিক যুগে গাছপালা, পশু-পাখি ইত্যাদি নানান ধ্বংসের ফলে চাপা পড়ে যেত ৷ লক্ষ-কোটি বছর ধরে সেই চাপ ও তাপের ফলেই তৈরি হয় কয়লা ৷ কোটি কোটি বছর আগে মাটির তলায় চাপা পড়ে যাওয়া এই সমস্ত উদ্ভিদ চাপ এবং তাপের ফলেই রূপান্তরিত হয় কালো অঙ্গারে ৷ ইতিহাস বলছে আসানসোল-রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলে প্রায় 25 কোটি বছরের পুরনো কয়লা স্তূপ রয়েছে ৷ আর কয়লা থাকা মানেই স্বাভাবিকভাবেই খনির ভিতরে থাকা কালো পাথরের গাত্রে থাকবে ফসিলস বা জীবাশ্ম ৷ কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনই বেশ কিছু জীবাশ্ম সংগ্রহ করা হয়েছে ৷ যার বয়স আনুমানিক আড়াইশো মিলিয়ন বছর ৷ শুধু তাই নয় এই জীবাশ্মগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথের স্মৃতি বিজড়িত নারায়ণকুড়ি কয়লা খনি থেকে ৷
হেরিটেজ জিনিসপত্র সংগ্রহ ও গবেষণার জন্যই আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে সেতুবন্ধ সংগ্রহশালা ৷ বহু পুরনো জিনিসপত্র এখানে সংগ্রহ করা হয়েছে ৷ যা ছাত্র-ছাত্রীদের দেখার এবং গবেষণা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে ৷ এবার সেই সেতুবন্ধু সংগ্রহশালায় বিস্ময়কর জীবাশ্মের দেখা পাওয়া যাচ্ছে ৷ দু'রকমের জীবাশ্ম ইতিমধ্যে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেতুবন্ধ সংগ্রহশালায় নিয়ে আসা হয়েছে ৷ একটি গাছের কান্ড থেকে পাথরে রূপান্তরিত হওয়া জীবাশ্ম এবং বেশ কিছু কয়লার বা খনি থেকে সংগ্রহ করা পাথরের জীবাশ্ম ৷
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তথা এই সেতুবন্ধ সংগ্রহশালার কিউরেটর ও গবেষক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "অজয় নদীর ধার থেকে আমরা একটি জীবাশ্ম সংগ্রহ করতে পেরেছি ৷ এই ফসলটি আনুমানিক 300 মিলিয়ন বছরের পুরনো ৷ এটি একটি দ্বিবীজ উদ্ভিদের কান্ড ছিল ৷ ধীরে ধীরে পাথরে রূপান্তরিত হওয়ার পরেই এই জীবাশ্ম তৈরি হয়েছে ৷ আমরা ইতিমধ্যেই সেটির ভৌগলিক পরীক্ষা করিয়েছি ৷ অন্যদিকে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত নারায়ণকুড়ি কয়লা খনি থেকেও বেশ কয়েকটি কয়লার জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে ৷ যেগুলি আনিমনিক 25 কোটি বছরের পুরনো ৷ এই তথ্য আমরা ইসিএল থেকেই জানতে পেরেছি ৷"
এই জীবাশ্মগুলির গায়ে গাছের পাতা, কান্ড ও অন্যান্য জীবজন্তুর জীবাশ্মও রয়েছে ৷ স্বভাবতই জীবাশ্ম সংগ্রহের পর কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷ কারণ আগামী দিনে খনি অঞ্চল নিয়ে যাঁরা গবেষণা করতে চান, এই ফসিলস তাঁদের কাছে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলেই আশা করছেন অধ্যাপকরা ৷ শুধু তাই নয়, বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীরা যাঁরা ভূগোলের পাতায় শুধুই জীবাশ্মের নাম পড়ত ৷ তাঁরা এখন চাক্ষুস করে যেতে পারছে কয়লা অঞ্চলের এই জীবাশ্মগুলি ৷
আরও পড়ুন: