কলকাতা, 18 জুন : পরিবার সূত্রে একজন কংগ্রেসী (Congress) ৷ বাবা সমীররঞ্জন বর্মন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারেও বসেছেন ৷ কিন্তু তিনি সুদীপ রায় বর্মন (Sudip Roy Barman) এখন কংগ্রেসের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির (BJP) নেতা ৷
যদিও তিনি সেখানে খুব একটা স্বস্তিতে নেই বলেই ত্রিপুরার (Tripura) রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন ৷ তাই তাঁকে নিয়ে জল্পনার শেষ নেই ৷ তিনি গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন, নাকি থাকবেন, তা নিয়ে মাঝেমধ্যে আলোচনাও চলে ৷ যা ইদানীং আরও বেড়েছে ৷
আরও পড়ুন : Mukul Roy : কৃষকবন্ধু নিয়ে ভোলবদল তৃণমূলে ফেরা মুকুলের
ত্রিপুরায় বিজেপির বিপ্লব দেবের (Biplab deb) মন্ত্রিসভার প্রাক্তন এই সদস্য অবশ্য এই জল্পনা উড়িয়ে দিচ্ছেন ৷ ইটিভি ভারতকে সরাসরি জানিয়েছেন যে এই ধরনের খবরের সঙ্গে সত্যের দূরত্ব অনেক ৷ তাহলে কি তিনি বিজেপিতেই থেকে যাচ্ছেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য তিনি সরাসরি কোনও উত্তর দেননি ৷ বরং বলেছেন, ‘‘এর বেশি কিছু বলব না ৷’’
তাই জল্পনা থামার বদলে আরও বেড়েছে ৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অবশ্য বলছেন, সুদীপ রায় বর্মনের রাজনৈতিক পথচলাই এই জল্পনায় ইন্ধন দিচ্ছে ৷ তাঁরা বলছেন, ত্রিপুরায় এক সময় কংগ্রেস ছিল প্রধান বিরোধী দল ৷ আচমকা সুদীপ সদলবলে চলে আসেন তৃণমূল কংগ্রসে (Trinamool Congress) ৷ সালটা 2016 ৷ তখন ত্রিপুরায় মুকুল রায় (Mukul Roy) তৃণমূলের পর্যেবক্ষক ৷ তাই তখন থেকেই তিনি মুকুল অনুগামী হিসেবে পরিচিত ৷
আরও পড়ুন : আরএসএস-র রিপোর্ট পেয়েই বিধানসভা নির্বাচনে মুকুলকে নিষ্ক্রিয় ?
সুদীপ আসার পর তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরার প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠে ৷ বাংলার মতো ওই রাজ্যেও সিপিএমের সরকারকে উৎখাত করতে সচেষ্ট হন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ কিন্তু 2018 সালে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাসে আগে মমতার সেই লক্ষ্যে ব্যাঘাত ঘটে ৷
এবারও কারণ সেই সুদীপ ৷ এবার তিনি তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করেন ৷ আর অনুগামী বিধায়ক ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে 2017 সালে যোগদান করেন বিজেপিতে ৷ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ফলও চমকপ্রদ হয় ৷ হেরে যায় সিপিএম ৷ মানিক সরকারের বদলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন বিজেপির বিপ্লব দেব ৷
রাজনৈতিক মহল বলছে, মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদান করতেই সুদীপও সেই দিকে পা বাড়ান ৷ উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই রাজ্যে ভেঙে যায় তৃণমূলের সংগঠন ৷
আরও পড়ুন : Mukul Roy : উপেক্ষার কারণেই পদ্ম-সঙ্গ ত্যাগ, বলছেন মুকুল ঘনিষ্ঠরা
এখন মুকুল রায় আবার তৃণমূলে ৷ গত 11 জুন তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন ৷ তাই প্রশ্ন উঠছে যে তাহলে কি সুদীপ রায় বর্মন মুকুল রায়ের সঙ্গেই তৃণমূলে ফিরবেন ৷ ত্রিপুরায় আবার তৃণমূলের সংগঠন বাড়তে শুরু করবে ৷ বাংলার শাসক দলের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে মুকুল রায়কে আবার ত্রিপুরার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে ৷
যদিও সুদীপ রায় বর্মন এসব নিয়ে চিন্তিত নন ৷ কোন দল ত্রিপুরায় সংগঠন বাড়াবে, কোন দল বাড়াবে না, তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি ৷ তবে তাঁর দল অবশ্য এই পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকতে রাজি নয় ৷ ইতিমধ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা পৌঁছে গিয়েছেন আগরতলায় ৷ দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেছেন ৷ সেই বৈঠকে সুদীপও ছিলেন ৷ তবে তিনি সেখানে কোনও কথা বলেননি বলে বিজেপির একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Mukul Roy : ঘর ওয়াপসির পরই সক্রিয় মুকুল, ফোন একাধিক বিজেপি বিধায়ককে
এই বিষয়টি নিয়েও ধোঁয়াশা বজায় রাখলেন সুদীপ ৷ দলের প্রতি যে তাঁর ক্ষোভ আছে, সেকথা তিনি কার্যত স্বীকার করেছেন ৷ আর বিষয়টি দলের মধ্যেই মিটিয়ে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ৷ কিন্তু এই মুহূর্তে ত্রিপুরায় বিজেপির শক্তি কতটা, এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি ৷ হেঁয়ালি করে বলেছেন, ‘‘ভোটের ফলেই বোঝা যাবে ৷’’
এর অর্থ তো এই হয় যে 2023 সালে ত্রিপুরা বিধানসভার ভোটে বিজেপির জয় নিয়ে তিনি আশাবাদী ৷ ইটিভি ভারতের তরফে এই প্রশ্নও রাখা হয়েছিল সুদীপ রায় বর্মনের কাছে ৷ তাঁর উত্তর, ‘‘এখনই এই নিয়ে কিছু বলব না ৷’’