শান্তিপুর, 20 ফেব্রুয়ারি: জন্ম থেকেই জরায়ু দুই ভাগ (Woman with two-part uterus)৷ দুই জরায়ুতেই বেড়ে উঠেছে যমজ সন্তান ৷ বিরল অস্ত্রোপচারের (Rare Surgery in Nadia Hospital) মাধ্যমে সেই যমজ পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন এক মহিলা ৷ প্রায় অসাধ্য সাধন করেছে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ৷ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে দ্বিতীয়বার এমন বিরল অস্ত্রপচার হল ৷ এখনও পর্যন্ত গোটা পৃথিবীতে এই ধরনের 17টি ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে ৷ এর মধ্যে ভারতে হয়েছে তিনটি ৷ আর পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা এই নিয়ে দ্বিতীয় ।
জন্ম থেকেই দুটি জরায়ু অর্পিতা মণ্ডলের ৷ তাঁর দুই জরায়ুতেই বেড়ে উঠেছে দুই যমজ সন্তানের ভ্রুণ ৷ বিরল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অর্পিতার যমজ সন্তান প্রসব করিয়ে শান্তিপুর হাসপাতালকে অনেকটাই এগিয়ে দিলেন বিশিষ্ট স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পবিত্র ব্যাপারি । জানা গিয়েছে, অর্পিতার বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুরের নৃসিংহপুর এলাকায় । তিনি কলকাতায় রাজারহাটের একটি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন ৷ কিন্তু এত দূর বলে সেখানকার ডাক্তার তাঁকে কল্যাণী হাসপাতালে দেখাতে বলেন ৷ তবে তাঁরা শান্তিপুর হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার পবিত্র ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ।
চিকিৎসক তাঁদের বলেন, তাঁর উপর ভরসা রাখতে পারলে তিনি চেষ্টা করবেন । সেই অনুযায়ী সোমবার দুপুরে ওই মহিলার অস্ত্রোপচার করেন ডা. ব্যাপারি ৷ অর্পিতার দেহে অস্ত্রোপচার করে দুই পুত্র সন্তানের প্রসব করান তিনি । জানা গিয়েছে, একটি বিশেষ মেডিক্যাল টিম গঠন করে তিনি এই অস্ত্রোপচার করেন । ডা. ব্যাপারী জানিয়েছেন, বাচ্চা দুটি এবং মা সবাই সুস্থ আছে । স্বভাবতই বিরল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুটি পুত্রসন্তান উপহার পেয়ে খুশি অর্পিতা এবং তাঁর স্বামী জিতেন্দ্র মণ্ডল । তাঁরা ডাক্তারবাবুর প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: কম খরচে সফল যকৃৎ প্রতিস্থাপন, অনন্য নজির জেলার হাসপাতালের
ডা. পবিত্র ব্যাপারি অবশ্য একা এই কৃতিত্ব নিতে রাজি নন ৷ তিনি বলেছেন হাসপাতালে সুপার-সহ অ্যানাস্থেসিস্ট ও পেডিয়াট্রিক বিভাগের চিকিৎসকেরা সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দিলে কখনওই এই বিরল অস্ত্রোপচার সম্ভব হত না । এই সম্মানন শুধু শান্তিপুর হাসপাতালের নয় ৷ গোটা নদিয়া জেলার তথা এ রাজ্যের চিকিৎসা ক্ষেত্রের সম্মান ।
তবে তিনি জানান, বর্তমান পরিকাঠামোতে এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ৷ এই ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাংক এবং অ্যানাস্থেসিস্টদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ পাশাপাশি পরিকাঠামোরও কিছু উন্নতি দরকার । তবে দলগত প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছা থাকলে এবং মানুষের সহযোগিতা থাকলে মফস্বলের হাসপাতালও যে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারে, আজকের অস্ত্রোপচারই তার উদাহরণ ।
হাসপাতালের সুপার ডা. তারক বর্মন এই ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার সাফল্যের সঙ্গে করার জন্য ডাক্তার পবিত্র ব্যাপারিকে ধন্যবাদ জানান । পাশাপাশি তিনি বলেন, "আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে ভালো পরিষেবা দিয়ে হাসপাতালের সুনাম বৃদ্ধি করতে ।"