শান্তিপুর, 8 জুন: চারিদেকে ভাঙা বেড়া ৷ মাথার ওপরে ছাদ বলতে ছেড়া ত্রিপল ৷ বৃষ্টি আসলেই ভিজে যায় ঘর, দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় ত্রিপল । ঝড় বৃষ্টির সময় বাড়ির ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঠাঁই নিতে হয় চৌকির তলায় । পানীয় জলের কল থাকলেও তাতে পড়ে না জল । সামনেই ঘূর্ণিঝড়ের ভুকুটি ৷ তারই মধ্যে এইভাবেই নদিয়ার শান্তিপুর থানার হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরদারপাড়ায় বসবাস করছে কয়েকটি পরিবার ৷ ফের আরও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচনের দোড়গড়ায় দাঁড়িয়ে তারা ৷ কোনও সরকারি পরিষেবা মেলেনি অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিলেন ওইসব বাসিন্দারা ৷
শতাধিক মানুষের বসবাস ওই গ্রামে । বছরের পর বছর ধরে বসবাস করলেও এখনও পর্যন্ত মেলেনি পঞ্চায়েতের কোনও পরিষেবা ৷ ফলে চুড়ান্ত দুর্ভোগে সেখানকার বাসিন্দারা ৷ অন্যদিকে পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছেন তারা । পঞ্চায়েতের তরফে বাড়ি বাড়ি কলের লাইন বসানো হয়েছে ৷ কিন্তু সেই কল দিয়ে জল পড়ে না । অজ্ঞতা আর্সেনিকযুক্ত জল খেয়েই বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাদের । এলাকাবাসীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান, ভোট ছাড়া পঞ্চায়েত থেকে খোঁজ নিতে আসে না ৷
ওই এলাকার এক দিনমজুর রাম সরদার বলেন, "আমরা কোন কিছুরই সুবিধা পাই না । ঘর এখনও পাইনি । ভোট এলেই তবে পঞ্চায়েত সদস্যদের এলাকায় দেখা যায় । একাধিকবার জানিও কোন লাভ হয়নি । আমরা চাই তাড়াতাড়ি অন্তত সরকারি ঘরটা যেন পাই।" স্থানীয় বাসিন্দা নিমাই সরদার বলেন, "জন্মের পর থেকেই এই ত্রিপলের ঘরে বসবাস করছি । ঝড় বৃষ্টি আসলে আতঙ্কেত হয়ে পড়ি ৷ কিন্তু কিছু করার নেই বাধ্য হয়ে থাকতে হয় । একাধিকবার পঞ্চায়েত সদস্যকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে ৷ তিনি শুধু আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন । অথচ কাজের কাজ কিছুই হয়নি ।"
আরেক বাসিন্দা খুদু সরদার জানান, বৃষ্টি হলেই তাঁর বাড়ির সামনে এক হাঁটু জল জমে যায় । বাড়িতে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায় । এর আগে একাধিকবার ঘরে সাপ ঢুকেছিল । বাড়িতে ছোট বাচ্চা নিয়ে চরম আতঙ্কে থাকেন তাঁরা । কিন্তু তাঁদের কোন ঘর দেওয়া হয়নি । বার্ধক্য ভাতা থেকে শুরু করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কোন কিছুই তাঁরা পাননি । পঞ্চায়েতে তরফ থেকে একজন আসেন দেখে চলে যান ৷ কাজের কাজ কিছুই হয় না। সবকিছু বিক্রি করে কোন রকমে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ করিয়েছিন । তাঁরা চান অবিলম্বে সরকার এবং পঞ্চায়েতের তরফ থেকে পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক ।
আরও পড়ুন: বেহাল রাস্তা সংস্কার না-হলে ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারি গ্রামবাসীদের
বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্যা তনুশ্রী সাহার স্বামী এবং প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য তাপসকুমার সাহা বলেন, "বাম আমলে কোন কাজ হয়নি । তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এবং আমি প্রথম মেম্বার হওয়ার পর ওই এলাকায় একশ শতাংশ উন্নয়ন করেছি ।" সরদার পাড়ার প্রত্যেককেই ঘর পেয়েছে, পাশাপাশি বিধবা ভাতা এবং লক্ষীর ভাণ্ডারও সবাই পেয়েছে বলে দাবি করেন তিনি ।
যদিও পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার বিজেপি নেত্রী শিলা হালদার মণ্ডল । হরিপুর পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে সজনপোষণের অভিযোগ তুলে তিনি দাবি করেন, যারা মূলত তৃণমূল করছেন তারাই ঘর পাচ্ছেন । একবারের জায়গায় দুই থেকে তিনবার একই নামে ঘর আসছে । অথচ যারা নিম্নবিত্ত শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ, যারা ঘর পাওয়ার যোগ্য তারা ঘর পাচ্ছেন না । পঞ্চায়েত এলাকার এক শ্রেণির তৃণমূল নেতারা কাজ না করে রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠছেন । পাশাপাশি তিনি তিনি অভিযোগ করেন, শুধুমাত্র ঘর না প্রতিটি প্রকল্পে ব্যাপক হারে দুর্নীতি করেছে এই তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত ।
আরও পড়ুন: একশো দিনের কাজের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধানের নামে পোস্টার চন্দ্রকোনায়
এ বিষয়ে হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শোভা সরকার বলেন, "ঘর মূলত কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার উভয়ের আর্থিক বরাদ্দ থেকে দেওয়া হয় । কিন্তু কেন্দ্র সরকার থেকে কোন আর্থিক সাহায্য না মেলায় ঘর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । ওই প্রকল্পের টাকা আমাদের হাতে আসলেই আমরা ঘর দেওয়া শুরু করব ।" অন্যদিকে অন্যান্য প্রকল্প নিয়ে তিনি দাবি করেন, সঠিক নথিপত্র যাদের রয়েছে তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়েছে ।