ETV Bharat / state

বাধা পেরিয়ে সাফল্যের চূড়ায় রূপান্তরকামী, গ্ল্যামারের আসরে ভারতসেরা কল্যাণীর সৃজা - সৃজা ঘোষ

Transgender Sreeja Ghosh: সব বাধা পেরিয়ে সাফল্যের চূড়ায় কল্যাণীর রূপান্তরকামী ৷ গ্ল্যামার দুনিয়ায় ভারতের নাম উজ্জ্বল করলেন সৃজা ঘোষ ৷ যাঁর নাম আগে ছিল রঞ্জন ৷

Transgender Sreeja Ghosh
গ্ল্যামার দুনিয়ায় ভারতসেরা কল্যাণীর সৃজা
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 11, 2024, 6:09 PM IST

গ্ল্যামার দুনিয়ায় ভারতসেরা কল্যাণীর সৃজা

কল্যাণী, 11 জানুয়ারি: জন্মগত ভাবে পুরুষ ৷ কিন্তু মননে নারী ৷ সেই কারণেই কল্যাণীর গ্রামের ছাপোসা সন্তানের রঞ্জন থেকে সৃজা হয়ে ওঠার সফরটা সহজ হয়নি ৷ ঘরে-বাইরে নানা গঞ্জনার মুখে পড়তে হয়েছে ৷ তবে লক্ষ্যে অটুট ছিলেন আজকের সৃজা ৷ আর তাঁর দৃঢ়চেতা মনোভাব দেখে রূপান্তরকামী সন্তানকে মেনে নিয়েছিল পরিবার ৷ সৃজাকে তারা এগিয়ে দিয়েছিল স্বাভাবিক জীবনের পথে ৷ আজ সেই সন্তানই গ্ল্যামার দুনিয়ায় দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে ৷ আন্তর্জাতিক ফ্য়াশন শোতে ভারত সেরার মুকুট উঠেছে সৃজার মাথায় ৷

নদিয়ার কল্যাণী 3 নং ওয়ার্ডের কাঁঠালতলার বাসিন্দা ছিলেন রঞ্জন ঘোষ । বাবা-মায়ের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তান ৷ রয়েছে এক দাদা ও দিদি ৷ অভাবের সংসারে কোনওরকমে শুরু করেছিলেন পড়াশোনা । মাধ্যমিকে দুইবার অসফল হওয়ার পর তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন । মা ছোট ছেলের নাম রেখেছিলেন রঞ্জন ৷ তবে সে যত বড় হতে থাকে, ততই তাঁর মধ্যে প্রকট হয় নারীসুলভ মনোভাব ৷ পরিবারকে প্রথম দিকে কিছু জানাননি ৷

প্রথমে তিনি একটি দোকানে কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন । পরবর্তীকালে রূপান্তরকামী হয়ে নিজের নাম বদলে দেন ৷ রঞ্জনই হয়ে ওঠেন সৃজা ৷ প্রথমে কলকাতা আলপিন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি পরিচালিত একটি ফ্যাশন শোতে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । সেখানে মদন মিত্র, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গ্ল্যামার দুনিয়ার পরিচিত মানুষজনের কাছ থেকে দারুণ উৎসাহ পান তিনি । সেই শুরু ৷ আর ফিরে তাকাননি ৷ সমাজের যাবতীয় ট্যাবুকে পেছনে ফেলে সৃজা নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেন ৷

দিনকয়েক আগে কানপুরে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণ করে ভারতসেরা হয়েছেন । একজন রূপান্তরকামী হয়েও দেশকে সবার শীর্ষে তুলে ধরতে পেরে তিনি আপ্লুত ৷ সৃজা জানাচ্ছেন, সমাজে তাঁর মতো রূপান্তরকামীরা যেন হেরে না যান । লড়াই করে সমাজে নিজেকে নিজের পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে পারাটাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত ৷

সৃজা বলেন, "এই সাফল্যের পিছনে অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে । একদিকে যেমন পরিবারের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, অন্যদিকে সমাজের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে । আমি রূপান্তরকামী এ কথা বলায় অনেকে হাসি বিদ্রুপ করেছে, তা মেনে নিতে হয়েছে । কখনও কখনও মনে হয়েছে সমাজ আমাদের ভালোভাবে নিচ্ছে না । তবুও মনের জোর ছিল ৷ সমাজের বাধা-বিপত্তি পার করে আমি এই সাফল্য অর্জন করেছি ।" সমাজে যাঁর তাঁর মতো আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন সৃজা ৷

তাঁর এই সাফল্যে খুশি সৃজার পরিবার ও প্রতিবেশীরাও ৷ সৃজার মা সুমনা ঘোষ বললেন, "প্রাথমিকভাবে ও সবকিছু আমাদেরকে না জানালেও পরবর্তীকালে আমরা তার যে ভাবনা সেটা বুঝতে পারি ৷ কিছু বাধার মুখে পড়তে হয়েছে ৷ তবে পরে আমরা ওর পাশে থেকেছি, সাহায্য করেছি ।"

সৃজা আরও একটা দৃষ্টান্ত ৷ তিনি আবারও প্রমাণ করলেন যে রূপান্তরকামীরাও সমাজেরই একটা অংশ ৷ দেশ ও সমাজের ভালো-মন্দের অংশীদার ৷ তাঁরাও আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো দেশকে গর্বিত করেন ৷ নিজের পরিবার ও সমাজকেও গর্বিত করেন ৷ ঠিক যেমনটা করেছিলেন স্মরণ্যা ঘোষ ৷ উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন এই রূপান্তরকামী ৷

আরও পড়ুন:

  1. কটাক্ষের জবাবে সাফল্যের সোপান গড়ে উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম রূপান্তরকামী স্মরণ্যা
  2. হাইকোর্টে মামলা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্মে তৃতীয় লিঙ্গের পৃথক স্থান
  3. উত্তরপ্রদেশের মন্দিরে বিয়ে বাংলার দুই সমকামী যুবতীর

গ্ল্যামার দুনিয়ায় ভারতসেরা কল্যাণীর সৃজা

কল্যাণী, 11 জানুয়ারি: জন্মগত ভাবে পুরুষ ৷ কিন্তু মননে নারী ৷ সেই কারণেই কল্যাণীর গ্রামের ছাপোসা সন্তানের রঞ্জন থেকে সৃজা হয়ে ওঠার সফরটা সহজ হয়নি ৷ ঘরে-বাইরে নানা গঞ্জনার মুখে পড়তে হয়েছে ৷ তবে লক্ষ্যে অটুট ছিলেন আজকের সৃজা ৷ আর তাঁর দৃঢ়চেতা মনোভাব দেখে রূপান্তরকামী সন্তানকে মেনে নিয়েছিল পরিবার ৷ সৃজাকে তারা এগিয়ে দিয়েছিল স্বাভাবিক জীবনের পথে ৷ আজ সেই সন্তানই গ্ল্যামার দুনিয়ায় দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে ৷ আন্তর্জাতিক ফ্য়াশন শোতে ভারত সেরার মুকুট উঠেছে সৃজার মাথায় ৷

নদিয়ার কল্যাণী 3 নং ওয়ার্ডের কাঁঠালতলার বাসিন্দা ছিলেন রঞ্জন ঘোষ । বাবা-মায়ের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তান ৷ রয়েছে এক দাদা ও দিদি ৷ অভাবের সংসারে কোনওরকমে শুরু করেছিলেন পড়াশোনা । মাধ্যমিকে দুইবার অসফল হওয়ার পর তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন । মা ছোট ছেলের নাম রেখেছিলেন রঞ্জন ৷ তবে সে যত বড় হতে থাকে, ততই তাঁর মধ্যে প্রকট হয় নারীসুলভ মনোভাব ৷ পরিবারকে প্রথম দিকে কিছু জানাননি ৷

প্রথমে তিনি একটি দোকানে কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন । পরবর্তীকালে রূপান্তরকামী হয়ে নিজের নাম বদলে দেন ৷ রঞ্জনই হয়ে ওঠেন সৃজা ৷ প্রথমে কলকাতা আলপিন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি পরিচালিত একটি ফ্যাশন শোতে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । সেখানে মদন মিত্র, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গ্ল্যামার দুনিয়ার পরিচিত মানুষজনের কাছ থেকে দারুণ উৎসাহ পান তিনি । সেই শুরু ৷ আর ফিরে তাকাননি ৷ সমাজের যাবতীয় ট্যাবুকে পেছনে ফেলে সৃজা নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেন ৷

দিনকয়েক আগে কানপুরে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণ করে ভারতসেরা হয়েছেন । একজন রূপান্তরকামী হয়েও দেশকে সবার শীর্ষে তুলে ধরতে পেরে তিনি আপ্লুত ৷ সৃজা জানাচ্ছেন, সমাজে তাঁর মতো রূপান্তরকামীরা যেন হেরে না যান । লড়াই করে সমাজে নিজেকে নিজের পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে পারাটাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত ৷

সৃজা বলেন, "এই সাফল্যের পিছনে অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে । একদিকে যেমন পরিবারের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, অন্যদিকে সমাজের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে । আমি রূপান্তরকামী এ কথা বলায় অনেকে হাসি বিদ্রুপ করেছে, তা মেনে নিতে হয়েছে । কখনও কখনও মনে হয়েছে সমাজ আমাদের ভালোভাবে নিচ্ছে না । তবুও মনের জোর ছিল ৷ সমাজের বাধা-বিপত্তি পার করে আমি এই সাফল্য অর্জন করেছি ।" সমাজে যাঁর তাঁর মতো আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন সৃজা ৷

তাঁর এই সাফল্যে খুশি সৃজার পরিবার ও প্রতিবেশীরাও ৷ সৃজার মা সুমনা ঘোষ বললেন, "প্রাথমিকভাবে ও সবকিছু আমাদেরকে না জানালেও পরবর্তীকালে আমরা তার যে ভাবনা সেটা বুঝতে পারি ৷ কিছু বাধার মুখে পড়তে হয়েছে ৷ তবে পরে আমরা ওর পাশে থেকেছি, সাহায্য করেছি ।"

সৃজা আরও একটা দৃষ্টান্ত ৷ তিনি আবারও প্রমাণ করলেন যে রূপান্তরকামীরাও সমাজেরই একটা অংশ ৷ দেশ ও সমাজের ভালো-মন্দের অংশীদার ৷ তাঁরাও আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো দেশকে গর্বিত করেন ৷ নিজের পরিবার ও সমাজকেও গর্বিত করেন ৷ ঠিক যেমনটা করেছিলেন স্মরণ্যা ঘোষ ৷ উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন এই রূপান্তরকামী ৷

আরও পড়ুন:

  1. কটাক্ষের জবাবে সাফল্যের সোপান গড়ে উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম রূপান্তরকামী স্মরণ্যা
  2. হাইকোর্টে মামলা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্মে তৃতীয় লিঙ্গের পৃথক স্থান
  3. উত্তরপ্রদেশের মন্দিরে বিয়ে বাংলার দুই সমকামী যুবতীর
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.