শান্তিপুর, 6 জানুয়ারি: বাঙালি তথা ভারতীয় মহিলাদের অন্যতম প্রিয় পরিধানের নাম শাড়ি ৷ আর শাড়ির নামে বাংলার নাম মনে পড়বে না, তা আবার হয় নাকি? রাজ্যের বিভিন্ন রকমের শাড়ির মধ্যে নদিয়ার টাঙ্গাইল শাড়ি সম্প্রতি জিআই ট্যাগ পেয়েছে ৷ স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ নদিয়ার বহু তাঁত শিল্পী এই টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৷
দীর্ঘ 40 বছর ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রবীণ তাঁত শিল্পী শিবনাথ বসাক ৷ সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার খবরে তিনি খুশি ৷ শিল্পী বলেন, "আমি প্রায়ই চল্লিশ বছর ধরে শাড়ি বুনছি ৷ বেশ কয়েক প্রজন্ম এই তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৷ আমাদের একটা লড়াই ছিল, টাঙ্গাইল শাড়ি সরকারি স্বীকৃতি পাক ৷ শেষে এই সরকারি স্বীকৃতি পেয়ে আমরা এবং যাঁরা টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তাঁরা সকলেই আনন্দিত ৷" বর্ষীয়ান এই শিল্পী আশাবাদী, জিআই ট্যাগ পাওয়ার পর টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার কাজে অনেকটাই উৎসাহ বাড়বে তাঁত শিল্পীদের ৷
বিভিন্ন সময়ে উপার্জন কমে যাওয়ায় এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নতুন প্রজন্ম ৷ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বাংলায় টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হলেও কোনও সরকারি স্বীকৃতি মিলছিল না ৷ তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী, মহাজন ও ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন এই স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াই চালিয়েছে ৷ বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি ছাড়াও কালুনুনিয়া চাল, করিয়াল শাড়ি, মধু এবং গরদের শাড়িকেও সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
প্রবীণ পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত শিল্পী বীরেন বসাক জানালেন, এই টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল নামক জায়গায় তৈরি হত । সেই থেকে এর নাম টাঙ্গাইল শাড়ি ৷ পরে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল এলাকার বহু তাঁতি পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন ৷ তাঁত বুনতে শুরু করেন ৷ সেই তাঁতিদের কাছ থেকে এই টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গে ৷ জিআই স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে খুবই খুশি তাঁত শিল্পী বীরেন বসাক। তিনি বলেন, "এটা আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াই ৷ সরকারি তরফে এই স্বীকৃতি মেলায় যথেষ্ট খুশি আমরা ৷"
আরেক তাঁত শিল্পী আনন্দ ঘোষ প্রতিদিন প্রায় দেড়শো কিলোমিটার যাতায়াত করে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করতে যান ৷ তিনিও প্রায় 10 বছর ধরে টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "একটি শাড়ি বুনতে প্রায় 7-8 দিন সময় লেগে যায় ৷ যার দরুন আমাদের 2 হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক আয় হয় ৷ গড়ে প্রতিদিন 250-300 টাকা আয় হয় ৷ খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে সংসার চালাতে হয় আমাদের ৷ তবে এই সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ায় যদি শাড়ির দাম আরও বাড়ে, তাহলে আমাদের ভালো হয় ৷"
তবে শিল্পী বীরেন বসাক বলেন, "আমরা বাংলায় যে সব টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করি, সেগুলি সম্পূর্ণ সুতি দিয়েই তৈরি হয় ৷ তাই শাড়ি তৈরিতে যে খরচ অনেকটাই বেড়ে যায় ৷ কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন রাজ্য থেকে মেশিনে তৈরি যে সব শাড়ি বাংলায় আসছে, তার গুণগত মান যেমন কম, তেমনই দামও বেশ কম ৷ এদিকে বাংলার তৈরি টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা অনেকটা কমেছে বাজারে ৷ এই বিষয়টা সরকারকে নজর রাখতে হবে ৷ বাইরের যে সব শাড়ি এ রাজ্যে আসছে, তা আটকানো যায় কিনা, সেই ব্যবস্থা করতে হবে ৷"
আরও পড়ুন: