কৃষ্ণনগর, 7 অগাস্ট : 'এক টাকার পাঠশালা ' ৷ অবাক হলেন ? নদিয়ার কৃষ্ণনগর থানার দোগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষীরপুলি গ্রামে এই অভিনব পাঠশালার মাসিক ফি মাত্র 1 টাকা ৷ উদ্যোক্তা 'ভ্রমর' নামক এক সংস্থা ৷ আমগাছের নিচে সাপ্তাহিক এই পাঠশালায় পড়াশোনার পাশাপাশি শেখানো হয় গান, নাচ, আঁকা, ক্যারাটে, যোগ, ব্রতচারী ৷ রয়েছে মিড-ডে-মিলের ব্যবস্থাও ৷
নদিয়ার ক্ষীরপুলি গ্রামটি মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত ৷ যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব একটা উন্নত নয় ৷ প্রত্যন্ত এই গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়েই খোলা আকাশের নিচে পাঠশালা তৈরি করেছে 'ভ্রমর'৷ উদ্যোক্তারা প্রথমে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন ৷ অভিভাবকরাও রাজি হন ৷ সপ্তাহের রবিবার চলে পাঠশালার পঠন-পাঠন ৷ সকাল 11টা থেকে 3টে পর্যন্ত ৷ কিন্তু রবিবার কেন ? প্রশ্নের উত্তরে উদ্যোক্তাদের একজন সুদীপ সরকার জানান, ছাত্র-ছাত্রীর সপ্তাহের অন্য দিন স্কুল থাকে ৷ আর যাঁরা পড়ান তাঁরা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অথবা কলেজ স্টুডেন্ট ৷ তাই তাঁদেরও নিজের নিজের কাজ থাকে ৷ তাই রবিবারই ক্লাস করানো হয় ৷
প্রথমে মাত্র 22 জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে পথচলা শুরু করেছিল ভ্রমর ৷ তারপর যত দিন গড়িয়েছে, বেড়েছে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৷ মূলত চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের । A, B, C ও D ৷ যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল তাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয় ৷ পড়াশোনার পাশাপাশি চলে নাচ, গান, ছবি আঁকা, যোগ ও ক্যারাটে প্রশিক্ষণ ।
কিন্তু পাঠশালার মাসিক ফি 1 টাকা কেন ? সংস্থার বক্তব্য, ছাত্ররা যাতে এটা না ভাবে যে তাদের দয়া করা হচ্ছে । ন্যূনতম খরচে যাতে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্যই এই ব্যবস্থা ৷ সুদীপবাবু বলেন, "1 টাকা অর্থাৎ 16 আনা ৷ আমরা যদি ষোলোআনা চেষ্টা করি তবে ওদের কাছ থেকেও আমরা ষোলোআনা ভালোবাসা পাব ৷ অর্থাৎ মাইনাস করে দেখলে নিট ফল হল শূন্য ৷ মানে নিরাকার ভালোবাসা ৷ যার সন্ধান আমরা সব সময় করছি ৷ " জন-প্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পেয়েছেন? উত্তরে সুদীপবাবু জানান, তাঁরা কখনও কোনও জন-প্রতিনিধিদের কাছে যাননি ৷ নিজেদের সামর্থ্য মতো যতটা পারেন, করেন ৷
পড়াশোনা শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য থাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ৷ রবিবার তাই মেনুও স্পেশাল ৷ ভাত, ডাল, মাংস এবং আলুর চিপস । উদ্যোক্তাদের মতে মিড-ডে-মিলের মতো এই ব্যবস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের আরও উৎসাহ বাড়িয়েছে ।
পাঠশালা সম্পর্কে মঞ্জু বিশ্বাস নামের এক অভিভাবক জানান, কাজের চাপে বাড়িতে পড়াশোনা শেখাতে পারেন না তাঁরা ৷ কিন্তু ছুটির দিনে এই পাঠশালা সেই দায়িত্ব নিয়েছে । বাচ্চারাও স্কুলে আসার উৎসাহ দেখায় ৷