ভীমপুর, 15 অগাস্ট : নদিয়ার পোড়াগাছা । কৃষ্ণনগর থেকে মিনিট তিরিশের রাস্তা । বিংশ শতকের শুরুতে এই গ্রাম ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের অন্যতম আখড়া । এখানে থাকতেন রাসবিহারী বসু ও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের ভাবশিষ্য বসন্তকুমার বিশ্বাস । দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন । কিন্তু, সেভাবে স্বীকৃতি পাননি । মৃত্যুর পর অবহেলায় পড়ে রয়েছে তাঁর জন্মভিটে ।
আজ দেশের 74 তম স্বাধীনতা দিবস । দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিনটি পালিত হল । কিন্তু বসন্তকুমার বিশ্বাসকে ক'জন মনে রাখল ?
বিপ্লবী বসন্তকুমার বিশ্বাস । 1895 সালের 6 ফেব্রুয়ারি নদিয়ার ভীমপুর থানার পোড়াগাছা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ছাত্রজীবন থেকেই দেশাত্মবোধ তাড়া করে বেড়াত তাঁকে । এরপর রাসবিহারী বসু ও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বসুর সংস্পর্শে আসেন তিনি । বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সামনে থেকে লড়েছিলেন । 1912 সালের 23 ফেব্রুয়ারি বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর হামলা । গ্রেপ্তার হন । বিচারে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় । 1915 সালের 11 মে আম্বালা জেলে ফাঁসি হয় তাঁর । মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন বসন্ত ।
তাঁর মৃত্যুর পর আজ কেটে গেছে একশো বছরেরও বেশি সময় । দেখতে দেখতে আজ স্বাধীনতার 74 বছর পার করলাম আমরা । কিন্তু, কেউ মনে রাখেনি বসন্তকুমার বিশ্বাসকে । জন্মভিটার কোনও সংস্কারও হয়নি । বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ ৷ অবহেলা কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁর শেষ স্মৃতিটুকুকে । স্মৃতিসৌধ একটি রয়েছে বটে । কিন্তু, সেটিকেও গ্রাস করে নিয়েছে জঙ্গল-আগাছা । অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে চাপা পড়েছে বীর বসন্তকুমার বিশ্বাসের স্মৃতি ।
বসন্ত কুমার বিশ্বাসের ভাইপোর মনোজিৎ বিশ্বাস এখন এই বাড়িতেই থাকেন । তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "বর্তমানে পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই বাড়িতে । নেই বাড়িতে আসার কোনও রাস্তা । সরকার কিংবা প্রশাসনের তরফে কখনও সেভাবে কেউ খোঁজ নিতে আসেন না ।"
প্রতিবেশী প্রদীপ প্রামাণিক বলেন, "ছোটো থেকেই শুনে এসেছি তিনি দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন । স্বাধীনতা সংগ্রামী হলেও সেই ভাবে তাঁকে কখনও শহিদ হিসেবে সম্মান পেতে দেখিনি । অবহেলায় পড়ে রয়েছে তাঁর বাড়ির এলাকা । শুধু তাই নয়, তাঁর জন্মস্থানটুকুও আজ ধবংসের পথে ।"
বিল্পবীর শেষ স্মৃতিটুকু বাঁচিয়ে রাখার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন ?
রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, "বাড়ির বেশিরভাগ সদস্য এখন কর্মসূত্রে অন্য জায়গায় থাকেন । সেই কারণেই সেখানে আর বেশি যাওয়া হয় না । কিন্তু আমি নিজে রাজনীতি করার কারণে সবসময় চেষ্টা করি তার শেষ স্মৃতিটুকু বাঁচিয়ে রাখার । বসন্তকুমার বিশ্বাসের স্মৃতিসৌধটা আরও ভালোভাবে তৈরি করার চেষ্টা করব ।"