শান্তিপুর, 26 অগাস্ট : নদিয়া জেলার শান্তিপুর ৷ এই জায়গার নাম শুনলেই মনে পরে একটাই কথা ৷ তাঁত শিল্প ৷ শান্তিপুরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই শিল্পের নাম ৷ বছরের পর বছর, এই শিল্পের ওপর নির্ভর করেই সংসার চালাচ্ছেন তাঁতিরা ৷ এমনকি, অনেক পরিবার আবার বংশ পরম্পরায় যুক্ত রয়েছেন তাঁত শিল্পের সঙ্গে ৷ কিন্তু, কোরোনা আবহে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে তাঁত ৷ সংক্রমণ রুখতে দেশে প্রায় 4 মাসের বেশি সময় ধরে লকডাউন চলতে থাকে ৷ বর্তমানে আনলক পর্ব শুরু হলেও তার প্রভাব পড়েনি তাঁত শিল্পে ৷ তাই বন্ধ হয়েছে রোজগারও ৷ যার জেরে আর্থিক অনটনে দিন কাটছে তাঁতিদের ৷
শান্তিপুরের প্রায় 30 হাজারের বেশি মানুষ এই তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৷ প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে তাঁদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে ৷ দুর্গাপুজোর পরেই শুরু বিয়ের মরশুম ৷ এই সময়টাতে অর্ডার আসে প্রচুর ৷ সঠিক সময়ে যাতে অর্ডার পৌঁছানো যায় সে লক্ষ্যেই কাজ করে যান শিল্পীরা ৷ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা তো বটেই, ভিন রাজ্যেও পাড়ি দেয় শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ি ৷ কিন্তু, এবারে ছবিটা একেবারেই ভিন্ন ৷ কোরোনা সংক্রমণের জেরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ দোকান ৷ যে কয়েকটা দোকান খোলা রয়েছে তাতে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজনের দেখা মিলছে ৷ বিক্রি বাট্টা প্রায় বন্ধ ৷
বিক্রি বাট্টা বন্ধ থাকায় শাড়ি নিতে চাইছেন না মহাজনেরা ৷ যে দু-এক জন মহাজন শাড়ি নিতে চাইছেন তাতেও নায্য দাম মিলছে না ৷ এমনই দাবি তাঁতিদের ৷ তাঁত শিল্পী স্বপন বসাক বলেন, "আমার একার রোজগারে সংসার চলে ৷ দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে ৷ মহাজন শাড়ি নিচ্ছে না ৷ এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে কী ভাবে বাঁচবো আমরা ৷ " পাড়ার অপর এক তাঁতি বলেন, "সপ্তাহে দু থেকে তিনটে তাঁত বুনতাম ৷ তা থেকে যা টাকা আসত তা দিয়েই চলত সংসার ৷ কিন্তু এখন সব বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ৷ টাকা ধার করে চলছে সংসার ৷ কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে, তা জানা নেই ৷" তাঁত শিল্পী সন্দীপ বসাক বলেন, "লকডাউনের জেরে আমাদের কাজ একেবারেই বন্ধ ৷ প্রায় 6 মাস ধরে বন্ধ রয়েছে রোজগার ৷ তাঁতের ওপর নির্ভর করেই সংসার চলে ৷ এছাড়া আমাদের আর রোজগারের কোনও রাস্তা নেই ৷ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি ৷ "
এভাবে চলতে থাকলে বেশি দিন বাঁচানো যাবে না এই তাঁত শিল্পকে ৷ বন্ধ হয়ে যেতে পারে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প ৷ এখন তাই সরকারি সাহায্যের আর্জি করছেন তাঁতিরা ৷ সরকারি সাহায্য পেলে যদি বাঁচানো যায় এই শিল্পকে ! সে-দিকেই তাঁকিয়ে তাঁতিরা ৷