শান্তিপুর, 2 মার্চ: জীবিত বা মৃত, তৃণমূল নেতার এক হুমকিতেই বাড়িতে বসেই পাওয়া যায় ডেথ সার্টিফিকেট ! তাও আবার 100 থেকে 200 টাকা দিলেই । অভিযুক্ত চিকিৎসক খোদ জানালেন সেই কথা ৷ শান্তিপুরে 14 বছর বয়সি নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুর এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে (Mysterious death of Minor Girl) উঠে এল এই তথ্য ৷ গত 25 তারিখ শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ শান্তিপুর ব্লকের হরিপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নৃসিংহপুর উত্তর কলোনি এলাকার এক নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ।
পরিবার তাকে নিয়ে যায় শান্তিপুর হাসপাতালে ৷ সেখানেও চরম উদাসীনতা দেখায় চিকিৎসকরা বলে অভিযোগ ওঠে । চিকিৎসকেরা নাবালিকাকে মৃত বলে ঘোষণা করলেও পুলিশকে কোনওরকম তথ্য না দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে । পরিবার ওই নাবালিকাকে নিয়ে যায় বাড়িতে ৷ এরপর নৃসিংহপুর কালনা ঘাটের ঠিক পাশে একটি শ্মশানে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দাহ করা হয় ওই নাবালিকার দেহ ।
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের তরফ থেকে যাকে শ্মশান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না ৷ কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে ওই নাবালিকার দেহ দাহ করা হয় । ঘটনা জানাজানি হতেই চাপে পড়ে যায় পরিবার ৷ এরপর নৃসিংহপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছ থেকে তারা ডেথ সার্টিফিকেট নেয় মেয়ের । তবে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন দিক থেকে ।
ওই নাবালিকার দেহ কেন পাঠানো হল না ময়নাতদন্তে? যা নিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠছে শান্তিপুর হাসপাতালে বিরুদ্ধেও । এছাড়াও বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বও প্রশ্ন তুলছেন । 14 বছর বয়সি নাবালিকার কীভাবে মৃত্যু হল ? বিষয়টি খতিয়ে না দেখে কীভাবে একজন চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেট দিতে পারে ? ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের করা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল । যে কেউ এইভাবে ডেথ সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে বলে তাদের অভিযোগ ।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক বাসুদেব বণিক জানান, ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল মজুমদার তাঁকে ফোন করেছিলেন ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য ৷ তিনি তাঁর বিশ্বাসের উপরেই দিয়েছেন ডেথ সার্টিফিকেট । তবে শুধু এই প্রথম নয়, এরকম কয়েকশোবার তৃণমূল নেতারা ফোন করলেই তিনি সার্টিফিকেট দিয়ে দেন । তার জন্য কোন বৈধ কাগজপত্র লাগে না । আর তিনি যদি নেতাদের কথা না-শোনেন তাহলে তাঁর ডাক্তারি বন্ধ হয়ে যাবে । তৃণমূল নেতাদের চাপে পড়েই তিনি দিয়ে থাকেন এইভাবে ডেথ সার্টিফিকেট বলে জানান । তবে আশ্চর্যজনক বিষয় ওই চিকিৎসক আজ পর্যন্ত কোনদিন চিকিৎসার জন্য রোগী দেখেননি, তার কাজই খুব অল্প টাকা নিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া বলে জানা গিয়েছে ।
এই ঘটনায় পঞ্চায়েত প্রধান শোভা সরকার বলেন, "আমার জানা নেই বিষয়টি ৷ আমি তদন্ত করে দেখছি ৷ প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।" কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তাঁর পঞ্চায়েত এলাকায় ঘটে গেল একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ৷ কিন্তু তিনি কিছুই জানেন না । এ বিষয়ে শান্তিপুরের বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামীকে বলেন, "পুরো বিষয়টি আমার অজানা । তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি । প্রয়োজনে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব ।"
আরও পড়ুন: অস্বাভাবিক মৃত্যু নাবালিকার ! পঞ্চায়েত সদস্যের মদতে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই তড়িঘড়ি দাহ করল পরিবার