রানাঘাট, 17 ডিসেম্বর: আবারও অভিষেকের গলায় মমতার সুর ! শনিবার নদিয়ার (Nadia) রানাঘাটে (Ranaghat) জনসভা করেন রাজ্যের শাসকদলের 'সেকেন্ড ইন কম্য়ান্ড' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee) ৷ সেই কর্মসূচির মঞ্চ থেকে সিএএর (CAA) বিরোধিতায় সরব হন তিনি ৷ অভিষেক বলেন, "2019 সালে একটা আইন পাশ করেছিল ৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই আইন কার্যকর করতে পারল না ৷ আগে কখনও এমন হয়নি ৷ তাহলে এবার কেন এত সময় লাগছে ? আসলে সিএএর নাম করে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ সিএএর কথা বলে রানাঘাট, বনগাঁর মানুষকে অপমান করা হচ্ছে ৷ আপনাদের ভোটেই তো পঞ্চায়েত, জেল পরিষদ, রাজ্য সরকার গঠিত হয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন ৷ আপানারা যদি অবৈধ হন, তাহলে প্রধানমন্ত্রীও অবৈধ !"
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই নদিয়াতেই সভা করে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ শনিবার অভিষেকের সভা হয় রানাঘাটের মিলন মন্দির ময়দানে ৷ আর মমতার সভা হয়েছিল কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে ৷ সেই সভায় মমতা প্রশ্ন তুলেছিলেন, নাগরিকত্ব না থাকলে মতুয়ারা ভোট দিচ্ছেন কীভাবে ? তাঁরা যদি ভারতের নাগরিক না হন, তাহলে তিনিও তো মুখ্যমন্ত্রী নন ! একই কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনও তাহলে বেআইনি ! এদিন সেই একই সুর শোনা গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের গলায় ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতে লড়বেন কে, ঠিক করবে জনতা ! রানাঘাটে বললেন অভিষেক
সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে সভা করেন অভিষেক ৷ সেই সভা শুরু হওয়ার আগের মুহূর্ত থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত অভিষেকের মধ্যে যেন বড্ড বেশি মমতার ছায়া দেখা গিয়েছিল ৷ মমতা যেভাবে জনসংযোগ করেন, যেভাবে তিনি সভামঞ্চেই জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের কাছ থেকে কাজের খতিয়ান চান, একেবারেই সেই ধাঁচেই আচরণ করছিলেন অভিষেক ৷ এদিনের সভামঞ্চেও কাঁথির সেই সভার প্রতিফলন চোখে পড়ল ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় জননেত্রী ৷ তাঁর এই পরিচয় নিয়ে অতিবড় সমালোচকও প্রশ্ন তুলতে পারবেন না ৷ এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও যেন ভীষণভাবে জননেতা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন ৷ কাঁথির সভা থেকে রানাঘাটের সভা, ধরা পড়ল সেই একই ছবি ৷
প্রসঙ্গত, এদিন যেখানে অভিষেক সভা করেন, সেখানে মতুয়া ভোট একটা বড় ফ্য়াক্টর ৷ তাই অনেকেরই মনে হয়েছিল, এদিনের সভা থেকে সিএএ ও এনআরসি নিয়ে হয়তো অনেক কথা বলবেন অভিষেক ৷ অভিষেক বললেন, তবে, অনেক বললেন, তা বলা যায় না ৷ বরং তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিলেন দলের শুদ্ধিকরণে ! দলীয় নেতা, কর্মীদের বুঝিয়ে দিলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কোমর বেঁধে মাঠে নামতে হবে ৷ এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ তথা ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির প্রতিনিধি মমতাবালা ঠাকুর ৷ এছাড়াও, এদিনের সভায় মতুয়া মহাসংঘের অন্য়ান্য প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন ৷
এদিনের সভামঞ্চ থেকে অসমের প্রসঙ্গ টানেন অভিষেক ৷ জনতার উদ্দেশে বলেন, "অসমে 19 লক্ষ মানুষকে ডিটেনশন ক্য়াম্পে আটকে রাখা হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে 12 লক্ষ হিন্দু বাঙালি ৷ একইভাবে ওরা (বিজেপি) আপনাদেরও প্রতারিত করার চেষ্টা করছে ৷ আপনাদের বাবা, দাদুরা 70-75 বছর ধরে সসম্মানে এলাকায় বসবাস করছেন ৷ আজ তাঁদের প্রমাণ করতে হবে, তাঁরা ভারতের বাসিন্দা !" অভিষেকের বার্তা, সিএএ স্রেফ বিজেপিশিবিরের ভাঁওতাবাজি ৷ তাই মানুষ যাতে কোনও ভাঁওতায় না পড়েন, সেই বিষয়ে সতর্ক করেন অভিষেক ৷ তবে, তাৎপর্যপূর্ণভাবে সিএএ বা মতুয়াদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে অভিষেক যতটা সরব হবেন বলে মনে করা হচ্ছিল, তেমনটা কিন্তু তিনি করেননি ৷ বরং, ভাষণের একেবারে শেষবেলায় এই বিষয়গুলি শুধুমাত্র ছুঁয়ে গিয়েছেন বলা যায় !