মায়াপুর, 13 মে: 'জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর ৷' জীবের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় ৷ জীবের সেবাই ঈশ্বরের সেবা ৷ একদিকে রাস্তা থেকে বাড়িতে কুকুর বিড়ালের উপর অত্যাচারের ছবি যখন সামনে আসছে ৷ তখন এই বাণীকে পাথেয় করেই জীবের প্রতি প্রেমের এক অপরূপ নির্দশন ধরা পড়েছে নদিয়ায় ৷ যেখানে একটি মন্দিরে সাধু-সন্ন্যাসীদের সঙ্গে বাস 25টি কুকুরের ৷ ভাবছেন কোথায় সেই মন্দির ?
মায়াপুরের গঙ্গা তীরবর্তী সংলগ্ন এলাকার শ্রী শ্রী রাধা শ্যামসুন্দর জীউর মন্দিরে গেলেই আপনি দেখতে পারবেন এই দৃশ্য । সেখানে কখনও চেয়ারে ঘুমন্ত অবস্থায়, কখনও মন্দির চত্বরে খেলে বেরাচ্ছে এই সব কুকুরের ছানাগুলি ৷ মায়াপুর ইসকন চন্দ্রোদয় মন্দিরে সারা বছরই ভক্তদের আনাগোনা লেগে থাকে । তবে মায়াপুরে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় মন্দির । সেই সমস্ত মন্দিরগুলিতেও কমবেশি ভক্তদের ভিড় লক্ষ করা যায় । তবে শ্যামসুন্দর জীউর মন্দিরে ভক্তদের তুলনায় প্রভুভক্ত কুকুরেরই ভিড় থাকে বেশি । আর তারাই সেখানকার রাজা ৷ মানে রাজার হালে থাকে আর কী ! বাইরের নতুন কাউকে দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে ছুটে আসে পাহারাদার 25টি সারমেয় ৷ তবে তাদের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই ৷ তারা থাকে আপন খেয়ালে ৷ মন্দির চত্বরেই তাদের অবাধ আনাগোনা ৷
ওই মন্দিরের সেবাইত স্বামী তৎপর মহারাজ বলেন, "অনেক সময় দেখা যায় কুকুরকে রাস্তায় মারধর করা হয় ৷ কিংবা বিভিন্নভাবে তাদেরকে উত্তপ্ত করা হয় । কিন্তু কুকুর অত্যন্ত প্রভুভক্ত একটি প্রাণী । সেই কারণেই বেশ কিছু অসহায় কুকুরেরা এই মন্দিরে আশ্রয় নেয় । এরপরেই বিভিন্ন জায়গা থেকে কুকুরেরা এসে এই মন্দিরে থাকতে শুরু করে । বিশেষত লকডাউনের সময় স্থানীয় বেশকিছু কুকুরদের খাদ্যের অভাব হয়েছিল । সেই থেকেই এই কুকুরেরা এই মন্দিরে আশ্রয় নেয় এবং তাদের সমস্ত রকম চিকিৎসা থেকে শুরু করে খাবারের ব্যবস্থা করা হয় এই মন্দির থেকে ।"
এছাড়াও তিনি জানান, এই সমস্ত কুকুরগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং তাদের সেবাসুশ্রূষা করার জন্য বেশ কিছু অর্থের প্রয়োজন হয় । তবে একা তার পক্ষে খরচ করা অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায় । সমস্ত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই মন্দিরে বিগ্রহের মতই কুকুরদেরও দিনের পর দিন সেবাসুশ্রূষা করে আসছেন স্বামী তৎপর মহারাজ । তাই সাহায্য প্রার্থনা না করলেও কোনও সহৃদয় ব্যক্তি এগিয়ে আসলে তিনি খুশী হবেন বলে জানিয়েছেন ৷ এমনকী এই সারমেয়গুলির ভালো দেখভাল হবে ৷
আরও পড়ুন: তুরস্কে বালিকার প্রাণ বাঁচাল রোমিও-জুলি, আলাপ করুন এনডিআরএফ-এর দুই সদস্যের সঙ্গে