বহরমপুর, 13 অক্টোবর : প্রথম আলাপ বছর সাতেক আগে ৷ সময় যত গড়িয়েছে, সম্পর্কের বাঁধন তত মজবুত হয়েছে ৷ কিন্তু এই সম্পর্কে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল দুই পরিবারের ৷ তাই বাধ্য হয়েই বাড়ির অমতে গাঁটছড়া বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রিয়া ও দেবাশিস ৷ যেমন ভাবনা, তেমন কাজ ৷ বাড়ির অমতেই বিয়ে করেছিলেন তাঁরা ৷ মাস চারেক সংসার করাও হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু তারপরই যেন ছন্দপতন ৷
হঠাৎই একদিন রিয়ার বাড়ির লোকজন হাজির হয়েছিলেন মেয়ে-জামাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলেন ৷ সেই মতো মেয়ে-জামাইকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন রিয়ার বাবা সুখেন মণ্ডল ৷ তখন ভাদ্র মাস ৷ যুক্তি ছিল মেয়ে কিছুদিন বাড়ি থাকার পর শ্বশুরবাড়ি ফিরবে ৷ তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই একা বাড়ি ফিরে এসেছিলেন বেসরকারি কর্মী দেবাশিস ৷
তারপরই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিল ৷ বারবার ফোন করেও রিয়ার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি ৷ এমনকি, মনের মানুষটাকে কাছে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলেও হতাশ হতে হয়েছিল বারবার ৷ অনেকটা বাধ্য হয়েই তাই ধরনায় বসার পথ বেছে নিলেন মালদার বাসিন্দা দেবাশিস ৷
রবিবার ছুটির দিন ৷ বহরমপুরের কাশিমবাজারের দীঘির পাড়া এলাকায় তখন লোকে লোকারণ্য ৷ বউ ফেরত চাই, এই দাবি তুলে আজ সকাল সাতটা থেকে ধরনায় বসেন মধ্যবয়সের যুবক ৷ যাকে ফেরত পাওয়ার জন্য এত 'আন্দোলন', সেই রিয়া মুখের উপর বললেন, "ঘর করব না ৷" রিয়ার বাবা-মায়ের দাবি, জামাইয়ের স্বভাব খারাপ, মদ্যপ, মেয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ও মারধরও করে ৷ তাই মেয়ে মুখ ফিরিয়েছে দেবাশিসের দিক থেকে ৷ যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ দেবাশিস ৷
বছর একুশের রিয়ার এমন মন বদলের কারণ খুঁজতে তখন নাকানিচোবানি খাচ্ছেন দেবাশিস ৷ যদিও তাঁর দাবি, রিয়ার পরিবার অলৌকিক শক্তিবলে মেয়ের মন পালটে দিয়েছে ৷ ততক্ষণে পাড়াময় রটে গেছে, দেবাশিসের কীর্তি ৷ শুরু হয়ে গিয়েছে ফিসফাস ৷ কয়েকজন দেবাশিসের সঙ্গে কথা বলে আসল সত্যিটাও জেনে গেছেন ৷ কয়েকজন দেবাশিসের হয়ে সওয়ালও করে ফেলেছেন ৷ কেউ আবার খবর দিয়েছেন পুলিশে ৷ পাড়ার লোকজনদের মন গলাতে পারলেও পুলিশের কাছে সফল হননি দেবাশিস ৷ সব জেনেশুনে দেবাশিসকে ভ্যানে তুলে নিয়ে চলে যায় পুলিশ ৷
যদিও পুলিশ ভ্যানে উঠতে উঠতে ভুল বুঝিয়ে, মিথ্যা কথা বলে রিয়াকে তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে ৷ রিয়ার সঙ্গে তাঁর ছবি তখনও নিজের কাছে আঁকড়ে রেখেছেন দেবাশিস ৷ পুলিশ ভ্যানে উঠতে উঠতেও বলছেন, শুধু ছবি নয়, রিয়াকে নিয়েই বাড়ি ফিরবেন ৷