বড়ঞা (মুর্শিদাবাদ), 15 ডিসেম্বর: অনেক বছর আগে মেশিনে ঘাস কাটার সময় এক দুর্ঘটনায় দু’টি হাত কাটা যায় মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞার গোলাহাটের বাসিন্দা সুরেশ বাগদির ৷ কিন্তু, সেই দুর্ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি ৷ হাত না থাকা সত্ত্বেও কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জন করেন সুরেশবাবু ৷ হ্যান্ড ট্রাক্টর চালান তিনি ৷ বাড়িতে গরু, মোষ রয়েছে ৷ নিজের চাষের জমিও রয়েছে ৷ সেখানেও নিয়মিত সময় দেন ৷ চাষাবাদে সাহায্য করেন ৷ বিকলাঙ্গ হয়েও পরিবারের সদস্যদের উপর নির্ভরশীল নন তিনি ৷ তাই বড়ঞা এলাকার সকল মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন সুরেশ বাগদি ৷
সুরেশ বাগদি বড়ঞার বিভিন্ন দুগ্ধ সমিতি থেকে দুধ তাঁর হ্যান্ড ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন দোকানে পৌঁছে দেন ৷ সেই সঙ্গে পশুখাদ্য-সহ অন্যান্য বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসার কাজ করেন ৷ তাও কারও সাহায্য ছাড়াই ৷ কীভাবে করেন তিনি এতসব ? ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে তিনি জানান, হাত না থাকা সত্ত্বেও তাঁর এই কঠোর পরিশ্রমের রহস্য হল ইচ্ছে শক্তি ও মনের জোর ৷ এই দু’টিকে সম্বল করে দিনরাত তিনি পরিশ্রম করে চলেছেন ৷ এমনকি নিজের জমিতে চাষও করেন ৷ বাড়ির গরু ও মোষের দেখাশোনাও নিজেই করেন ৷
পরিবারে স্ত্রী, সন্তানরা ছাড়াও বাবা, মা ও ভাই রয়েছে ৷ তাঁর ভাইও উপার্জন করেন ৷ কিন্তু, নিজের সংসার চালানোর জন্য অন্য কারও উপর নির্ভরশীল হতে নারাজ সুরেশ বাগদি ৷ জানালেন, দুর্ঘটনায় হাত দু’টি হারানোর পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ঠিকই ৷ কিন্তু, নিজের মনের জোর ও ইচ্ছে শক্তিকে কখনই দমে যেতে দেননি ৷ আর তাই দুর্ঘটনা থেকে ফিরে ধীরে ধীরে ছোটখাটো কাজ করতে শুরু করেন ৷ ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে তাঁর ৷ ব্যস আর কী ! সেই থেকে টানা 9 বছর ধরে হ্যান্ড ট্রাক্টর চালিয়ে ও মালবহন করে সংসার চালাচ্ছেন ৷
স্থানীয় এক বাসিন্দা অজয় কুমার দে’র বক্তব্য, ‘‘শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে অনেকেই মনের জোর হারিয়ে ফেলেন ৷ কিন্তু সুরেশ বাগদির মনের জোর রয়েছে ৷ দীর্ঘ 9 বছর ধরে হ্যান্ড ট্রাক্টরে সামগ্রী বহন করছেন ৷ বিভিন্ন সমিতি থেকে দুধ সেন্টারগুলিতে পৌঁছে দেন ৷ এটা একটা অনেক বড় দায়িত্ব ৷ কিন্তু, কখন সুরেশ বাগদিকে দেখিনি, সময়ের পিছনে চলতে ৷ সর্বদা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে চলেছেন ৷’’
আরও পড়ুন: