দিল্লি, 26 অগাস্ট : 5 অগাস্ট উপত্যকায় প্রত্যাহার হয় 370 ধারা । তারপর থেকেই কাশ্মীর ইশুতে তোলপাড় দেশ । কিছুদিন আগে কাশ্মীরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন রাহুল গান্ধি । টিপ্পনি কেটে 13 অগাস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক রাহুল গান্ধির উদ্দেশে প্লেন পাঠাবেন বলেন । তবে শনিবার নিজের খরচেই রাহুলসহ 11 জন বিরোধী নেতা কাশ্মীরে যান । তাঁদের শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে দিল্লি ফেরত পাঠানো হয় । সেই ইশুতে এবার সত্যপাল মালিককে একহাত নিলেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরি । তাঁকে রাজ্যপালের বদলে জম্মু ও কাশ্মীরের BJP-র সভাপতি বানিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলেন অধীর ।
বিরোধী দলনেতাদের সঙ্গে রাহুল গান্ধি শনিবার গেছিলেন কাশ্মীরে । সেখানে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি । রাহুল গান্ধি তারপর জানান, কাশ্মীরে যদি সবকিছু স্বাভাবিকই থাকে তাহলে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হল না কেন? যেখানে কিছুদিন আগে সত্যপাল মালিক নিজেই রাহুল গান্ধিকে প্লেন পাঠাবেন বলেছিলেন । এবিষয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধিরও বক্তব্য একই । তাঁর মতে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে । এবিষয়ে সত্যপাল মালিককে কটাক্ষ করেন অধীর চৌধুরি । বলেন, "আমার মনে হয় ওঁকে (সত্যপাল মালিক) রাজ্যপালের বদলে জম্মু ও কাশ্মীরের BJP সভাপতি করে দেওয়া উচিত । কারণ উনি যেভাবে কথা বলেন তা অনেকটা BJP নেতার মতো । রাহুল গান্ধিকে উনি নিজেই আহ্বান করেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য । বিমান পাঠাবেন বলেছিলেন । কিন্তু রাহুল গান্ধি নিজেই ভাড়া করে গেছিলেন ওখানে । ঢুকতে দেওয়া হল না । তাহলে কি জম্মু ও কাশ্মীরে কোনও বিরোধী দল ঢুকতে পারবে না? ওখানে কী চলছে তাহলে ? ওটা কী আর ভারতের অঙ্গ নয় ? আমরা তো এতদিন কাশ্মীরকে আমাদের দেশেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ভাবতাম ।"
5 অগাস্ট 370 ধারা প্রত্যাহারের পর থেকে কার্যত দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন জম্মু ও কাশ্মীর । ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের পাশাপাশি বন্ধ টেলিকমিউনিশেন পরিষেবাও । কেমন আছে কাশ্মীর ? স্বাস্থ্য, শিক্ষার অবস্থাই বা এখন কেমন ওখানে ? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, খাদ্য সামগ্রীর কী দশা তা জানতে আগ্রহী দেশের আপামর জনসাধারণ । কেন্দ্রীয় সরকার বারবার দাবি করেছে, ভালো আছে কাশ্মীর । এরই মাঝে শনিবার জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক দাবি করেন, জম্মু ও কাশ্মীরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে কোনও ঘাটতি হয়নি । সব স্বাভাবিকই আছে । যোগাযোগ প্রসঙ্গে বলেন, " মানুষের মৃত্যুর থেকে ভালো যোগাযোগ বন্ধ থাকা ।" কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে এবিষয়ে অধীর বলেন, "5 অগাস্টের পর ওখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই । স্কুল, কলেজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে । বাইরের কোনও ইনস্টিটিউশন খোলা নেই । অন্যান্য রাজ্যের যারা ওখানে ঘুরতে যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছিল তাদেরও টিকিট ক্যানসেল করতে হয়েছে । ওঁরা 370 প্রত্যাহারের সময় যা বলেছিলেন তার কী হল ? ওঁরা বলেছিলেন সন্ত্রাসবাদ মুক্ত হবে, নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হবে । নতুন সকাল দেখবে কাশ্মীর । কোথায় গেল সে সব কথা । আদতে কী দেখল সবাই ? ওখানকার সাধারণ মানুষকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না । বাইরে থেকে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না । যদি সব ঠিকই থাকত তাহলে বাইরের লোকজনকে ঢুকতে দিত । কথা আর কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে । কেউ বলুক উপত্যকায় আদতে চলছে কী । গুলাম নবি আজ়াদ ওখানকার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন । ওঁর অধিকার নেই কাশ্মীরে প্রবেশ করার ?"
কাশ্মীর প্রসঙ্গে মন্তব্যের পাশাপাশি রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও মুখ খোলেন তিনি । কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর বৈঠক নিয়ে যে কানাঘুঁষো চলছে তা নিয়ে স্পষ্ট বলেন, "আমি কিছু জানি না । বৈঠক হয়েছে, তাতে কী হয়েছে আমার জানা নেই । ফলে এবিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না ।" কিন্তু বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে তাঁর মনোভাব কী? অধীর বলেন, "আমি যখন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলাম তখন রাহুল গান্ধির পরামর্শে 2016-র বিধানসভা ভোটে বাম দলগুলির সঙ্গে আঁতাত করেছিলাম । তারপর তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয় । আমরা সরকারের বিরুদ্ধে একইরকমভাবে প্রতিবাদ করি । কিন্তু সংঘবদ্ধভাবে লড়াইটা আমরা করতে পারিনি । তবে বিধানসভার মধ্যে দৃষ্টান্তমূলকভাবে কংগ্রেস ও বামেরা একইসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে । এই লড়াইটা বাইরে নেই । আমি অনেকদিন ধরেই সওয়াল করে আসছি যে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাম এবং কংগ্রেসকে একইসঙ্গে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এগোনো উচিত । শুনলাম রাজ্যের বর্তমান কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করেছেন । আমি আলোচনায় ছিলাম না । ফলে আমি জানি না কিছু । বলতে পারব না কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে । তবে যদি একসঙ্গে দু'দল চলে তাহলে ভালোই হয় ।"