মুর্শিদাবাদ, 8 জুলাই: পঞ্চায়েত নির্বাচনে মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী রাজ্য ৷ বিভিন্ন জেলা থেকে দিনভর একের পর এক মৃত্যুর খবর এসেছে ৷ তবে সবচেয়ে বেশি হিংসার বলি মুর্শিদাবাদে ৷ ভোটের দিন শুধু এই জেলাতেই প্রাণ গিয়েছে 5 জনের ৷ রাজনৈতিক সংঘর্ষে জখম হয়েছেন শতাধিক মানুষ ৷ সারা দিন ধরে মুড়ি-মুড়কির মতো চলল বোমা ও গুলি ৷ সঙ্গে দেদার ছাপ্পা ও বুথ দখল ৷ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের পাশাপাশি জেলাজুড়ে সন্ত্রাসের জন্য নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷ যদিও শাসকদল ভোট-সন্ত্রাসের জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে বাম-কংগ্রেসকে ৷ তবে, জেলা পুলিশ সুপার সুরিন্দর সিং-এর দাবি, বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নে মিটেছে মুর্শিদাবাদের পঞ্চায়েত নির্বাচন ।
দিনভর টানটান উত্তেজনায় ভোটপর্ব মিটল মুর্শিদাবাদে । মনোনয়ন পেশের সময় থেকেই তপ্ত ছিল নিজামের শহর ৷ ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও ৷ ভোট শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেও সেই হিংসা অব্যাহত থাকে ৷ শুক্রবার রাতে প্রথম ভোটের বলি হন রেজিনগর থানার এক কংগ্রেস কর্মী । রেজিনগর থানার তেঘরি নাজিরপুরে বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয় কংগ্রেস কর্মী ইয়াসিন শেখের (52)।
এরপর শনিবার ভোরে দুস্কৃতীদের ধারাল অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয় বেলডাঙা থানার কাপাসডাঙার তৃণমূল কর্মী বাবর আলির (32)। অভিযোগের তির কংগ্রেসের দিকে । এ ছাড়াও নওদা থানার গঙ্গাধারী গ্রামে দুস্কৃতীদের বোমায় গুরুতর জখম লিয়াকত শেখের (54) মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে । পুলিশ সেজে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার রতুনপুর নলদ্বীপ গ্রামে । মৃত সতরুদ্দিন শেখ ওরফে রহিসুদ্দিনের পরিবার এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল তুলেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে । অন্যদিকে, লালগোলা থানায় ভোটের বলি আমিরুল শেখ ।
আরও পড়ুন: ভোটে হিংসার বলি 15, অশান্তি রাজ্যজুড়ে; রিপোর্ট চাইল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
সব মিলিয়ে অভিযোগ-পালটা অভিযোগে দিনভর সরগরম ছিল মুর্শিদাবাদ ৷ বিকেল চারটে পর্যন্ত ভোট পড়ে মাত্র 35 শতাংশ । রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, সন্ত্রাসের আবহে বহু সাধারণ মানুষ ভোট দিতে বের হননি । নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, যদিও বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে 65.95 শতাংশ ভোট পড়েছে ৷
সন্ত্রাস যে হয়েছে তার প্রমাণ রানিনগর ব্লকের রানিনগর, হুড়শী, সামশেরগঞ্জ, রঘুনাথগঞ্জের বড়শিমুল । সব জায়গাতেই চলে গুলি, বোমা, ভোট লুট । ভোট দিতে না পারায় রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা । জঙ্গিপুরে রাজ্য সড়কের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভকারীরা সেক্টর অফিসারের গাড়ি ভাঙচুর করে ।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে । মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লুট করেছে শাসক দল । তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় বলেন, বাম-কংগ্রেস সন্ত্রাস চালালেও তৃণমূল কংগ্রেসকে দমিয়ে রাখতে পারেনি ।