ETV Bharat / state

ঘরের ছেলে থাকুক ঘরে, আপেল ফলবে গঙ্গা-পাড়ে !

author img

By

Published : Feb 14, 2020, 11:45 PM IST

Updated : Feb 14, 2020, 11:58 PM IST

আপেল চাষ করতে গিয়ে কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন ডোমকলের বাহালগনরের পাঁচ শ্রমিক ৷ এবার সেই ডোমকলেই চাষ হচ্ছে আপেলের ৷ কাশ্মীর থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ডোমকলের আপেল চাষ শুরু করেছে ব্লক প্রশাসন ৷

apple
সাগরদিঘির সমতলে আপেল চাষ

সাগরদিঘি, 14 ফেব্রুয়ারি : বাহালনগর, চাঁদপাড়া, কাবিলপুর ৷ সাগরদিঘি ব্লকের এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকে কাশ্মীরে আপেল চাষ করতে যেত শ্রমিকরা । পেট যে বড় বালাই৷ আর এই আপেল চাষ করতে গিয়ে প্রাণ খুইয়েছিলেন বাহালনগরের পাঁচ শ্রমিক । 29 অক্টোবর, 2019 ৷ সেদিন কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় বাহালনগরের শেখ নইমুদ্দিন, শেখ মুরশলিম, শেখ রফিকুল, শেখ রফিক ও শেখ কামারুদ্দিনের শরীর । আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শ্রমিকদের মধ্যে । কাশ্মীরে আপেল চাষের কাজ ছেড়ে নিজেদের গ্রামে ফিরতে শুরু করে বাহালনগর, চাঁদপাড়ার শ্রমিকরা । এবার সেই সাগরদিঘিতেই হতে চলেছে আপেলের চাষ ।

সাথী শ্রমিকদের প্রাণ যাওয়ার পর সেদিন আতঙ্ক নিয়ে কাশ্মীর থেকে গ্রামে ফিরেছিল শ্রমিকরা ৷ পুঁজি বলতে ছিল শুধু আপেল চাষের অভিজ্ঞতা ৷ সেই অভিজ্ঞতাকে হাতিয়ার করেই আপেল চাষ শুরু হয়েছে সাগরদিঘিতে ৷ উদ্যোক্তা ব্লক প্রশাসন । প্রশাসনের আশা, এই আপেল চাষ সাফল্যের মুখ দেখলে পরিযায়ী তকমা ঘুচবে এলাকার শ্রমিকদের । উপার্জনের তাগিদে তাদের আর ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হবে না । বাড়িতে থেকেই তারা ফলাতে পারবে উপত্যকার ফসল ।

ঘটনার কিছুদিন পর মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর্থিক সাহায্য ৷ সেই অর্থ তো পেল নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলো ৷ আর যারা আতঙ্কে ফিরে এসেছিল তাদের কীভাবে চলবে ? পেট চালানোর জন্য যে দরকার উপার্জনের ৷ যা দিয়ে বছরভর সংসার চলবে ৷ ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যাবে, পেটপুরে খেতে পারবে দু'বেলা ৷ শ্রমিকদের দুর্দশার কথা সেদিন শুনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এখানেই কিছু করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আর্জি জানিয়েছিল শ্রমিকদের পরিবারগুলো ৷ অভাব-অভিযোগ শুনে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । সাগরদিঘি প্রশাসন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই এখানে আপেল চাষের প্রস্তাব দেন ৷ সেই মতো আসে নির্দেশ ৷ শুরু হয় কাজ ৷

সাগরদিঘিতেই হচ্ছে আপেলের চাষ..দেখুন ভিডিয়ো

ঠিক হয় আপেল চাষের জন্য সাগরদিঘি ব্লকের তিন হেক্টর জমি বেছে নেওয়া হবে । পরিকল্পনা মতো নির্বাচন করা হয় জমি ৷ ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় জমি তৈরির কাজ ৷ সরকারি দুই আধিকারিককে মিরাটে আপেল চাষের প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানো হয় । সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইতালিয়ান আন্না প্রজাতির আপেল চাষ করা হবে ।

কেমন হবে এই আপেল ? প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক ও চাষিদের বক্তব্য, এই প্রজাতির আপেল গাছ 48 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে । বছরে 200 ঘণ্টা 10 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে তাপমাত্রা থাকলেই গাছে ফল আসবে । উপত্যকায় যার জন্য প্রয়োজন হয় বছরে 1000 থেকে 1200 ঘণ্টা বা হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা । প্রথম দফায় সাগরদিঘির কৃষি খামার ও ব্লকের তিন জায়গায় তিন হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয় 1200 আন্না প্রজাতির শাখা কলম ।

গাছ লাগানোর পর পাতা গজাতে শুরু করেছে ৷ উৎসাহ-উদ্দীপনায় মেতে উঠেছেন প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তি ও আপেল চাষিরা । শাখা কলমের কচি পাতায় সবুজ রং ধরতেই সেই রং ছড়িয়ে পড়েছে যেন চাষিদের মনেও । এ যেন তাঁদের কাছে বিশ্বজয়ের মতোই । এখন অপেক্ষা ফলের । সাগরদিঘি ব্লকের BDO শুভজিৎ কুণ্ডু বললেন, "দু'বছরের মধ্যেই গাছে ফল আসবে । এই আপেলই হয়ত কর্মসংস্থান গড়ে দেবে অনেকের ৷ এই এলাকার লোকেদের পরিযায়ী শ্রমিকের তকমা ঘুচবে ৷" একই দাবি আপেল চাষি মানোয়ার হোসেনেরও ৷ ফল আসবেই, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই তাঁর ।

এখন গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা ৷ দু'তিনদিন অন্তর গাছের গোড়ায় দেওয়া হচ্ছে জল, উপড়ে ফেলা হচ্ছে চারপাশে বেড়ে ওঠা আগাছা ৷ চাষিরা জানালেন, গাছ যত বড় হবে তত যত্ন বাড়াতে হবে ৷

যত্নে তাঁরা খামতি রাখবেন না ৷ জানালেন আপেল চাষে যুক্ত চাষিরা ৷ এই আপেল চাষ করতে গিয়েই প্রাণ হারাতে হয়েছিল নইমুদ্দিন, রফিকুলদের ৷ সেই আতঙ্ক বুকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও এলাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁদের ৷ তাই এলাকায় আপেল চাষের কাজ পেয়ে তাঁরা খুশি ৷ গাছের নতুন পাতা যত গজাচ্ছে ততই যেন স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি এগোচ্ছেন তাঁরা ৷ মনে মনে বলছেন, "আপেল চাষ করতে আর ভিন রাজ্যে যেতে হবে না । এক বুক আতঙ্ক থাকবে না ৷ জঙ্গিদের বন্দুকের নলের সামনে দিতে হবে না প্রাণ । বাড়ির পাশেই ফলাব উপত্যকার ফসল ।"

সাগরদিঘি, 14 ফেব্রুয়ারি : বাহালনগর, চাঁদপাড়া, কাবিলপুর ৷ সাগরদিঘি ব্লকের এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকে কাশ্মীরে আপেল চাষ করতে যেত শ্রমিকরা । পেট যে বড় বালাই৷ আর এই আপেল চাষ করতে গিয়ে প্রাণ খুইয়েছিলেন বাহালনগরের পাঁচ শ্রমিক । 29 অক্টোবর, 2019 ৷ সেদিন কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় বাহালনগরের শেখ নইমুদ্দিন, শেখ মুরশলিম, শেখ রফিকুল, শেখ রফিক ও শেখ কামারুদ্দিনের শরীর । আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শ্রমিকদের মধ্যে । কাশ্মীরে আপেল চাষের কাজ ছেড়ে নিজেদের গ্রামে ফিরতে শুরু করে বাহালনগর, চাঁদপাড়ার শ্রমিকরা । এবার সেই সাগরদিঘিতেই হতে চলেছে আপেলের চাষ ।

সাথী শ্রমিকদের প্রাণ যাওয়ার পর সেদিন আতঙ্ক নিয়ে কাশ্মীর থেকে গ্রামে ফিরেছিল শ্রমিকরা ৷ পুঁজি বলতে ছিল শুধু আপেল চাষের অভিজ্ঞতা ৷ সেই অভিজ্ঞতাকে হাতিয়ার করেই আপেল চাষ শুরু হয়েছে সাগরদিঘিতে ৷ উদ্যোক্তা ব্লক প্রশাসন । প্রশাসনের আশা, এই আপেল চাষ সাফল্যের মুখ দেখলে পরিযায়ী তকমা ঘুচবে এলাকার শ্রমিকদের । উপার্জনের তাগিদে তাদের আর ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হবে না । বাড়িতে থেকেই তারা ফলাতে পারবে উপত্যকার ফসল ।

ঘটনার কিছুদিন পর মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর্থিক সাহায্য ৷ সেই অর্থ তো পেল নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলো ৷ আর যারা আতঙ্কে ফিরে এসেছিল তাদের কীভাবে চলবে ? পেট চালানোর জন্য যে দরকার উপার্জনের ৷ যা দিয়ে বছরভর সংসার চলবে ৷ ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যাবে, পেটপুরে খেতে পারবে দু'বেলা ৷ শ্রমিকদের দুর্দশার কথা সেদিন শুনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এখানেই কিছু করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আর্জি জানিয়েছিল শ্রমিকদের পরিবারগুলো ৷ অভাব-অভিযোগ শুনে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । সাগরদিঘি প্রশাসন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই এখানে আপেল চাষের প্রস্তাব দেন ৷ সেই মতো আসে নির্দেশ ৷ শুরু হয় কাজ ৷

সাগরদিঘিতেই হচ্ছে আপেলের চাষ..দেখুন ভিডিয়ো

ঠিক হয় আপেল চাষের জন্য সাগরদিঘি ব্লকের তিন হেক্টর জমি বেছে নেওয়া হবে । পরিকল্পনা মতো নির্বাচন করা হয় জমি ৷ ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় জমি তৈরির কাজ ৷ সরকারি দুই আধিকারিককে মিরাটে আপেল চাষের প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানো হয় । সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইতালিয়ান আন্না প্রজাতির আপেল চাষ করা হবে ।

কেমন হবে এই আপেল ? প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক ও চাষিদের বক্তব্য, এই প্রজাতির আপেল গাছ 48 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে । বছরে 200 ঘণ্টা 10 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে তাপমাত্রা থাকলেই গাছে ফল আসবে । উপত্যকায় যার জন্য প্রয়োজন হয় বছরে 1000 থেকে 1200 ঘণ্টা বা হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা । প্রথম দফায় সাগরদিঘির কৃষি খামার ও ব্লকের তিন জায়গায় তিন হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয় 1200 আন্না প্রজাতির শাখা কলম ।

গাছ লাগানোর পর পাতা গজাতে শুরু করেছে ৷ উৎসাহ-উদ্দীপনায় মেতে উঠেছেন প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তি ও আপেল চাষিরা । শাখা কলমের কচি পাতায় সবুজ রং ধরতেই সেই রং ছড়িয়ে পড়েছে যেন চাষিদের মনেও । এ যেন তাঁদের কাছে বিশ্বজয়ের মতোই । এখন অপেক্ষা ফলের । সাগরদিঘি ব্লকের BDO শুভজিৎ কুণ্ডু বললেন, "দু'বছরের মধ্যেই গাছে ফল আসবে । এই আপেলই হয়ত কর্মসংস্থান গড়ে দেবে অনেকের ৷ এই এলাকার লোকেদের পরিযায়ী শ্রমিকের তকমা ঘুচবে ৷" একই দাবি আপেল চাষি মানোয়ার হোসেনেরও ৷ ফল আসবেই, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই তাঁর ।

এখন গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা ৷ দু'তিনদিন অন্তর গাছের গোড়ায় দেওয়া হচ্ছে জল, উপড়ে ফেলা হচ্ছে চারপাশে বেড়ে ওঠা আগাছা ৷ চাষিরা জানালেন, গাছ যত বড় হবে তত যত্ন বাড়াতে হবে ৷

যত্নে তাঁরা খামতি রাখবেন না ৷ জানালেন আপেল চাষে যুক্ত চাষিরা ৷ এই আপেল চাষ করতে গিয়েই প্রাণ হারাতে হয়েছিল নইমুদ্দিন, রফিকুলদের ৷ সেই আতঙ্ক বুকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও এলাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁদের ৷ তাই এলাকায় আপেল চাষের কাজ পেয়ে তাঁরা খুশি ৷ গাছের নতুন পাতা যত গজাচ্ছে ততই যেন স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি এগোচ্ছেন তাঁরা ৷ মনে মনে বলছেন, "আপেল চাষ করতে আর ভিন রাজ্যে যেতে হবে না । এক বুক আতঙ্ক থাকবে না ৷ জঙ্গিদের বন্দুকের নলের সামনে দিতে হবে না প্রাণ । বাড়ির পাশেই ফলাব উপত্যকার ফসল ।"

Last Updated : Feb 14, 2020, 11:58 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.