মুর্শিদাবাদ, 1 ডিসেম্বর : লালবাগের জাফরাগঞ্জে মির জ়াফরের প্রাসাদ ৷ এখন পরে রয়েছে অবহেলায় । নিমকহারাম দেউড়ি নামেই এখন এলাকার লোকেরা চেনে এই প্রাসাদকে । বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে মিরের নির্দেশে এই প্রাসাদের ভিতরেই খুন করা হয় ৷ পর্যটকদের এমনই বোঝান স্থানীয় গাইড ও টাঙ্গাচালকরা । তবে ইতিহাসবিদদের একাংশের মত, সিরাজ়কে বন্দি করে এখানে রাখা হলেও খুন করা হয়েছে হীরাঝিলে, যার একটা বিশাল অংশ এখন ভাগীরথীতে তলিয়ে গিয়েছে ।
হাজারদুয়ারি, কাটরা মসজিদ সহ একাধিক স্থান পুরাতত্ত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করলেও মির জাফরের বাড়ি অধিগ্রহণ বা সংস্কারে হাত লাগায়নি কোনও সরকার । প্রাসাদের দেউড়ি ভগ্নাবস্থায় এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে । মির জাফরের পরিবার ভিতরের মসজিদটি নিজেদের তাগিদে সংস্কার করলেও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বাকি সব কিছুই । নিমকহারাম দেউড়ি নাম নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাসাদের মূল প্রবেশপথ ।
1757 সালের 23 জুন পলাশির যুদ্ধে সিরাজ়ের পরাজয়ের পর বাংলার মসনদে বসেন সৈয়দ মির জা়ফর আলি খান । তার আগে তিনি ঔরঙ্গজ়েবের কাছে দিল্লি থেকে মুর্শিদাবাদ আসার হুকুমনামা পান । পিতামহ হুসেন নাজা়ফি ইরাকের নাজা়ফ অঞ্চলের আধিবাসী ছিলেন । মুর্শিদাবাদ এসে মির জাফর জাফরিগঞ্জে প্রায় 51 বিঘা জায়গার উপর ইরাকের স্থাপত্যশৈলীতে বিরাট প্রাসাদ নির্মাণ করেন । কথিত আছে, পলাশির যুদ্ধে পরাজয়ের পর বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লা সপরিবারে জলপথে পাটনা পালাচ্ছিলেন । বর্তমান ঝাড়খণ্ডের রাজমহল থেকে তাঁকে বন্দী করে মুর্শিদাবাদ আনা হয় । রাখা হয় মির জা়ফরের জাফরাগঞ্জের প্রাসাদের একটি আস্তাবলে । মির জাফরের পুত্র মিরনের নির্দেশে সিরাজকে হত্যা করে মহম্মদি বেগ । মহম্মদি বেগের সেই ছুড়িটিও হাজারদুয়ারি মিউজ়িয়ামে সংগ্রহীত রয়েছে ।
মির জা়ফরের বিশ্বাসঘাতকতা এবং তাঁর প্রাসাদে সিরাজ়কে খুন করার জন্যই এই বাড়িটিকে ঘৃণার চোখে দেখেন স্থানীয়রা । নিমকহারাম দেউড়ি নাম দিয়ে ঢিল ছোড়া হয় ৷ থুতুও ছেটানো হয় দেউড়িকে লক্ষ্য করে । তবে ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, সিরাজ়কে খুন করা হয়েছিল ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত হীরাঝিল প্রাসাদে । ইতিহাসবিদরা দাবি করলেও মির জাফরের প্রাসাদ 'নিমকহারাম দেউড়ি' নাম ঘোচাতে পারেনি ।