হরিহরপাড়া, 19 সেপ্টেম্বর: সেপটিক ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়া 2 শ্রমিককে বাঁচিয়ে ছিলেন আবদুল মান্নান ৷ মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার সেই ঘটনায় দুই শ্রমিক এখন বিপদমুক্ত ৷ আর তার পরেই গ্রামবাসীদের কাছে হিরো হয়ে উঠেছেন বছর ছাব্বিশের আবদুল মান্নান ৷ নিজের প্রাণের পরোয়া না করেই সেপটিক ট্যাংকে নেমেছিলেন তিনি ৷ আর তাঁর সেই সাহসের কারণেই প্রাণে বাঁচেন রহুল শেখ এবং রবিউল শেখ ৷
সোমবার সকালে হরিহরপাড়া থানার মাদারতলায় পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে নেমে প্রাণ হারান তিন শ্রমিক ৷ জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ওই সেপটিক ট্যাংকে বিষাক্ত গ্যাস ছিল ৷ ফলে অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ হারান তিন শ্রমিক ৷ আরও দু’জন শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৷ বর্তমানে তাঁরা বিপদমুক্ত ৷ কিন্তু, তা কখনই সম্ভব হত না স্থানীয় যুবক আবদুল মান্নান না থাকলে ৷ যিনি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ওই বিষাক্ত গ্যাসে ভরা সেপটিক ট্যাংকে নেমেছিলেন ৷
আবদুল মান্নান বলেন, ‘‘চোখের সামনে দু’জনকে ছটফট করতে দেখে জীবনের পরোয়া করিনি ৷ গ্রামের কয়েকজনকে বললাম আমার পায়ে দড়ি বেঁধে নিচে নামাতে ৷ তবে, আর দু’মিনিট ওই অবস্থায় থাকলে আমার জীবন সংকট হতে পারত ৷’’ আবদুল জানান, একজন শ্রমিক সেপটিক ট্যাংকের কাঠের পাটাতন খুলতে গিয়ে নিচে পড়ে যান ৷ তাঁকে উদ্ধার করতে নেমে আরও দু’জন ভিতরে আটকে পড়েন ৷ পরে তাঁদের উদ্ধারের জন্য আরও দু’জন নিচে নেমে অসুস্থ হয়ে যান ৷
আরও পড়ুন: সেফটিক ট্যাঙ্কে কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু তিনজনের
আব্দুলের কথা অনুযায়ী, তিনি কোমড়ে দড়ি বেঁধে নিচে নেমে দেখেন, নিথর অবস্থায় পড়ে আছেন তিনজন ৷ বাকি দু’জন প্রায় সংজ্ঞাহীন হওয়ার পর্যায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘নিচের দিকে মুখ করে প্রায় ছ'ফুট নেমে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম ৷ কোনরকমে আমার হাত ধরে উপরে ওঠেন রুহুল শেখ ৷ রুহুলকে উপরে তুলতে পেরে কিছুটা সাহস মেলে ৷ এর পর ফের নেমে বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় তুলে আনতে পারি রবিউলকে ৷’’ তবে, এর পরেই তিনি নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ পরে অক্সিজেন দেওয়া হলে সুস্থ হন আবদুল ৷
কিন্তু, আবদুলের আক্ষেপ বাকি তিনজনকে বাঁচাতে পারেননি ৷ কিছুক্ষণ আগে পৌঁছালে হয়তো বাকিদেরও বাঁচাতে পারতেন ৷ রুহুল শেখ এবং রবিউল শেখ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন আবদুলের অদম্য সাহসের জন্য ৷ মৃত্যুর ফাঁদ থেকে দু’জনকে বাঁচিয়ে তাই গ্রামবাসীর কাছে রাতারাতি নায়ক হয়ে উঠেছেন মাদারতলার আবদুল মান্নান ৷