বড়ঞা, 18 এপ্রিল: সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, পেশায় শিক্ষক জীবনকৃষ্ণ সাহা কেন জড়িয়ে পড়লেন নিয়োগ দুর্নীতির মতো একটি ঘটনায় ? কেনই বা তাঁর নাম জড়াচ্ছে গরুপাচারের সঙ্গে ? গত কয়েকদিন ধরে এই চর্চাই চলছে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার পথে-ঘাটে, রাস্তার মোড়ের জটলায়, কিংবা চায়ের দোকানের ঠেকে ৷ বড়ঞার বিধায়ক আদতে কেমন মানুষ ? এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত ৷ কেউ বলছেন, তিনি নাকি দেমাকি ! মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ! আবার কারও মুখে শোনা যাচ্ছে সম্পূর্ণ উলটো কথা ! তেমনই একজন হলেন বিধায়কের বরাবরের প্রতিবেশী মিন্টু শেখ ৷
বয়সে প্রবীণ মিন্টু জীবনকৃষ্ণকে ছোট থেকে বড় হতে দেখেছেন ৷ তাঁর সঙ্গে কথা বলে উঠে এল নানা অজানা তথ্য ৷ মিন্টু জানান, জীবনকৃষ্ণ ধনী পরিবারের ছেলে হলেও ছোট থেকেই মনে শান্তি ছিল না তাঁর ৷ জীবনকৃষ্ণের বাবা দু'বার বিয়ে করেছেন ৷ জীবনকৃষ্ণ তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তান ৷ স্ত্রী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও অন্য মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি ৷ দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলে আনেন ৷ বাড়ি ছাড়েন প্রথম স্ত্রী ৷ অথচ, জীবনকৃষ্ণকে থেকে যেতে হয় বাবা আর সৎ মায়ের সংসারে ৷ এই ঘটনা নাবালক জীবনকৃষ্ণকে একেবারে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল ৷
মিন্টু জানান, সৎ মা ঘরে আসার পর থেকেই বাবার সঙ্গে, পরিবারের বাকিদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় জীবনকৃষ্ণের ৷ যা কোনও দিন ঘোচেনি ৷ জীবনের বাবা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন বীরভূমের সাঁইথিয়ার বাড়িতে ৷ জীবনের জন্মদাত্রী মা থাকেন মুর্শিদাবাদেরই খড়গ্রামের পারুলিয়ায় ৷
মিন্টুর দাবি, তিনি কখনও জীবনকৃষ্ণকে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখেননি ৷ বরং, বিপদে-আপদে মানুষজনকে সাহায্য করতেন জীবন ৷ তবে, টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে উঠেছ, তা ভুল নয় বলেও জানিয়েছেন প্রবীণ এই মানুষটি ৷ তিনি বলেন, "কিছু মানুষকে যে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছিল, এটা আমরাও শুনেছিলাম ৷ কিন্তু, টিভিতে বলছে, হাজার হাজার লোকের নাকি এভাবে চাকরি হয়েছে ! এটা কতটা সত্যি, তা আমাদের জানা নেই !"
প্রসঙ্গত, 2004 সালে বড়ঞা থানার বেলডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন জীবনকৃষ্ণ ৷ পরবর্তীতে (2012 সালে) তিনি চাকরি পান দেবগ্রাম হাই স্কুলে ৷ এছাড়াও, পারিবারিক সূত্রে জীবনের একাধিক ব্যবসা রয়েছে ৷ তাঁর সম্পত্তির মধ্য়ে রয়েছে রেশন দোকানের গুদাম, মোট 15 বিঘা জমি, একটি চালকল, একটি আলু রাখার হিমঘর, দু'টি বাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট ৷ এর মধ্যে একটি বাড়ি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে ভাড়া দেওয়া আছে ৷ বড়ঞার একটি অঞ্চলের রেশন পরিষেবার সাব ডিলারশিপও রয়েছে জীবনকৃষ্ণের নামে ৷
আরও পড়ুন: 'ব্রেন খারাপ হয়ে গিয়েছিল !' জীবনকৃষ্ণ সম্পর্কে কেন একথা বললেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা ?
বিধায়কের স্ত্রী টগরী সাহাও শিক্ষিকা ৷ 2017 সালে সরকারি চাকরি পান তিনি ৷ তাঁর কর্মস্থল আন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাড়ির দূরত্ব মাত্র 100 মিটার ! শিক্ষক পদে চাকরি পেয়েছেন বিধায়কের শ্যালক নিতাই সাহাও ৷ 2022 সালের 26 মার্চ পিয়ারাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই পদে নিযুক্ত হন তিনি ৷ সূত্রের দাবি, গত 6-7 মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি কিনেছেন জীবনকৃষ্ণ ৷ এছাড়া, 2016 সালে বীরভূমের সাঁইথিয়ায় প্রায় 7-8 বিঘা জমি কেনেন তিনি ৷ বর্তমানে সেই জমির বাজারদর প্রতি কাঠায় 2 লক্ষ টাকা ৷