ETV Bharat / state

সাত বছর পর শিকল-মুক্ত, 'স্বাধীন' আয়েশার হাতে তেরঙ্গা ! - আয়েশার নতুন ঠিকানা সরকারি হোম

সাত বছর ধরে পায়ে শিকল পরেই দিন কাটত 13-র আয়েশার । বহরমপুরে শিশু সুরক্ষা কমিটির উদ্যোগে মুক্ত হয়ে তার নতুন ঠিকানা সরকারি হোম । সেখানেই আগামী দিনে চিকিৎসা হবে তার ।

আয়েশা হাতে পতাকা
author img

By

Published : Aug 22, 2019, 9:25 AM IST

Updated : Aug 22, 2019, 1:08 PM IST

বহরমপুর, 22 অগাস্ট : সময় পেলেই বাকি বাচ্চাদের মতো খেলতে চায় ও । সুযোগ পেলেই এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় । চোখের আড়াল হলে জঙ্গলে, পুকুরের পাড়ে বসে কী যেন বলে । নিজের মনেই খেলে মাছ, পাখি, গাছ আর প্রকৃতির সঙ্গে । তবে, ফেরার সময় হলেই সব গুলিয়ে যায় । শেষে মাইকে হাঁক দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয় ঘরে । আয়েশা সিদ্দিকি । যাকে 'পাগল' তকমা দিয়ে আব্বা আম্মিও ছেড়ে গেছে । দাদি মর্জিনার কাছেই মানুষ আড়াই বছর থেকে । বয়সের ভার সামলাতে না পেরে নাতনিকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন মর্জিনা বিবি ।

জন্মানোর পর থেকে সুস্থই ছিল বহরমপুর ব্লকের জীবননগরের আয়েশা । আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই খাওয়াদাওয়া, খেলা, দুষ্টুমি করা, আম্মির কোলে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ানো, সবই ছিল স্বাভাবিক । আড়াই বছর বয়সে হঠাৎই খেতে খেতে পড়ে যায় মাটিতে । তারপর মাথায় চোট পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারায় । মুম্বই, বেঙ্গালুরু, মুর্শিদাবাদের বড় বড় হাসপাতালে দেখিয়েও কিছু হয়নি । আর্থিক অবস্থার জন্য পিছপা হতে হয়েছে । শেষে আয়েশার আব্বা-আম্মি রোজগারের টানে চলে গেছেন মুম্বইয়ে । আয়েশাকে রেখে গেছেন দাদির কাছে । বয়সের ভারে মর্জিনা বিবি সামলাতে পারেন না তাকে । তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেই লোকের বাড়ি বাড়ি অন্নের সন্ধানে যান । প্রতিবেশীরাও দু'মুঠো জোগান দিয়ে সাহায্য করে । মর্জিনা বিবির কথায়, "দিনে চার বার খায় আয়েশা । সকলে সাহায্য না করলে কী করে জোগাতাম ?" প্রতিবেশীদের সাহায্যেই আয়েশার খোঁজ পায় শিশু সুরক্ষা কমিটির এক মহিলা সদস্য । তাঁরই উদ্যোগে সাত বছর পর শিকল ছেড়ে মুক্তির স্বাদ পেল আয়েশা । চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হল হোমে ।

আয়েশার আব্বা রবিউল মুম্বইয়ে রিকশা চালান । আম্মি আলবু বিবি পরিচারিকার কাজ করেন । চার সন্তানের মধ্যে আয়েশাকে তাঁরা সামলাতে না পেরে ছেড়ে গেছেন দাদির কাছে । আয়েশার এক ভাইকেও অন্য এক সহৃদয় পরিবার দেখাশোনা করে । অর্থের অভাবে এই দুই সন্তানকে মানুষ করতে পারেননি । মর্জিনা বিবিও একই কথা জানান । ক্ষোভ উগরে দেন প্রশাসনের উপর । বলেন, "প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরলেও চিকিৎসা তো দূর, মেলেনি প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটও । তাই এই বয়সে হাল ছেড়ে দিয়েছি । ওকে সামলাতে শিকলই ছিল একমাত্র উপায় ।"

মুখে গোঁ গোঁ শব্দ, পায়ে শিকল আর উজ্জ্বল দু'টো চোখ । কী যেন বলতে চায় । তার ভাষা কেউ বোঝে না । মর্জিনা বিবির কথায়, "ওকে শিকল ছেড়ে রাখব কী করে ? সবসময় পালিয়ে যায় । আমার যা বয়স আর ছুটতে পারি না । ওকে নিয়ে গেলে, একটু চিকিৎসা হলে তো ওরও ভালো হয় ।" তবে, প্রশাসন নিতে আসলে দাদির নেওটা 13-র আয়েশা ছাড়তে চায় না তাঁকে । কোনও মতে নতুন জামা পরিয়ে মুক্তির স্বাদ দিয়ে হোমের উদ্দেশে রওনা দেয় সে । স্বাধীন হয়ে হাতে তুলে নেয় জাতীয় পতাকা । ঘটনার সাক্ষী থাকতে এলাকার প্রচুর লোক হাজির হয় তার বাড়িতে । আসেন পঞ্চায়েত প্রধান কবিতা সরকারও । আয়েশাকে মুক্ত দেখে তিনি আশ্বাস দেন, আগামী দিনে কোনও সমস্যা হলে প্রশাসন পাশে থাকবে । বলেন, "এতদিন পর্যন্ত ওর কোনও চিকিৎসা হয়নি । আমরা ওকে সুস্থ করার চেষ্টা করব । যতটা সম্ভব করব ওর জন্য ।"

দেখুন ভিডিয়ো

বহরমপুর, 22 অগাস্ট : সময় পেলেই বাকি বাচ্চাদের মতো খেলতে চায় ও । সুযোগ পেলেই এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় । চোখের আড়াল হলে জঙ্গলে, পুকুরের পাড়ে বসে কী যেন বলে । নিজের মনেই খেলে মাছ, পাখি, গাছ আর প্রকৃতির সঙ্গে । তবে, ফেরার সময় হলেই সব গুলিয়ে যায় । শেষে মাইকে হাঁক দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয় ঘরে । আয়েশা সিদ্দিকি । যাকে 'পাগল' তকমা দিয়ে আব্বা আম্মিও ছেড়ে গেছে । দাদি মর্জিনার কাছেই মানুষ আড়াই বছর থেকে । বয়সের ভার সামলাতে না পেরে নাতনিকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন মর্জিনা বিবি ।

জন্মানোর পর থেকে সুস্থই ছিল বহরমপুর ব্লকের জীবননগরের আয়েশা । আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই খাওয়াদাওয়া, খেলা, দুষ্টুমি করা, আম্মির কোলে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ানো, সবই ছিল স্বাভাবিক । আড়াই বছর বয়সে হঠাৎই খেতে খেতে পড়ে যায় মাটিতে । তারপর মাথায় চোট পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারায় । মুম্বই, বেঙ্গালুরু, মুর্শিদাবাদের বড় বড় হাসপাতালে দেখিয়েও কিছু হয়নি । আর্থিক অবস্থার জন্য পিছপা হতে হয়েছে । শেষে আয়েশার আব্বা-আম্মি রোজগারের টানে চলে গেছেন মুম্বইয়ে । আয়েশাকে রেখে গেছেন দাদির কাছে । বয়সের ভারে মর্জিনা বিবি সামলাতে পারেন না তাকে । তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেই লোকের বাড়ি বাড়ি অন্নের সন্ধানে যান । প্রতিবেশীরাও দু'মুঠো জোগান দিয়ে সাহায্য করে । মর্জিনা বিবির কথায়, "দিনে চার বার খায় আয়েশা । সকলে সাহায্য না করলে কী করে জোগাতাম ?" প্রতিবেশীদের সাহায্যেই আয়েশার খোঁজ পায় শিশু সুরক্ষা কমিটির এক মহিলা সদস্য । তাঁরই উদ্যোগে সাত বছর পর শিকল ছেড়ে মুক্তির স্বাদ পেল আয়েশা । চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হল হোমে ।

আয়েশার আব্বা রবিউল মুম্বইয়ে রিকশা চালান । আম্মি আলবু বিবি পরিচারিকার কাজ করেন । চার সন্তানের মধ্যে আয়েশাকে তাঁরা সামলাতে না পেরে ছেড়ে গেছেন দাদির কাছে । আয়েশার এক ভাইকেও অন্য এক সহৃদয় পরিবার দেখাশোনা করে । অর্থের অভাবে এই দুই সন্তানকে মানুষ করতে পারেননি । মর্জিনা বিবিও একই কথা জানান । ক্ষোভ উগরে দেন প্রশাসনের উপর । বলেন, "প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরলেও চিকিৎসা তো দূর, মেলেনি প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটও । তাই এই বয়সে হাল ছেড়ে দিয়েছি । ওকে সামলাতে শিকলই ছিল একমাত্র উপায় ।"

মুখে গোঁ গোঁ শব্দ, পায়ে শিকল আর উজ্জ্বল দু'টো চোখ । কী যেন বলতে চায় । তার ভাষা কেউ বোঝে না । মর্জিনা বিবির কথায়, "ওকে শিকল ছেড়ে রাখব কী করে ? সবসময় পালিয়ে যায় । আমার যা বয়স আর ছুটতে পারি না । ওকে নিয়ে গেলে, একটু চিকিৎসা হলে তো ওরও ভালো হয় ।" তবে, প্রশাসন নিতে আসলে দাদির নেওটা 13-র আয়েশা ছাড়তে চায় না তাঁকে । কোনও মতে নতুন জামা পরিয়ে মুক্তির স্বাদ দিয়ে হোমের উদ্দেশে রওনা দেয় সে । স্বাধীন হয়ে হাতে তুলে নেয় জাতীয় পতাকা । ঘটনার সাক্ষী থাকতে এলাকার প্রচুর লোক হাজির হয় তার বাড়িতে । আসেন পঞ্চায়েত প্রধান কবিতা সরকারও । আয়েশাকে মুক্ত দেখে তিনি আশ্বাস দেন, আগামী দিনে কোনও সমস্যা হলে প্রশাসন পাশে থাকবে । বলেন, "এতদিন পর্যন্ত ওর কোনও চিকিৎসা হয়নি । আমরা ওকে সুস্থ করার চেষ্টা করব । যতটা সম্ভব করব ওর জন্য ।"

দেখুন ভিডিয়ো
Intro:শিকল মুক্ত আয়েশা পেল মুক্তির স্বাদ। প্রশাসন নিল তার চিকিৎসার ভার। খুশি আয়েশার পরিবার। Body:বহরমপুর - প্রায় সাত বছর পর পায়ের শিকল খুলে দেওয়ায় মুক্তির স্বাদ পেল বছর তেরোর আয়েশা সিদ্দিকা। স্বাধীন হয়ে হাতে তুলে নিল জাতীয় পতাকা। বহরমপুর ব্লকের জীবননগরের আয়েশা এতদিন প্রশাসনের নজরের আড়ালেই বন্দিদশায় পড়েছিল। শিশু সুরক্ষা কমিটির এক মহিলার হস্তক্ষেপেই মুক্ত আয়েশা। কিন্তু এতদিন কেন প্রশাসনের নজরে আসেনি এই অমানবিক ঘটনা। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বুধবার আয়েশাকে মুক্ত করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেল ব্লক প্রশাসন। আপাতত তাকে হোমেই রাখা হবে। মাথা থেকে বিরাট বোঝা নেমে যাওয়ায় খুশি আয়েশার দাদি মর্জিনা বেওয়া। ছোট্ট নাতনিকে চোখের আড়ালে রাখতে বুক ফেটে যাচ্ছে মর্জিনার। আরোগ্য কামনায় চোখের জলেই প্রশাসনের হাতে তুলে দিলেন নাতনিকে।
আড়াই বছর বয়সে পাঁচিল থেকে পড়ে গিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারায় আয়েশা। বাবা রবিউল মুম্বাইয়ে রিক্সা চালান। মা আলবু বিবি পরের বাড়িতে কাজ করেন। প্রথমে ওঝা
, গুনিন তারপর বহু জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে কোন সুফল মেলেনি। দাদির কাছে আয়েশাকে রেখে বাবা মা উপার্জনের তাগিদে মুম্বাই পাড়ি দেন। নাতনিকে সামলাতে না পেরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন মর্জিনা বিবি। তিনি বলেন, খোলা পেলেই পালিয়ে যেত। মাইকিং করে খুঁজতে হত। বাধ্য হয়েই শিকল পড়িয়ে রেখেছিলাম। দীর্ঘ সাত বছর শিকলে বাঁধা অবস্থায় একটু একটু করে বেড়ে উঠেছে আয়েসা।
স্থানীয় শিশু সুরক্ষা কমিটির এক সদস্যের নজরে আসায় তিনিও বিডিও জানান। বহরমপুর ব্লক প্রশাসন এরপর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এদিন পাকাপাকিভাবে আয়েশাকে 'জঞ্জির' মুক্ত করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ায় খুশি মর্জিনা বেওয়া। তবু নাতনিতে ছাড়তে চোখের জল বাগ মানছে না। প্রতিবেশীরাও আশাবাদী, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আয়েশা সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরবে।Conclusion:এতদিন পর প্রশাসনের নজর ফেরায় প্রশ্ন প্রতিবেশীদের।
Last Updated : Aug 22, 2019, 1:08 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.