মালদা, 8 নভেম্বর: যুবকের প্রেমের প্রলোভনে স্বামীকে তালাক দিয়েছিলেন স্ত্রী । বিয়ের পরই পণপ্রথার শিকার হতে হল ওই যুবতিকে। পণ দিতে না-পারায় পরে ওই যুবকও তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। অবশেষে স্ত্রীর মর্যাদা ফিরে পাওয়ায় আশায় শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল ওই যুবতি। অভিযোগ, সারা রাত ওই যুবতিকে মারধর করে বিষ খাইয়ে খুন করা হয়েছে । ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রতুয়ায় । দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
মৃত যুবতির নাম বিউটি খাতুন (21) । বাড়ি রতুয়া থানার বাহারাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বাবলাবোনা এলাকায় । পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাত বছর আগে দেবীপুর এলাকার যুবক সফিকুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় বিউটির। সফিকুল ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের আড়াই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বছর খানেক আগে সফিকুল ভিনরাজ্যে কাজে থাকাকালীন স্থানীয় এক যুবক জিয়াউল রহমানের সঙ্গে পরিচিতি হয় বিউটির। ধীরে ধীরে জিয়াউলের প্রেমের ফাঁদে পা দিতে শুরু করেন তিনি ।
অভিযোগ, জিয়াউলের কথামতো মাস খানেক আগে স্বামীকে তালাক দিয়ে দেন বিউটি । এরপরেই ফের জিয়াউলকে বিয়ে করেন তিনি । কিন্তু জিয়াউলের পরিবারের লোকজন বিউটিকে বাড়িতে তুলতে রাজি হননি। তারা বিউটির পরিবারের কাছে 4 লক্ষ টাকা পণ দাবি করেন। সেই টাকা দিতে না-পারায় জিয়াউল একটি ভাড়া বাড়িতে বিউটিকে নিয়ে যান ৷ সেখানে প্রায় 15 দিন সংসার করেন তাঁরা ৷ এরপর জিয়াউল বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ।
তারপর থেকে আর জিয়াউলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না । অবশেষে গত সোমবার বিউটি জানতে পারেন জিয়াউল বাড়িতে ফিরে এসেছেন । এরপরই তিনি রাতে জিয়াউলের বাড়িতে যান । সেখানে বিউটিকে সারারাত মারধর করে সকালে বিষ খাইয়ে বাড়ির পাশের বাগানে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দারা বিউটিকে উদ্ধার করে প্রথমে রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে মালদা মেডিক্যালে ভরতি করেন । মেডিক্যালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বিউটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । এ নিয়ে গতকাল রাতেই জিয়াউল-সহ শ্বশুরবাড়ির 10 জন সদস্যের বিরুদ্ধে রতুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ।
বিউটির দাদা হুমায়ুন কবীরের কথায়, সাত বছর আগে বোনের বিয়ে হয় । ভালোভাবেই বোনেদের সংসার চলছিল । আড়াই বছর আগে বোনের একটি মেয়েও হয় । এরই মধ্যে ওই এলাকার এক ছেলে বোনকে প্রেমের প্রলোভনে ফেলে 1 লক্ষ 80 হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় । বোনকে বিয়ে করার কথা বলে স্বামীকে তালাক দিতে বলে । বোন সেই প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে মাস দেড়েক আগে স্বামীকে তালাক দিয়ে দেয় । এরপর বোন ওই ছেলেকে বিয়ে করে । কিন্তু বিয়ের পরই ওই ছেলের বাড়ির লোকজন 4 লক্ষ টাকা পণ দাবি করে । তখন বোন ও তার স্বামী ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করে । দিন পনেরো পরেই ওই ছেলে বোনকে ছেড়ে পালিয়ে যায় । খোঁজ পেতে বোন একাধিকবার থানায় যায় । কিন্তু তার খোঁজ পাওয়া যায়নি । অবশেষে গত পরশু বোন জানতে পারে ওই ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে । সেই খবর পেয়ে সেদিন রাতেই বোন ছেলের বাড়িতে যায় ।
আরও পড়ুন: পণের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা ! পলাতক স্বামী-সহ পরিবার
তাঁর অভিযোগ, "বোনকে সারারাত ধরে মারধর করা হয় । এমনকা পরেরদিন সকালেও মারধর করে বিষ খাইয়ে পাশের বাগানে ফেলে দেয় । স্থানীয় লোকজন বোনকে দেখতে পেয়ে রতুয়া হাসপাতালে নিয়ে যান । সেখান থেকে বোনকে মালদা মেডিক্যালে রেফার করা হয় । মেডিক্যালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা বোনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে আমরা বোনকে মারধরের একটি ভিডিয়োও পেয়েছি । সেই ভিডিয়ো-সহ সমস্ত ঘটনা জানিয়ে আমরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি । আমরা বোনকে খুনের ঘটনার বিচার চাই ।"