মালদা, 12 জুন : অন্যান্য দিনের মতো শনিবার সকালেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল রাজু ৷ বেরোনোর আগে নিজের টোটোটার সবকিছু ঠিক আছে কিনা, সেটাও দেখে নিয়েছিল ৷ কিন্তু কিছুদিন ধরেই তেমন রোজগার হচ্ছে না ৷ লোকজনও রাস্তায় তেমন নেই ৷ তবু প্রতিদিন টোটো নিয়ে বেরোয় সে ৷ দিন শেষে যা পকেটে ঢোকে, সবটাই বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয় ৷ রাজুর জানা নেই, আজ ওদের এই কাজের বিরুদ্ধেই সরব গোটা বিশ্ব ৷ কারণ, আজ বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস !
রাজু রবিদাস ৷ বয়স মাত্র 10 বছর ৷ পুরাতন মালদার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আদমপুর গ্রামে তার বাড়ি ৷ বাড়ির খানিকটা দূর দিয়েই গিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ৷ বাবা গোবিন্দ রবিদাস আমবাগানের শ্রমিক ৷ বাগানে জোগানদারের কাজ করেন তিনি ৷ মা আরতি রবিদাস গৃহবধূ ৷ বাবা-মা ছাড়াও বাড়িতে রয়েছেন ঠাকুমা ৷ রয়েছে এক দিদি, আর এক বোন ৷ গোবিন্দর একার উপার্জনে ছ’জনের সংসার চলছিল না ৷ তাই এদিক-ওদিক থেকে টাকা জোগাড় করে বছরখানেক আগে ন’বছরের ছেলেকে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড টোটো কিনে দেন তিনি ৷ নিজেই সেই টোটো চালাতে শেখান ছেলেকে ৷ তারপরই পথে নেমে পড়ে রাজু ৷ সওয়ারি বসিয়ে যখন ছোট্ট হাত দু’টো টোটোর হ্যান্ডেলে রাখে, তখন সে সংসারের প্রধান উপার্জনকারী !
রাজু জানিয়েছে, বাড়িতে ছ’জনের পেট ৷ বাবার রোজগারে সংসার চলে না ৷ তাই স্কুলে না গিয়ে টোটো চালায় সে ৷ দিনে শ’তিনেক টাকা হয়ে যায় ৷ কাজের পর সব টাকা বাবা-মাকে দিয়ে দেয় রাজু ৷ তাতে কিছুটা সুরাহা হয় ৷ রাজুর দাবি, ‘‘এখনও পর্যন্ত কেউ আমাকে ভাড়া নিয়ে ঠকায়নি ৷ পুলিশও কোনওদিন ধরেনি ৷ তবে গ্রামে আমার বয়সী আর কেউ টোটো চালায় না ৷’’ সে জানে, স্কুলে আর তার যাওয়া হবে না ৷ সংসারের জন্য টাকা রোজগার করতে হবে তাকে ৷ না হলে না খেয়ে অথবা আধপেটা থাকতে হবে সবাইকে ৷ সেটা তো হতে দেওয়া যায় না !
আরও পড়ুন : রিয়ানার বিরুদ্ধে ভারতে শিশুশ্রম করানোর অভিযোগ, উত্তাল সোশাল মিডিয়া
অভাবের তাড়নায় এমন অনেক রাজুই গোটা দেশের রাস্তায়, জমিতে কাজ করছে ৷ বিশেষ দিনগুলিতে এই রাজুদের নিয়ে অনেক কথা হয় ৷ সেমিনার, বক্তৃতা চলে ৷ কিন্তু তাতে দিনের শেষে পেটের ভাত মেলে না ৷ খিদের জ্বালা পেটে নিয়েই ঘুমোতে হয় অভাবী এই শিশুদের ৷ ভারতবর্ষের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে শিশুশ্রম কি আদৌ কোনওদিন বন্ধ হবে? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে ৷