মালদা, 2 জানুয়ারি : তাঁদের কেউ এমটেক, কেউ এমসিএ, এমনকি কয়েকজন পিএইচডিও করেছেন । তাঁরা এতদিন রাজ্য সরকারের কারিগরি শিক্ষা দফতরের অধীনে বিভিন্ন স্কুলে বৃত্তিমূলক বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা ল্যাবরেটরি সহায়ক পদে কাজ করছিলেন । কিন্তু, এখন তাঁদের অনেকেই কর্মহীন (Teachers Agitaion in Malda)। এর মূল কারণ, সরকারের তরফে তাঁদের যাবতীয় কাজকর্মের দায়দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি এজেন্সির হাতে । সেই এজেন্সিগুলি সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিলেও শিক্ষায় খরচ করছে না । এসবেরই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা (Vocational Teachers Not Getting Salary) ।
সমগ্র শিক্ষা অভিযানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন প্রকল্পে 2013 সাল থেকে সাধারণ বিষয়ের সঙ্গে 13টি বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষাদান করে আসছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। সারা রাজ্যে তাঁদের সংখ্যা 1472 জন । রাজ্যের 726টি সরকারি এবং সরকার পেষিত স্কুলে এই প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে রয়েছে মালদা জেলার 50টি স্কুলও। এই প্রকল্প পরিচালিত হয় রাজ্য সরকারের কারিগরি দফতরের তরফে । কিন্তু সেই দফতর কিছু বেসরকারি এজেন্সির হাতে এই প্রকল্পের বরাত তুলে দেয়। তার পর থেকেই প্রবল সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষকরা । তাঁদের অভিযোগ, এই এজেন্সিগুলি সরকারি শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে । তাঁদের নির্দিষ্ট সময় বেতন দিচ্ছে না । বেতন চাইতে গেলে তাঁদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে । দূরের জায়গায় বদলি করে দেওয়া হচ্ছে । এমনকি তাঁদের ছাঁটাইয়ের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে । যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গোটা দেশজুড়ে সরকারি ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন, তখন তাঁর রাজ্যেই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে । কারিগরি দফতর সব জেনেও ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে রয়েছে।
আরও পড়ুন : Visva-Bharati University : শিক্ষক দিবসে উপাচার্যকে ফুলের তোড়া পাঠিয়ে শ্রদ্ধা আন্দোলনরত পড়ুয়াদের
এপ্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ ভৌমিক বলেন, “দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলি যে সরকারি শিক্ষায় বেসরকারিকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে কোনও দ্বিমত নেই । তার জন্য তারা যে কোনও উপায়ে আমাদের হেনস্তা করছে। গত 27 অক্টোবর পিরোজপুর ইউথ ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট নামে এক এজেন্সি এই ব্যবস্থায় অতিরিক্ত নিয়োগ দেখিয়ে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টকে ছাঁটাই করেছে । অথচ পরে তারাই নতুন নিয়োগের নোটিশ দিয়েছে । আসলে স্কুলগুলিতে থাকা পরিকাঠামো নষ্ট করার পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতনের টাকা লুট করাই এদের উদ্দেশ্য । ব্যবসার স্বার্থে এরা সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে । এসবের বিরুদ্ধেই আমরা আজ আন্দোলনে নেমেছি ।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘ এর পিছনে রয়েছে সরকার নিযুক্ত এজেন্সিগুলির দৌরাত্ম্য । আমাদের দাবি, শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ বন্ধ করে ছাঁটাই হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের পুনর্বহাল করতে হবে । আমাদের 60 বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে । তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মানবিক মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সমস্যার কোনও সুরাহা করছেন না ।”
আরও পড়ুন : Primary Recruitment : প্রাথমিকে থমকে নিয়োগ, মালদায় বিক্ষোভ চাকরিপ্রার্থীদের
নিজেদের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন মণিবালা মালাকার । তিনি বলেন, “গত ২৭ অক্টোবর থেকে আমাদের চাকরি চলে গিয়েছে । তারপর থেকে আর কিছুই হয়নি । আমি পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এখানে এসেছি । এখন নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে । আমাদের বসিয়ে নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে কেন ? এমরা কি এভাবেই রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মরব ? দিদি কি আমাদের দিকে দেখবেন না ? দিদির কাছে প্রার্থনা করছি, আমাদের দিকে একটু দেখুন ।”