ETV Bharat / state

Drinking Water Crisis in Malda: তিন বছর ধরে পানীয় জল থেকে ব্রাত্য গ্রাম, পঞ্চায়েত সদস্যের আবেদনেও মেলেনি সুরাহা

author img

By

Published : Mar 18, 2023, 1:03 PM IST

পঞ্চায়েতে রাজনীতির প্যাঁচ পয়জার ৷ তিন বছর ধরে পানীয় জলহীন গোটা গ্রাম (Drinking Water Crisis) ৷ পঞ্চায়েত সদস্যের আবেদনে সারা দেয়নি কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ ৷ তার জেরে এখনও সুরাহা হয়নি সমস্যার ৷

Drinking Water problem
পানীয় জল
তিন বছর ধরে পানীয় জল থেকে ব্রাত্য গ্রাম

মালদা, 18 মার্চ: পঞ্চায়েতে রাজনীতির প্যাঁচ ৷ তার জেরে অন্তত তিন বছর ধরে পানীয় জল থেকে ব্রাত্য গ্রামের মানুষ ৷ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ৷ তাতেও কাজ হয়নি ৷ রাজনীতির জটিলতায় বেশ কয়েকটি গ্রামে জলকষ্ট যে রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন খোদ পঞ্চায়েত প্রধানও ৷ ঘটনাটি পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৷ রাজনীতির জটিলতায় পানীয় জল নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় দক্ষিণ ভাটরা গ্রাম (Villagers not getting drinking water for last three years) ৷

শ’সাতেক বাসিন্দার অধিকাংশই আদিবাসী ৷ গ্রামের মূল অর্থনীতি কৃষিকাজ ৷ পানীয় জলের জন্য একসময় গ্রামে একটি সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়েছিল পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ৷ পাম্পের উপর বসানো হয়েছিল জলাধার ৷ এমনকী গ্রামে 11টি সরকারি নলকূপও ছিল ৷ কিন্তু তিন বছর ধরে সেসব খারাপ ৷ কোনওটিই আর ঠিক হয়নি ৷ গরিব গ্রামবাসীদের পক্ষে সেসব ঠিক করাও সম্ভব নয় ৷ তাই কয়েক কিলোমিটার হেঁটে অন্য গ্রাম থেকে তাঁদের পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে ৷ নয়তো চাষের মাঠে কেউ সাবমার্সিবল পাম্প চালালে সেখান থেকে তাঁরা জল নিয়ে আসছেন ৷ এদিকে খরা মরশুম চলে এসেছে ৷ পানীয় জলের সংকট মেটাতে তাঁরা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন ৷ পঞ্চায়েত সদস্য বিষয়টি জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষকে ৷ কাজ হচ্ছে না ৷ কবে হবে, সেটাও কেউ জানে না ৷

গ্রামবাসী চাঁদমণি কিস্কু বলছেন, "তিন বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই ৷ অনেক দূর থেকে পানীয় জল আনছি ৷ অন্য গ্রামের মানুষ আমাদের জল দিতে চায় না ৷ বলে, আমরা যেন গ্রামের মার্শাল ঠিক করে নিই ৷ এক গ্রামবাসী নিজের জমিতে জল দেওয়ার জন্য পাম্প বসিয়েছে ৷ সে যখন জমিতে জল দেয়, তখন মাঝেমধ্যে সেখান জল নিয়ে আসি ৷ পাম্পটা ঠিক করে দেওয়ার জন্য নেতাদের বারবার বলছি ৷ কিন্তু ওরা শুধু ভোট নিয়ে চলে যায় ৷ আমরা গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা চাই ৷"

আরেক গ্রামবাসী সন্তোষ কিস্কুও জানান, গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা না-থাকায় তিন বছর ধরে মহিলাদের দূর থেকে তা নিয়ে আনতে হয় ৷ অন্য গ্রামের বাসিন্দারা তাদের পাম্প থেকে আর জল দিতে চায় না ৷ তারা বিদ্যুতের বিল দাবি করছে ৷ গ্রামের দু’একজনের জমিতে পাম্প রয়েছে ৷ তবে তারা জমিতে জল দিলে তবেই সেখান থেকে জল পাওয়া যায় ৷ সবসময় পাওয়া যায় না ৷ তাদের পঞ্চায়েত সদস্য গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন ৷ কিন্তু তিনি কংগ্রেসের সদস্য ৷ হয়তো সেকারণেই তাঁর কথায় কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না ৷

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তনুজা রায়ের বক্তব্য, এই গ্রামে একটি জলাধারের সঙ্গে 11টি নলকূপও ছিল ৷ সবই খারাপ হয়ে গিয়েছে ৷ পঞ্চায়েতকে অনেকবার জানিয়েছেন তিনি ৷ কিন্তু কাজ হয়নি বলে তাঁর দাবি ৷ খরার মরসুম চলে এসেছে ৷ এখন মানুষের খুব কষ্ট ৷ গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা হলে তাদের খুব ভালো হয় বলে তনুজা জানান ৷ তিনি বলেন, "আমি বিরোধী দলের সদস্য বলেই হয়ত এখানে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না ৷ এর আগে পাম্প সংস্কারের ভুয়ো বিল দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল ৷ বিষয়টি বিডিওকে জানিয়েছিলাম ৷ তিনিও কিছু করেননি ৷ এর জন্য আমি গ্রামবাসীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ৷"

শুধু দক্ষিণ ভাটরাই নয়, সাহাপুর পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে পানীয় জলের যে চরম সমস্যা রয়েছে তা মেনে নিচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান অনেককুমার ঘোষও ৷ তিনি জানান, বছর চারেক আগে দক্ষিণ ভাটরা-সহ কয়েকটি গ্রামের সাবমার্সিবল পাম্প বিকল হয়ে গিয়েছিল ৷ সেই সময় পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে ছিল ৷ তিনি সেই সময় বিকল পাম্প মেরামতির জন্য অনেকবার তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তিনি কোনও গুরুত্ব দেননি ৷ তিনি বছরখানেক আগে প্রধান হয়েছেন ৷ প্রধান হওয়ার পরেই তিনি এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানান ৷

অনেককুমার ঘোষ বলেন, "দক্ষিণ ভাটরার পঞ্চায়েত সদস্য আমার কাছে পাম্প মেরামতের আবেদন করেছিলেন ৷ কিন্তু বিরোধীরা আমাকে সেই কাজ করতে দেয়নি ৷ আসলে এই পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের হলেও সঞ্চালক এখনও বিজেপির ৷ অর্থ কমিটিও আমাদের হাতে নেই ৷ বিরোধীরা সাহায্য করলে আমি 5-7 দিনের মধ্যে প্রতিটি গ্রামের জলকষ্ট দূর করে দেব ৷"

আরও পড়ুন: কল আছে জল নেই, তীব্র পানীয়জল সংকটে উত্তর দিনাজপুর

তিন বছর ধরে পানীয় জল থেকে ব্রাত্য গ্রাম

মালদা, 18 মার্চ: পঞ্চায়েতে রাজনীতির প্যাঁচ ৷ তার জেরে অন্তত তিন বছর ধরে পানীয় জল থেকে ব্রাত্য গ্রামের মানুষ ৷ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ৷ তাতেও কাজ হয়নি ৷ রাজনীতির জটিলতায় বেশ কয়েকটি গ্রামে জলকষ্ট যে রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন খোদ পঞ্চায়েত প্রধানও ৷ ঘটনাটি পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৷ রাজনীতির জটিলতায় পানীয় জল নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় দক্ষিণ ভাটরা গ্রাম (Villagers not getting drinking water for last three years) ৷

শ’সাতেক বাসিন্দার অধিকাংশই আদিবাসী ৷ গ্রামের মূল অর্থনীতি কৃষিকাজ ৷ পানীয় জলের জন্য একসময় গ্রামে একটি সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়েছিল পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ৷ পাম্পের উপর বসানো হয়েছিল জলাধার ৷ এমনকী গ্রামে 11টি সরকারি নলকূপও ছিল ৷ কিন্তু তিন বছর ধরে সেসব খারাপ ৷ কোনওটিই আর ঠিক হয়নি ৷ গরিব গ্রামবাসীদের পক্ষে সেসব ঠিক করাও সম্ভব নয় ৷ তাই কয়েক কিলোমিটার হেঁটে অন্য গ্রাম থেকে তাঁদের পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে ৷ নয়তো চাষের মাঠে কেউ সাবমার্সিবল পাম্প চালালে সেখান থেকে তাঁরা জল নিয়ে আসছেন ৷ এদিকে খরা মরশুম চলে এসেছে ৷ পানীয় জলের সংকট মেটাতে তাঁরা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন ৷ পঞ্চায়েত সদস্য বিষয়টি জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষকে ৷ কাজ হচ্ছে না ৷ কবে হবে, সেটাও কেউ জানে না ৷

গ্রামবাসী চাঁদমণি কিস্কু বলছেন, "তিন বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই ৷ অনেক দূর থেকে পানীয় জল আনছি ৷ অন্য গ্রামের মানুষ আমাদের জল দিতে চায় না ৷ বলে, আমরা যেন গ্রামের মার্শাল ঠিক করে নিই ৷ এক গ্রামবাসী নিজের জমিতে জল দেওয়ার জন্য পাম্প বসিয়েছে ৷ সে যখন জমিতে জল দেয়, তখন মাঝেমধ্যে সেখান জল নিয়ে আসি ৷ পাম্পটা ঠিক করে দেওয়ার জন্য নেতাদের বারবার বলছি ৷ কিন্তু ওরা শুধু ভোট নিয়ে চলে যায় ৷ আমরা গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা চাই ৷"

আরেক গ্রামবাসী সন্তোষ কিস্কুও জানান, গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা না-থাকায় তিন বছর ধরে মহিলাদের দূর থেকে তা নিয়ে আনতে হয় ৷ অন্য গ্রামের বাসিন্দারা তাদের পাম্প থেকে আর জল দিতে চায় না ৷ তারা বিদ্যুতের বিল দাবি করছে ৷ গ্রামের দু’একজনের জমিতে পাম্প রয়েছে ৷ তবে তারা জমিতে জল দিলে তবেই সেখান থেকে জল পাওয়া যায় ৷ সবসময় পাওয়া যায় না ৷ তাদের পঞ্চায়েত সদস্য গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন ৷ কিন্তু তিনি কংগ্রেসের সদস্য ৷ হয়তো সেকারণেই তাঁর কথায় কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না ৷

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তনুজা রায়ের বক্তব্য, এই গ্রামে একটি জলাধারের সঙ্গে 11টি নলকূপও ছিল ৷ সবই খারাপ হয়ে গিয়েছে ৷ পঞ্চায়েতকে অনেকবার জানিয়েছেন তিনি ৷ কিন্তু কাজ হয়নি বলে তাঁর দাবি ৷ খরার মরসুম চলে এসেছে ৷ এখন মানুষের খুব কষ্ট ৷ গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা হলে তাদের খুব ভালো হয় বলে তনুজা জানান ৷ তিনি বলেন, "আমি বিরোধী দলের সদস্য বলেই হয়ত এখানে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না ৷ এর আগে পাম্প সংস্কারের ভুয়ো বিল দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল ৷ বিষয়টি বিডিওকে জানিয়েছিলাম ৷ তিনিও কিছু করেননি ৷ এর জন্য আমি গ্রামবাসীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ৷"

শুধু দক্ষিণ ভাটরাই নয়, সাহাপুর পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে পানীয় জলের যে চরম সমস্যা রয়েছে তা মেনে নিচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান অনেককুমার ঘোষও ৷ তিনি জানান, বছর চারেক আগে দক্ষিণ ভাটরা-সহ কয়েকটি গ্রামের সাবমার্সিবল পাম্প বিকল হয়ে গিয়েছিল ৷ সেই সময় পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে ছিল ৷ তিনি সেই সময় বিকল পাম্প মেরামতির জন্য অনেকবার তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তিনি কোনও গুরুত্ব দেননি ৷ তিনি বছরখানেক আগে প্রধান হয়েছেন ৷ প্রধান হওয়ার পরেই তিনি এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানান ৷

অনেককুমার ঘোষ বলেন, "দক্ষিণ ভাটরার পঞ্চায়েত সদস্য আমার কাছে পাম্প মেরামতের আবেদন করেছিলেন ৷ কিন্তু বিরোধীরা আমাকে সেই কাজ করতে দেয়নি ৷ আসলে এই পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের হলেও সঞ্চালক এখনও বিজেপির ৷ অর্থ কমিটিও আমাদের হাতে নেই ৷ বিরোধীরা সাহায্য করলে আমি 5-7 দিনের মধ্যে প্রতিটি গ্রামের জলকষ্ট দূর করে দেব ৷"

আরও পড়ুন: কল আছে জল নেই, তীব্র পানীয়জল সংকটে উত্তর দিনাজপুর

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.