মালদা, 29 মার্চ: অঙ্গনওয়াড়ি থেকে দেওয়া হয়েছিল পচা ডিম ৷ এ নিয়ে গতকালই বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা ৷ বুধবার তাঁদের ক্ষোভের বারুদে আগুন ধরল, ওই পচা ডিম খেয়ে দুই শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ায় (Students Fell Ill Eating Rotten Egg at Anganwadi Centre) ৷ ঘটনার তদন্তে আজ গ্রামে অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার গেলে কর্মী এবং রাঁধুনির সঙ্গে তাঁকেও তালাবন্দি করে দিলেন ক্ষিপ্ত অভিভাবকরা ৷ শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সিডিপিও ৷
মহেন্দ্রপুর গ্রামের 3 নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা বিনতি দাসের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের ৷ অভিযোগ, তিনি নাকি বাচ্চা ও প্রসূতিদের সঠিক খাবার দেন না ৷ বাচ্চাদের পড়াশোনাও করান না ৷ এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা ৷ যদিও বিনতিদেবীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের ৷
গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ হারুন রশিদ অভিযোগ করেছেন, গতকাল সেন্টার থেকে পচা ডিম দেওয়া হয়েছিল ৷ তাঁরা প্রথমে সেটা বুঝতে পারেননি ৷ সেন্টারে বাচ্চাদের বসিয়ে সেই ডিম খাওয়ানো হয় ৷ কিন্তু, তাঁর নাতনি সেই ডিম নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল ৷ হারুন রশিদ সেই ডিম তাকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন ৷ তবে, তখনও ডিম পচা তা তিনি বুঝতে পারেননি ৷ কিন্তু, তাঁর নাতনি সেই ডিম খেতেই তার ভিতর থেকে জল বেরিয়ে আসে বলে অভিযোগ করেছেন হারুন রশিদ ৷ তিনি তৎক্ষণাত ডিমটা নাতনির হাত থেকে নিয়ে নেন ৷ কিন্তু, যেটুকু ডিম বাচ্চাটির পেটে যায়, তাতেই বিকেলের পর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে ৷
আরেক অভিভাবক হাসেদুল ইসলামেরও একই অভিযোগ ৷ তিনিও জানান, গতকাল অঙ্গনওয়াড়ি থেকে সবাইকে পচা ডিম দেওয়া হয়েছিল ৷ তাঁর মেয়েও সেই ডিম পেয়েছিল ৷ তাঁরা গতকালই সেন্টারের কর্মীকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী জানিয়ে দেন, ওই ডিমই নিতে হবে ৷ ওই ডিম খেয়ে গ্রামের দু’টি বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৷ অভিযোগ সুপারভাইজারকে আগেও অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল ৷ কিন্তু, কোনও বারই পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি ৷ এ দিন সুপারভাইজার স্কুলে গেলে, তাঁকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সঙ্গে একটি ঘরে তালাবন্দি করে দেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ৷
আরও পড়ুন: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবারে পচা ডিম, বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের
খবর পেয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পৌঁছান সিডিপিও আবদুল সাত্তার ৷ তিনি জানিয়েছেন, গ্রামবাসী এবং পড়ুয়াদের মায়েদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন ৷ ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের অন্যত্র বদলি করার কথা জানিয়েছেন তিনি ৷ তাঁদের বদলে আগামিকাল থেকে অন্য কর্মীরা সেখানে পরিষেবা দেবেন ৷ আর স্কুলে পুরো সপ্তাহে কোনদিন কী কী খাবার দেওয়া হবে, সেই তালিকাও টাঙিয়ে দিয়েছেন সিডিপিও ৷
আর তালাবন্দি অবস্থায় সুপারভাইজার রুমি মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দফতরের নির্দেশে আজ আমি এখানে তদন্ত করতে এসেছিলাম ৷ শুনলাম, সেন্টার থেকে দেওয়া ডিম বাচ্চারা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খেয়েছিল ৷ খারাপ বুঝতে পেরেও অভিভাবকরা বাচ্চাদের হাত থেকে ডিম নিয়ে নেননি ৷ গতকালের ঘটনা শুনতে আজ আমি এসেছিলাম ৷ কিন্তু আমার কোনও কথা না শুনে গ্রামবাসীরা আমাকে তালাবন্দি করে রেখেছেন ৷’’