মালদা, 7 সেপ্টেম্বর : চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে জলাভূমি ভরাট করে মানুষের থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ তুললেন ভাইস চেয়ারম্যান ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন দলীয় কাউন্সিলররা ৷ তারই মধ্যে চেয়ারম্যান নীহার রঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগ তুলে সরব হলেন দুলাল সরকার ৷ পাশাপাশি তিনি পৌরসভার 3 নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন ৷
ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার বলেন, " পৌরসভায় এসে একটি চিঠি হাতে পাই ৷ সেই চিঠি থেকে জানতে পারি, ওই ওয়ার্ডের কিছু জায়গা সরকারি কর্মী ও স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রতিনিধিরা মাপজোক করে কিছু মানুষকে পাট্টা দেবেন বলে প্রত্যেককে 7 হাজার টাকা করে জমা করতে বলেছেন৷ যা কাউন্সিলর করতে পারেন না৷ স্থানীয় মানুষজন এ নিয়ে গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি চিঠি পৌরসভায় জমা দিয়েছেন৷ তাঁরা অভিযোগ করেছেন, ওই ওয়ার্ডে একটি জলাভূমি ভরাট করে সেই জায়গা কিছু মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি মাপজোক করা হচ্ছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী গ্রিনসিটি প্রকল্পের আওতায় এই শহরে বেশকিছু পার্ক তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন৷ কিন্তু জায়গার অভাবে টেন্ডার হওয়া সত্ত্বেও সেসব পার্ক তৈরি করা যাচ্ছে না৷ 3 নম্বর ওয়ার্ডেও একটি পার্কের অনুমোদন রয়েছে৷ সেখানে জায়গা না থাকায় ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেলের জায়গা দেখিয়ে সেখানে পার্ক তৈরির চেষ্টা করেন৷ রেলের বাধায় সেখানে পার্ক করা যায়নি ৷ সেখানে জলাভূমি বুজিয়ে মানুষকে পাট্টা দেওয়ার প্রসঙ্গ আসছে কী করে বুঝতে পারছি না৷ আর পৌরসভার জমি থাকলেও তাতে পাট্টা দেওয়ার অধিকারী ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিভাগ৷ কোনও তদন্ত না করে কাউকে আমরা পাট্টা প্রদানের অনুমোদন করতে পারি না৷ তার উপর পৌর এলাকায় কাউকে পাট্টা দিতে গেলে বোর্ড অফ কাউন্সিলর্সের অনুমোদন প্রয়োজন৷ অথচ বোর্ড অফ কাউন্সিলর্সের সভার অনুমোদন না নিয়েই চেয়ারম্যান এই জমির পাট্টা বিলির নির্দেশ জারি করেছেন৷ যাদের পাট্টা দেওয়া হবে, তাদের কাছ থেকে 7 থেকে 10 হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে৷ কে টাকা নিচ্ছে তাও বোঝা যাচ্ছে না৷ এভাবে টাকা নেওয়া যায় কি না জানি না৷ তবে BOC ভাবলে কাউকে সরকারি জমির পাট্টা দিতে পারে৷ যদিও সেটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ 3 নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের চিঠি পাওয়ার পর চেয়ারম্যানের জারি করা এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছি৷ "
এ বিষয়ে 3 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরি বলেন, " পৌরসভায় এসে শুনতে পেলাম ভাইস চেয়ারম্যান পাট্টা সংক্রান্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশিকা বাতিল করেছেন৷ মাস সাতেক আগে এ নিয়ে বোর্ড অফ কাউন্সিলর্সের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল৷ সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই চেয়ারম্যান এই প্রস্তাব অনুমোদন করেন৷ এটা পৌরসভারই জায়গা৷ সেখানে প্রায় 40 বছর ধরে বেশকিছু পরিবার বাস করছে৷ তাদের পাট্টা হয়নি৷ BOC-তে পাশ হয়ে যাওয়া কোনও সিদ্ধান্ত বাতিল করা যায় না৷ পাট্টা প্রাপকরা, ইতিমধ্যে পৌরসভায় এসে সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়েছেন৷ এখন টাকা জমা দেওয়ার কাজটাই বাকি রয়েছে৷ " এদিকে কলকাতা থেকে চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ জানান, 3 নম্বর ওয়ার্ডে পাট্টা প্রদান নিয়ে কোনও বেআইনি কাজ করা হয়নি৷ সব কিছু আইন মেনেই হয়েছে৷ তিনি মালদা ফিরে এই বিষয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলবেন ৷
আরও পড়ুন : নিজের বিরুদ্ধে তদন্তকে স্বাগত, অনাস্থা নিয়ে 'স্বস্তি'-তে নীহাররঞ্জন
চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে দলীয় কাউন্সিলরদের আনা অনাস্থা ঘিরে ডামাডোল চলছে ইংরেজবাজার পৌরসভায়৷ সমস্যা মেটাতে পৌর নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক গোলাম রব্বানি ও জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুরের উপস্থিতিতে কলকাতায় বৈঠকও করা হয় ৷ দীর্ঘদিন পৌরসভায় BOC ও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের বৈঠক না হওয়ায় বিভিন্ন কাজ স্থগিত রয়েছে৷ BOC-র অনুমোদন ছাড়াই চেয়ারম্যান কিছু কাজের আনুমোদন দেন, যা বেআইনি ৷ এজন্য পৌরমন্ত্রী নির্দেশ দেন, চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলরদের নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যানকে বৈঠক করে আগামীতে যে কোনও কাজ করতে হবে৷ সেই বৈঠক অবশ্য এখনও হয়নি৷ তারমধ্যেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হলেন ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার৷ এই ঘটনার পর চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সম্পর্কের ফাটল আরও বাড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷