মালদা, 31 জুলাই : ফের প্রকাশ্যে জেলা তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভার বর্তমান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের প্রকাশ্য বাদানুবাদে গতকাল উত্তেজনা ছড়ায় পৌরভবনে ৷ জেলার দুই তৃণমূল নেতা, পৌরসভার প্রাক্তন ও বর্তমান চেয়ারম্যানের এই বাদানুবাদের কথা স্বীকার করেছেন পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যানও ৷
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে প্রাক্তন চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি পৌরসভায় শহরের আবর্জনা নিয়ে অভিযোগ জানাতে আসেন ৷ সেই সময় বর্তমান চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ, ভাইস চেয়ারম্যানের ঘরে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন ৷ নীহারবাবুকে নিজের কক্ষে না পেয়ে কৃষ্ণেন্দুবাবু তাঁর অভিযোগ নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যানের ঘরে যান ৷ একে অপরের মুখোমুখি হতেই নীহারবাবু ও কৃষ্ণেন্দুবাবুর মধ্যে শুরু হয়ে যায় তুমুল বাদবিতণ্ডা ৷ দুই নেতার সংঘাত যাতে হাতাহাতিতে পরিণত না হয়, তার জন্য এগিয়ে আসেন ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার সহ উপস্থিত অন্য কাউন্সিলররা ৷
ঘটনা প্রসঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, "আমি কয়েকদিন ধরে দেখছি, আমার বাড়ির সামনে ও পার্শ্ববর্তী মন্দিরের সামনের অংশ আবর্জনায় ভরে রয়েছে ৷ এলাকা দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না ৷ পার্শ্ববর্তী লোকজন আমার কাছে অভিযোগ জানান ৷ আমি পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার ফোন করলেও কেউ আমার ফোন ধরেনি ৷ সকাল 9টায় পৌরসভায় গিয়ে দেখি সমস্ত দপ্তর বন্ধ ৷ পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান বাজেট মিটিং, বোর্ড মিটিং কিছুই ডাকেন না ৷ শুধু তাই নয়, আমার ওয়ার্ড থেকে কোনও নাগরিক যদি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ নিয়ে যান, তবে তিনি গুরুত্ব দেন না ৷ পৌরসভা থেকে তাড়িয়ে দেন ৷ আমি ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে গেছিলাম ৷ সেখানে আমি নিজের অভিযোগ তুলতেই উনি চেঁচিয়ে ওঠেন ৷ আমি 4 দফায় এই পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলাম ৷ কখনও দেখিনি, রাত 9টায় পৌরসভায় গোল বৈঠক হচ্ছে ৷ আর যারা সেই বৈঠকে থাকে, তারা সবাই বহিরাগত ৷ পৌরসভার কেউ নয় ৷ সমস্ত ঘটনা আমি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি ৷"
নীহারবাবুর অভিযোগ, "আমি ভাইস চেয়ারম্যানের ঘরে কাউন্সিলরদের সঙ্গে শহরের আবর্জনা সাফাই নিয়ে আলোচনা করছিলাম ৷ সেই সময় সেখানে প্রাক্তন চেয়ারম্যান হাজির হন ৷ আমার মুখোমুখি হতেই উনি যে ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন, তাতে ওনাকে প্রাক্তন মন্ত্রী বলতে আমার ঘৃণা হচ্ছে ৷ এমন কী উনি আমাকে ধাক্কাও মেরেছেন ৷ উপস্থিত কাউন্সিলররা সমস্ত ঘটনা দেখেছেন ৷ তবে এনিয়ে থানায় অভিযোগ জানাব না ৷ হাতে চুড়ি পরে নয়, মাথা উচুঁ করে রাজনীতি করছি ৷ উনি সমস্ত ঘটনা সাজিয়ে বলছেন ৷ আমি সত্যি ছাড়া মিথ্যে কথা বলি না ৷ আর উনি মিথ্যা ছাড়া সত্য কথা বলতে পারেন না ৷"
নীহারবাবু আরও বলেন, "উনি যেভাবে একজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে আচরণ করেছেন সেটা পৌরসভার ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকবে৷ উনি অভিযোগ করছেন, পৌরসভা রাত 9টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ৷ আমি পৌরসভা থেকে টাকা উপার্জন করতে রাতে কাজ করছি না ৷ গত দু'বছর ধরে আমি চেয়ারম্যানের পদে রয়েছি ৷ তদন্ত হোক ৷ দুর্নীতি কে করেছে ধরা পড়ে যাবে ৷ এর আগে কোটি কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে এই পৌরসভা থেকে ৷ সাধারণ মানুষের পাশে থাকার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওনাকে সরিয়ে আমাকে এই চেয়ারে বসিয়েছেন ৷"
গোটা ঘটনায় পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার বলেন, "প্রাক্তন পৌরপ্রধান আজ আবর্জনা সাফাই নিয়ে নিজের অভিযোগ জানাতে পৌরসভায় এসেছিলেন ৷ সকাল 9টায় তিনি নাকি জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত কর্মীদের কাউকে দেখতে পাননি ৷ তাঁরা নাকি ওনার ফোনও ধরেননি ৷ এনিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার এবং অন্য কাউন্সিলরদের আলোচনা চলছিল ৷ সেই সময় প্রাক্তন চেয়ারম্যান আমার ঘরে আসেন ৷ তিনি সেই একই অভিযোগ করেন ৷ তার সঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, উনি এখানে কী করছেন? এনিয়ে দু'জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় ৷ সামান্য উত্তেজনা সৃষ্টি হয়৷ তবে দু'জনের মধ্যে কোনও হাতাহাতি হয়নি ৷ উপস্থিত কাউন্সিলররা তা হতে দেননি ৷"