মালদা, 2 জুলাই : দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কার করা হল জেলা বিজেপির দুই নেতা সঞ্জিৎ মিশ্র ও নিতাই মণ্ডলকে । গতকাল রাতে রাজ্য বিজেপির শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । দুই নেতার বহিষ্কারের নির্দেশ ইতিমধ্যে দলের জেলা সভাপতিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন বহিষ্কৃত নেতা সঞ্জিৎ মিশ্র । তিনি দলের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও তোপ দাগতে ছাড়েননি।
সঞ্জিৎ মিশ্র মালদা জেলায় গেরুয়া শিবিরে পরিচিত নাম । 2019-র লোকসভা নির্বাচনে তিনি মালদায় জেলা বিজেপির সভাপতি ছিলেন । এখনও এই জেলায় তাঁর প্রচুর অনুগামী রয়েছেন । জেলা সভাপতি থাকাকালীনই দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করায় লোকসভা ভোটের পরে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল । তারপর চলতি বছরের মার্চে সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁকে আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় । তবে, ফিরে আসার জন্য তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনাও করতে হয় ।
বিজেপির অভিযোগ, প্রত্যাবর্তনের পরেও দল বিরোধী কাজ করে যাচ্ছিলেন সঞ্জিৎ । বিধানসভা নির্বাচনে জেলার একাধিক কেন্দ্রে বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থী দাঁড় করান তিনি । দলের জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আড়ালে প্রচার চালাচ্ছিলেন তিনি । জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংগঠনিক সভায় মালদা এলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হয় । এমনকি সঞ্জিতের বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণও তাঁকে দেখানো হয় । তারই ভিত্তিতে দলের রাজ্য শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । একইভাবে বিধানসভা নির্বাচনে পুরনো মালদার দলীয় প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহার উপর গুলি চালানোর ঘটনায় ৩০ নম্বর জেলা পরিষদ মণ্ডল সভাপতি নিতাই মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ । এখনও তিনি জেল হেফাজতে । তাঁকেও গতকাল দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে । দু'টি বহিষ্কারের চিঠিতেই স্বাক্ষর রয়েছে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ।
আরও পড়ুন : শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার ইঙ্গিত কাকলির
বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল জানান, গতকাল গভীর রাতে তিনি দলের এই সিদ্ধান্ত জানতে পেরেছেন । তিনি বলেন, "গতকাল দলের রাজ্য শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি সঞ্জিৎ মিশ্র ও নিতাই মণ্ডলকে বহিষ্কার করেছে । সঞ্জিৎবাবুকে এর আগেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল । পরে তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় । কিন্তু তিনি ক্রমাগত দলবিরোধী কাজ করে যাচ্ছিলেন । সেই কারণে তাঁকে আবার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে । অন্যদিকে ৩০ নম্বর জেলা পরিষদ মণ্ডল সভাপতি নিতাই মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুরাতন মালদার দলীয় প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহার উপর গুলি চালনার ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল । পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করে । পরে দলের তরফে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে রাজ্য কমিটি তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।"
এদিকে বহিষ্কৃত হয়েই দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন সঞ্জিৎ মিশ্র । তিনি বলেন, "সভ্য সমাজে এ ভাবে যে কোনও বিচার হয়, তা জানা ছিল না। গতকাল হঠাৎ শুনলাম, আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দু’মাস আগে কেন আমাকে দলে ফেরানো হল, কেনই বা বহিষ্কার করা হল, জানি না । বহিষ্কারের চিঠি হাতে পেলে সেসব জানতে পারব । কিন্তু দল বিরোধী কাজ কাকে বলে, তা জানার ইচ্ছে রয়েছে । দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে কাজ করাকেই সাধারণত দল বিরোধী কাজ বলা হয় । কিন্তু যখন আমি দলেই ছিলাম না, তখন আমি দল বিরোধী কাজ করি কী ভাবে ? মার্চের শেষে সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে বৈঠক শেষে আমি দলের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলিনি । এটা ঠিক, বিধানসভা নির্বাচনে আমার ৭-৮ জন অনুগামী নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন । তাঁরা ভেবেছিলেন, আমি ভোটে তাঁদের সাহায্য করব, কিন্তু দল আমাকে ফিরিয়ে নেওয়ার পর আমি তাঁদের কোনও সাহায্য করিনি । আর ওই ঘটনার পরেই তো আমাকে দলে ফেরানো হয়েছিল ! এটা স্বৈরাচারী শাসনের লক্ষণ । যাঁরা এখন দলের মাথায়, তাঁদের গণতান্ত্রিক চেতনাটাই নেই । এরা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে । আমি মনে করি, যাঁরা আমাকে বহিষ্কার করেছেন, আমার বিচার করার যোগ্যতাই তাদের নেই । আসলে এখন বিজেপির পদ মানেই ভাল ব্যবসা । এদের কাজ হল সেটিংয়ে থাকা । কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন তুলবে না । আমি দলে থাকলে সেই প্রশ্ন উঠবেই । তাই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল ।"