ETV Bharat / state

কালিয়াচকে আবারও সক্রিয় মণিপুর চক্র, মাদক উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার 2 - আফিম

Drugs Recovery in Kaliachak: মালদা জেলা জুড়ে চলত মাদক তৈরির মূল উপকরণ আফিমের চাষ ৷ সরষে খেতের আড়ালে হত সেই চাষ ৷ গরিব চাষিদের মোটা টাকার প্রলোভন দিয়ে সেই চাষ করাত মাদক মাফিয়ারা ৷ কেউ চাষ করতে না চাইলে তার প্রাণ সংশয়ও হত৷ সেই সময় কালিয়াচকের আনাচে কানাচে মাদক তৈরির কারখানা গজিয়ে ওঠে ৷

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 2, 2023, 9:52 PM IST

মালদা, 2 ডিসেম্বর: উত্তর মালদায় মাদক ব্যবসার রমরমা নিয়ে চিন্তিত জেলা পুলিশ ৷ গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ফের জেগে উঠছে কালিয়াচক ৷ সেখানে আবার সক্রিয়তা বাড়ছে মাদক কারবারিদের ৷ সেপ্টেম্বর মাস থেকে তাদের তৎপরতা বাড়ার খবর রয়েছে পুলিশ ও সিআইডির কাছেও ৷ এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে আবারও প্রায় ছ’লক্ষ টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ গ্রেফতার করা হয়েছে এই কারবারে জড়িত দুই ভাইকে ৷ তাদের হেফাজত থেকে মিলেছে 680 গ্রাম ব্রাউন সুগার ৷ কিন্তু বড় বিষয় হল, এই 680 গ্রামের মধ্যে 292 গ্রাম হল ক্রুড পাউডার ৷ যা থেকে ব্রাউন সুগার তৈরি হয় ৷ প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কালিয়াচকে মাদক তৈরির কারখানাও তৈরি হয়েছে? আরও বড় প্রশ্ন, এই এলাকায় এত মাদক আসছে কোথায় থেকে ? অবশ্য এই চক্রের সঙ্গে যে মণিপুর যোগ রয়েছে, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলি ৷

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে কালিয়াচক থানার পুলিশ মোজমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হারুচক গ্রামে বাদিরুদ্দিন শেখের বাড়িতে হানা দেয় ৷ ওই বাড়ির একটি শোবার ঘর থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় 292 গ্রাম মাদক তৈরির পাউডার এবং 388 গ্রাম ব্রাউন সুগার ৷ এই কারবারে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার করা হয় বাদিরুদ্দিনের দুই ছেলে আলিউল শেখ (24) ও রহমত শেখকে (21) ৷ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তাদের শনিবার জেলা আদালতে পেশ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷

উত্তর মালদার চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরের মাদক ব্যবসার পিছনে রয়েছে লাগোয়া রাজ্য বিহারের যোগসূত্র ৷ প্রতিবেশী রাজ্য থেকে কার্যত বিনা বাধায় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে মাদক ৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, এই মুহূর্তে কালিয়াচকে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে মণিপুরের মাফিয়ারা ৷ তারা সেখান থেকে মাদক তৈরির মশলা কিংবা পুরোপুরি তৈরি মাদক কালিয়াচকের কারবারিদের কাছে পাঠাচ্ছে ৷ কখনও শিলিগুড়ির চিকেন নেক, আবার কখনও ভুটান, নেপাল, বিহার হয়ে সেই মাদক ঢুকছে এই জেলায় ৷

একসময় মালদা জেলা জুড়ে চলত মাদক তৈরির মূল উপকরণ আফিমের চাষ ৷ সরষে খেতের আড়ালে হত সেই চাষ ৷ গরিব চাষিদের মোটা টাকার প্রলোভন দিয়ে সেই চাষ করাত মাদক মাফিয়ারা ৷ কেউ চাষ করতে না-চাইলে তার প্রাণ সংশয়ও হত ৷ সেই সময় কালিয়াচকের আনাচে কানাচে মাদক তৈরির কারখানা গজিয়ে ওঠে ৷ তবে পুলিশ ও প্রশাসনের নিরন্তর চেষ্টায় কয়েক বছর ধরেই মালদা জেলা থেকে সেই চাষ পুরোপুরি দূর হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের দিকেই তাকিয়ে এই রাজ্য, এমনকি দেশের মাদক কারবারিরা ৷

রাজ্য সিআইডির এক আধিকারিক বলেন, “মাস ছয়েক ধরেই কালিয়াচকের মাদক ব্যবসা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে ৷ মূলত মণিপুর থেকে এখানে মাদক কিংবা তা তৈরির কাঁচামাল ঢুকছে ৷ সেই কাঁচামাল দিয়ে এখানেই মাদক তৈরি হচ্ছে ৷ কিছু ক্ষেত্রে সেসব ধরা পড়ছে ৷ কিন্তু 100 শতাংশ মাদকই যে ধরা পড়ছে, তা বলা যাবে না ৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা, এখন আর আগের মতো কারখানা বানিয়ে মাদক তৈরি করা হচ্ছে না ৷ সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে অল্প অল্প করে তা তৈরি হচ্ছে ৷ খবর পাওয়ার আগেই সেই মাদক তৈরি করে পাচার করে দিচ্ছে কারবারিরা ৷ পুজোর আগে থেকে এদের সক্রিয়তা বেড়েছে ৷ সিআইডির সঙ্গে পুলিশও সক্রিয় রয়েছে ৷ সে কারণেই সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত 8 কিলোর মতো মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৷ যার বাজারমূল্য কোটি টাকারও বেশি ৷”

সেপ্টেম্বরেই কোচবিহার জেলার কোতোয়ালি থানার রেল গুমটি এলাকা থেকে এক কিলো 120 গ্রাম ব্রাউন সুগার বাজেয়াপ্ত করেছিল রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ৷ উদ্ধার হয়েছিল চার কিলো 13 গ্রাম ইয়োবা ট্যাবলেটও ৷ গ্রেফতার করা হয়েছিল মণিপুরের টোম্বা এলাকার আবদুল মাতলিবকে ৷ নিউ জলপাইগুড়ির আমবাড়ি ক্যানাল রোড থেকে উদ্ধার হয় এক কুইন্টাল 61 কিলো 895 গ্রাম গাঁজা ৷ শুক্রবারের মাদক উদ্ধার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কালিয়াচক থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে 680 গ্রাম মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ মাদক মজুত রাখার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তারা সম্পর্কে দুই ভাই ৷ তাদের জেলা আদালতে পেশ করা হবে ৷ মাদকের কারবার বন্ধ করতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে ৷”

আরও পড়ুন

  1. ফিরহাদের সই নকল করে চাকরির প্রতারণা ! গ্রেফতার ভারতীয় জাদুঘরের কর্মী
  2. কল্যাণীতে বিজেপি কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভে সামিল শান্তনু ঠাকুর
  3. পরিবারের অনুমতি ছাড়াই নির্বীজ করণ, অভিযোগ অস্বীকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের

মালদা, 2 ডিসেম্বর: উত্তর মালদায় মাদক ব্যবসার রমরমা নিয়ে চিন্তিত জেলা পুলিশ ৷ গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ফের জেগে উঠছে কালিয়াচক ৷ সেখানে আবার সক্রিয়তা বাড়ছে মাদক কারবারিদের ৷ সেপ্টেম্বর মাস থেকে তাদের তৎপরতা বাড়ার খবর রয়েছে পুলিশ ও সিআইডির কাছেও ৷ এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে আবারও প্রায় ছ’লক্ষ টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ গ্রেফতার করা হয়েছে এই কারবারে জড়িত দুই ভাইকে ৷ তাদের হেফাজত থেকে মিলেছে 680 গ্রাম ব্রাউন সুগার ৷ কিন্তু বড় বিষয় হল, এই 680 গ্রামের মধ্যে 292 গ্রাম হল ক্রুড পাউডার ৷ যা থেকে ব্রাউন সুগার তৈরি হয় ৷ প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কালিয়াচকে মাদক তৈরির কারখানাও তৈরি হয়েছে? আরও বড় প্রশ্ন, এই এলাকায় এত মাদক আসছে কোথায় থেকে ? অবশ্য এই চক্রের সঙ্গে যে মণিপুর যোগ রয়েছে, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলি ৷

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে কালিয়াচক থানার পুলিশ মোজমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হারুচক গ্রামে বাদিরুদ্দিন শেখের বাড়িতে হানা দেয় ৷ ওই বাড়ির একটি শোবার ঘর থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় 292 গ্রাম মাদক তৈরির পাউডার এবং 388 গ্রাম ব্রাউন সুগার ৷ এই কারবারে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার করা হয় বাদিরুদ্দিনের দুই ছেলে আলিউল শেখ (24) ও রহমত শেখকে (21) ৷ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তাদের শনিবার জেলা আদালতে পেশ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷

উত্তর মালদার চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরের মাদক ব্যবসার পিছনে রয়েছে লাগোয়া রাজ্য বিহারের যোগসূত্র ৷ প্রতিবেশী রাজ্য থেকে কার্যত বিনা বাধায় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে মাদক ৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, এই মুহূর্তে কালিয়াচকে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে মণিপুরের মাফিয়ারা ৷ তারা সেখান থেকে মাদক তৈরির মশলা কিংবা পুরোপুরি তৈরি মাদক কালিয়াচকের কারবারিদের কাছে পাঠাচ্ছে ৷ কখনও শিলিগুড়ির চিকেন নেক, আবার কখনও ভুটান, নেপাল, বিহার হয়ে সেই মাদক ঢুকছে এই জেলায় ৷

একসময় মালদা জেলা জুড়ে চলত মাদক তৈরির মূল উপকরণ আফিমের চাষ ৷ সরষে খেতের আড়ালে হত সেই চাষ ৷ গরিব চাষিদের মোটা টাকার প্রলোভন দিয়ে সেই চাষ করাত মাদক মাফিয়ারা ৷ কেউ চাষ করতে না-চাইলে তার প্রাণ সংশয়ও হত ৷ সেই সময় কালিয়াচকের আনাচে কানাচে মাদক তৈরির কারখানা গজিয়ে ওঠে ৷ তবে পুলিশ ও প্রশাসনের নিরন্তর চেষ্টায় কয়েক বছর ধরেই মালদা জেলা থেকে সেই চাষ পুরোপুরি দূর হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের দিকেই তাকিয়ে এই রাজ্য, এমনকি দেশের মাদক কারবারিরা ৷

রাজ্য সিআইডির এক আধিকারিক বলেন, “মাস ছয়েক ধরেই কালিয়াচকের মাদক ব্যবসা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে ৷ মূলত মণিপুর থেকে এখানে মাদক কিংবা তা তৈরির কাঁচামাল ঢুকছে ৷ সেই কাঁচামাল দিয়ে এখানেই মাদক তৈরি হচ্ছে ৷ কিছু ক্ষেত্রে সেসব ধরা পড়ছে ৷ কিন্তু 100 শতাংশ মাদকই যে ধরা পড়ছে, তা বলা যাবে না ৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা, এখন আর আগের মতো কারখানা বানিয়ে মাদক তৈরি করা হচ্ছে না ৷ সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে অল্প অল্প করে তা তৈরি হচ্ছে ৷ খবর পাওয়ার আগেই সেই মাদক তৈরি করে পাচার করে দিচ্ছে কারবারিরা ৷ পুজোর আগে থেকে এদের সক্রিয়তা বেড়েছে ৷ সিআইডির সঙ্গে পুলিশও সক্রিয় রয়েছে ৷ সে কারণেই সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত 8 কিলোর মতো মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৷ যার বাজারমূল্য কোটি টাকারও বেশি ৷”

সেপ্টেম্বরেই কোচবিহার জেলার কোতোয়ালি থানার রেল গুমটি এলাকা থেকে এক কিলো 120 গ্রাম ব্রাউন সুগার বাজেয়াপ্ত করেছিল রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ৷ উদ্ধার হয়েছিল চার কিলো 13 গ্রাম ইয়োবা ট্যাবলেটও ৷ গ্রেফতার করা হয়েছিল মণিপুরের টোম্বা এলাকার আবদুল মাতলিবকে ৷ নিউ জলপাইগুড়ির আমবাড়ি ক্যানাল রোড থেকে উদ্ধার হয় এক কুইন্টাল 61 কিলো 895 গ্রাম গাঁজা ৷ শুক্রবারের মাদক উদ্ধার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কালিয়াচক থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে 680 গ্রাম মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ মাদক মজুত রাখার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তারা সম্পর্কে দুই ভাই ৷ তাদের জেলা আদালতে পেশ করা হবে ৷ মাদকের কারবার বন্ধ করতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে ৷”

আরও পড়ুন

  1. ফিরহাদের সই নকল করে চাকরির প্রতারণা ! গ্রেফতার ভারতীয় জাদুঘরের কর্মী
  2. কল্যাণীতে বিজেপি কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভে সামিল শান্তনু ঠাকুর
  3. পরিবারের অনুমতি ছাড়াই নির্বীজ করণ, অভিযোগ অস্বীকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.