মালদা, 2 জুন: গ্রাম নিয়ে যেন কারও মাথাব্যথা নেই ৷ সবার নজর দিল্লিতে ৷ তৃতীয় দফায় দিল্লি দখলের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে পদ্ম শিবির ৷ বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই ৷ ইতিমধ্যে গোটা রাজ্যে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ স্লোগানে রয়েছে,'আরও একবার, বিজেপি সরকার' ৷ চব্বিশে দেশের জনতা জনার্দনের রায় কী হবে, তার হদিশ এখনও বহুদূর ৷ কিন্তু রামের এই দেওয়াল লিখনের টক্কর দিতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে বাম ৷ অন্তত মালদায় ৷ যে যে জায়গায় বিজেপির দেওয়াল লিখন দেখা যাচ্ছে, ঠিক তার পাশেই বামফ্রন্টের লিখনের স্লোগান, 'ফেরাতে হাল, আসছে লাল' ৷ বাম-রামের কাছে দিল্লির মসনদের গন্ধ কি গ্রামের মাটির গন্ধের থেকেও বেশি তীব্র ?
বিষয়টি নিয়ে দুই শিবিরের অবস্থান জানার চেষ্টা করে ইটিভি ভারত ৷ এই বিষয়ে মালদা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অম্বর মিত্র জানান, লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে এলেই বিজেপি নতুন নির্বাচনী স্লোগান আমদানি করে ৷ কখনও ফিল গুড, কখনও শাইনিং ইন্ডিয়া, কখনও বা আচ্ছে দিন ৷ মানুষ এতদিনে আচ্ছে দিনের সংজ্ঞা বুঝে ফেলেছে ৷ তাই এখন মানুষ বলছে, বুরে দিন ওয়াপাস দো ৷ যাতে রান্নার গ্যাস সাড়ে বারোশো টাকায় কিনতে না হয় ৷ চব্বিশের ভোটের আগে ওরা কোনও বিজ্ঞাপন সংস্থাকে দিয়ে জেলা জুড়ে দেওয়াল লিখন শুরু করেছে ৷ ওদের নয়া স্লোগান, আরও একবার, বিজেপি সরকার ৷
সিপিএম নেতার কথায়,"আমাদের কর্মীরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে ওদের দেওয়াল লিখনের দু'এক ফুটের মধ্যে ফেরাতে হাল, আসছে লাল স্লোগান লিখছে ৷ এই সময় তৃণমূল আর বিজেপি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজ্যটার সর্বনাশ করার চেষ্টা করছে ৷ ওই দুই দলের বোঝাপড়া মানুষ ভালোভাবেই বুঝে ফেলেছে ৷ তৃণমূল আর বিজেপিকে ঠেকাতে বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করছে ৷ একটা অদ্ভুত বিষয়, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিজেপির কোনও কথা নেই ৷ তৃণমূলও লোকসভা নির্বাচন নিয়ে রা করছে না ৷ এতেই দুই দলের সেটিংটা পরিষ্কার ৷ এই বোঝাপড়ার রাজনীতির বিরুদ্ধেই যেখানে যেখানে বিজেপির দেওয়াল লিখন রয়েছে, তার পাশে আমাদের কর্মীরা নিজেরাই দেওয়াল লিখবে ৷ আমরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে এই লড়াই লড়ব ৷"
আরও পড়ুন: 'ভালোবাসায় আপ্লুত হলাম', নন্দীগ্রামকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অভিষেকের
অন্যদিকে, এই প্রচারপর্ব প্রসঙ্গে বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষের বক্তব্য, গণতান্ত্রিক দেশে সবারই প্রচারের অধিকার আছে ৷ বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ না করে বামপন্থীরা আগে মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক হোক ৷ 34 বছর রাজত্ব করার পর তারা এখন বিধানসভায় একজন প্রতিনিধিও পাঠাতে পারছে না ৷ গোটা দেশেই তারা কার্যত শূন্যে পরিণত ৷ এটা শুধু ভারতের ছবি নয়, গোটা পৃথিবীতেই এক দৃশ্য ৷ একসময় যে কমিউনিস্ট আদর্শ গোটা পৃথিবীতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, এখন গোটা পৃথিবীই তাদের বর্জন করেছে ৷ তাই আগে নিজেদের মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক করে তারপর বামপন্থীরা ভোটে লড়াইয়ের কথা ভাবুক ৷
আরও পড়ুন: 'পঞ্চায়েতে ভোট লুট করতে এলে তৃণমূলের দাদাদের হাত কেটে নিন', আইএসএফ নেতার মন্তব্যে বিতর্ক
এই বিজেপি নেতার কথায়,"আমাদের ন'বছরের দেশ শাসনের গর্ব যে আমরা প্রচার করব, সেটা তো স্বাভাবিক ৷ আর এই রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই ৷ রাজ্য সরকার আর মানুষের উপর ভরসা করতে পারে না ৷ পুলিশ ও প্রশাসন, সরকারি কর্মী এবং সমাজবিরোধীরাই এখন এদের ভোটে জেতার ভরসা ৷ এই সরকার তাদের মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, এখন সেটাই সন্দেহ ৷ তাই এখন থেকেই আমরা নিজেদের প্রচার শুরু করেছি ৷ আর লোকসভা ভোটও তো আর খুব বেশি দেরি নেই ৷ হাতে মাত্র 11 মাস সময় ৷ এখন থেকে প্রস্তুতি তো নিতেই হবে ৷ তার সুফল পঞ্চায়েত নির্বাচনেও পাব ৷"