মালদা, 18 জুন : যখন উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার জন্য দাবি তুলেছে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ, তখন আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম তুলে ধরলেন রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন । একইসঙ্গে শাসকদলের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে গত 10 বছরে রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গে কী কী উন্নয়ন করেছে, তার ফিরিস্তি দেওয়া হল ।
উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার বিজেপির দাবি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে মালদা প্রেস কর্নারে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয় জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে । এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, জেলা সভানেত্রী মৌসম নুর, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি, জেলার মুখপাত্র শুভময় বসু ও সুমালা আগরওয়াল।
মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, "আমরা বিজেপিকে কাউন্টার করার জন্য এই সাংবাদিক সম্মেলন করছি না । বিজেপির ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি যেন সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের সরকারের কিংবা দলের বিপক্ষে না নিয়ে যায়, সেজন্যই এই সম্মেলন । উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর যথেষ্ট ভাল কাজ করছে । 2011 সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর চালু করেছেন । শুধু তাই নয়, নবান্নের বদলে উত্তরবঙ্গ কন্ট্রোল করার জন্য উত্তরকন্যাতে নিউ সেক্রেটারি বিল্ডিং করা হয়েছে । বামফ্রন্ট সরকারকে দেখেছি, বিজেপিকে দেখেছি। কেউ উত্তরবঙ্গের জন্য কিছুই করেনি। যাঁরা আজ বিজেপি থেকে জিতেছেন, তাঁরাই নিজেদের ভুল বুঝে তৃণমূলে যোগদান করবেন।"
সাবিনা আরও বলেন," উত্তরবঙ্গে আমাদের সরকার ভোরের আলো নামে ইকো ট্যুরিজম করছেন । দিদি ছিটমহল সমস্যা মিটিয়েছেন । শুধু রাজ্যের দায়িত্ব নয় উন্নয়ন করা, কেন্দ্রীয় সরকারের সমান দায়িত্ব রয়েছে । কেন কেন্দ্রীয় সরকার উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি সারা বাংলাকে বঞ্চিত করে রেখেছে? আগামী দিনে দিদির উন্নয়নমূলক কাজকর্ম দেখে পুরো ভারতবর্ষের মানুষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রোজেক্ট করছেন । আমাদের দিদি শুধু পশ্চিমবঙ্গকে নয়, সারা ভারতবর্ষকে একত্রিত করার দায়িত্ব নিয়েছেন।"
বৈঠকে উপস্থিত মৌসম বলেন, "বিজেপি সবসময় ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি নিয়ে চলে । এখন ওরা উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে চাইছে । আমাদের নেত্রী সাফ জানিয়েছেন, তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্বে এই ধরণের নোংরা রাজনীতি তিনি করতে দেবেন না । আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, বিজেপির নিজেদের বিধায়কের মধ্যেই এনিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে । যদি এভাবে উন্নয়ন হত, তবে নিশ্চয় উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়করা এই ইস্যুতে একমত থাকতেন । উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপির যদি এত চিন্তাভাবনা ছিল, তবে এতদিন উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কেন?"
তিনি আরও বলেন, " 2014 সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে এসে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । কিন্তু এখনও কোনও কাজই হয়নি । অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের জন্য অনেক কিছু করেছেন । তার মধ্যে তিনটি আঞ্চলিক ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মালদার জন্যও মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট করেছেন । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, ভুতনি ব্রিজ, সুজাপুরে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব, মালদা মেডিকেলে লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট, 11টি কৃষক বাজার করা হয়েছে । 2021-22 এ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পরিষদের জন্য 776.51 কোটি করে বরাদ্দ করা হয়েছে । ফলে বিজেপি যেসব অভিযোগ তুলছে সব ভিত্তিহীন।"
মৌসমের কথায়, "যেহেতু বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করতে পারেনি । তাই বাংলায় বিভেদ সৃষ্টি করে কিছু আসন পাওয়ার জন্য নোংরা রাজনীতি করছে । নেত্রীর বিশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, ততদিন বিজেপির এই নোংরা রাজনীতি সফল হবে না । বিজেপির এই ষড়যন্ত্র কার্যকর করার আগে থেকেই আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে চাইছি । সারা ভারতবর্ষে ধর্মীয় রাজনীতি করে মানুষের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে বিজেপি । গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতেও আমরা সেটাই দেখেছি । এই ইস্যু যেন আর না এগোয় তাই আমরা আগে থেকেই মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি । আগামী দিনে আমাদের যদি রাস্তায় নামতে হয় । আমরা সেটাও করব। ”
আরও পড়ুন : চাঁচলে ফোয়ারা নির্মাণ ঘিরে বিধায়ক আর জেলা পরিষদ সদস্যের তরজা
কৃষ্ণেন্দু বলেন, “রাজ্যের নির্দেশে আমরা এই সাংবাদিক সম্মেলন করছি । বিজেপি সারা বাংলাতে অশান্তি সৃষ্টি করছে । সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে উত্তরবঙ্গকে ওরা আলাদা করতে চাইছে । উত্তরবঙ্গ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের হৃদপিণ্ড । সেই হৃদপিণ্ডের ওপর বিজেপি আঘাত হানছে । এর আগেও বিজেপি বিভিন্ন জায়গায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে । উত্তরবঙ্গকে ওরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে চাইছে । আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন । উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন । বিজেপির বেশিরভাগ বিধায়করা উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুলেছেন । লোকসভা নির্বাচনের পর বিধানসভায় উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করেছে তৃণমূল । বিজেপির এই চেষ্টা আমরা সফল হতে দেব না ।”