মালদা, 12 অগস্ট: বিচিত্র রাজনীতি ৷ গ্রাম পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসকদল ৷ নতুন বোর্ডে তাদেরই প্রধান এবং উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছে ৷ কিন্তু দলীয় সদস্যদের সমর্থনে নয় ৷ দু’জনকে সমর্থন জানিয়েছেন কংগ্রেসের সদস্যরা ৷ হাতের সমর্থন পেয়েই ইংরেজবাজার ব্লকের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন দুই তৃণমূল সদস্য ৷ তাই বোর্ড গঠনের পর তৃণমূল নয়, উল্লাসে মেতে উঠেছেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা ৷ নির্বাচিত প্রধান ও উপপ্রধানকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন এলাকার প্রাক্তন কংগ্রেসের বিধায়ক ৷ অর্থাৎ এই পঞ্চায়েতে যে তৃণমূলের ঘরে 'বিভীষণ' থেকে গেল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না বলে রাজনৈতিকমহলের মত ৷ তবে এমন ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বেরও ৷
প্রধান তনুজা বিবি বলেন, "15 জনের মধ্যে পাঁচজন তৃণমূলের সদস্য আমাকে সমর্থন করেছেন ৷ 13 জন কংগ্রেস সদস্যও আমাকে সমর্থন করেছেন ৷ এঁদের সমর্থনেই আমি পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছি ৷ এই পঞ্চায়েতে আমরা পাঁচজন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল ৷" অন্যদিকে উপপ্রধান মহম্মদ মইনুল হক বলেন, "তৃণমূলের কয়েকজনের সঙ্গে কংগ্রেসের 13 জনের সমর্থনেই আমি উপপ্রধান হয়েছি ৷ উন্নয়নের জন্য কংগ্রেস সদস্যরা আমাদের দু’জনকেই সমর্থন করেছেন ৷ এখানে তৃণমূলেরই বোর্ড হয়েছে ৷ আমরাও এখনও তৃণমূলে রয়েছি ৷ তৃণমূল ছাড়িনি ৷"
এবারের নির্বাচনে 30 আসনবিশিষ্ট নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল 15টি, কংগ্রেস 13টি ও সিপিএম দুটি আসনে জয় পায় ৷ বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় সিপিআইএম সদস্যরা অংশ নিলেও তাঁরা কংগ্রেসকে সমর্থন করেননি ৷ এই পঞ্চায়েতে সিপিএম-কংগ্রেসের জোটও হয়নি ৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করে তৃণমূল ৷ কিন্তু প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনের সময় আসলেই দেখা যায় এক বিরল ছবি ৷
আরও পড়ুন: দশ বছর পর ডাবগ্রাম 2 নম্বর পঞ্চায়েতের বোর্ড দখল বিজেপির
তৃণমূলের তরফে ওই দুই পদের জন্য প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব হতেই আপত্তি জানান শাসকদলেরই পাঁচ সদস্য ৷ তাঁরা প্রধান পদে তনুজা বিবি এবং উপপ্রধান পদে মহম্মদ মইনুল হকের নাম প্রস্তাব করেন ৷ ফলে ভোটাভুটি নিশ্চিত হয়ে যায় ৷ ভোটে কংগ্রেসের 13 এবং তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের সমর্থনে প্রধান হন তনুজা ও উপপ্রধান হন মইনুল ৷ বোর্ড গঠন করেও নতমুখে বাড়ি ফিরে যান তৃণমূলের সদস্যরা ৷ উলটোদিকে তৃণমূলের প্রধান এবং উপপ্রধানকে নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা ৷ এলাকার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার তৃণমূলের প্রধান-উপপ্রধানকে মিষ্টিমুখও করান ৷
প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়কের কথায়, নরহাট্টা অঞ্চলে তৃণমূলের 15 জন প্রার্থী ভোটে জিতেছিলেন ৷ কিন্তু দলের অনৈতিক কাজের জন্য চারজন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল হয়েছিলেন ৷ এই অঞ্চলের মানুষ এমন একটি পঞ্চায়েত বোর্ড চেয়েছিলেন, যারা তাঁদের পরিষেবা দিতে পারে, মানুষকে সুশাসন দিতে পারে ৷ তৃণমূলের এই চারজন স্বচ্ছ পঞ্চায়েত গঠন করে মানুষকে প্রকৃত সুশাসন দিতে চান ৷ তাই কংগ্রেসের 13 জন সদস্য তাঁদের প্রধান ও উপপ্রধান পদে সমর্থন করেছেন ৷ তিনি বলেন, "আমরা চাই, দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েতের মাধ্যমে মানুষের কাজ হোক ৷ আশা করি, তৃণমূলের প্রধান ও উপপ্রধানের নেতৃত্বে এখানে সেই কাজ হবে ৷"
আরও পড়ুন: বিজেপি থেকে নির্দল, বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠন শাসকদলের
তবে ঘরের 'বিভীষণ' নিয়ে অস্বস্তিতে শাসক শিবির ৷ তৃণমূলের মালদা জেলা সহ-সভাপতি শুভময় বসুর বক্তব্য, তৃণমূলকে আটকাতে গোটা রাজ্যে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি এক হয়ে গিয়েছে ৷ তবে কিছু এলাকায় শাসকদল তৃণমূলেও বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে ৷ তবে গ্রাম্য রাজনীতিতে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে ৷ তার জন্য এমন ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা তাঁর ৷ তিনি বলেন, "দলের নীতি মেনে বোর্ড গঠন হলে তবেই আমরা সেটাকে তৃণমূলের বোর্ড বলে মানব ৷ দলের নীতির বাইরে গিয়ে কিছু করা হলে দল তাকে মান্যতা দেবে না ৷ কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বোর্ড গঠন করার পর কেউ যদি নিজেকে তৃণমূল বলে দাবি করে, তা মানা হবে না ৷ সেটা ব্লক ও জেলাস্তর থেকে রাজ্যকে জানানো হবে ৷ রাজ্য নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে ৷"