মালদা, 24 জুন: ব্যাপক ফলনের জেরে এবার বাজারদর ওঠেনি মালদার আমের ৷ ক্ষতির মুখে আমচাষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা ৷ একই পরিস্থিতি আমের অনুসারী শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষদের ৷ এবার অঢেল আম হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত কাঁচা আমের দামও তেমন নেই ৷ অল্প দামেই মালদা থেকে কাঁচা আমের স্লাইস নিয়ে যাচ্ছে ভিনরাজ্যের আচার কোম্পানিগুলি ৷ এই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে উদ্যানপালন দফতরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ এমনটাই জানিয়েছে মালদা ম্যাঙ্গো অ্যাসোসিয়েশন ৷
আমের জন্যই মালদা জেলাকে চেনে দেশবাসী ৷ এখন আমের ভরা মরশুম ৷ বাগানগুলিতে আমের পাইকারি ব্যবসা চলছে ৷ একইসঙ্গে জেলা জুড়ে চলছে কাঁচা আমের প্রক্রিয়াকরণ ৷ মূলত যেসব আম আর পাকবে না, প্রকৃত আকার বিকৃত, কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে ঝরে পড়েছে বা আম ভাঙার সময় উপর থেকে পড়ে ফেটে গিয়েছে, সেই কাঁচা আমকেই প্রক্রিয়াকরণ করা হয় ৷ প্রক্রিয়াজাত কাঁচা আম দেশের বিভিন্ন আচার কোম্পানিতে পাঠানো হয় ৷ মূলত উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতেই বিভিন্ন রাজ্যে এই কাঁচা আম রফতানি হয় ৷ এই ব্যবসাতেও বছরে প্রায় 50 কোটি টাকা লেনদেন হয় ৷
আরও পড়ুন: দর তলানিতে, বাজারও নেই; চাষিদের বাঁচাতে ভিনরাজ্যে আম রফতানি ব্যবসায়ীদের
কীভাবে কাঁচা আমকে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, তা জানালেন এক উৎপাদনকারী ফিরোজ মিয়াঁ ৷ তিনি জানান, "তাঁরা বাগান থেকে ছাঁট আম কেনেন ৷ প্রতি কিলো আমের দাম পড়ে তিন থেকে চার টাকা ৷ সেই আমগুলি শ্রমিকদের দিয়ে ছোট ছোট টুকরোয় কাটানো হয় ৷ এরপর একটি গর্তে সেই আমের টুকরো লবণের মধ্যে সাত থেকে 10 দিন পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হয় ৷ আমের টুকরো সম্পূর্ণ জারিত হয়ে গেলে প্যাকিং করে ভিনরাজ্যের বিভিন্ন আচার কোম্পানিতে পাঠানো হয় ৷"
ফিরোজ মিয়াঁ বলেন, "আমের বেশি ফলন হলে কিংবা চাহিদা না থাকলে আমরা সেভাবে দর পাই না ৷ উলটো হলে আমাদের লাভ একটু বেশি হয় ৷ এবার জেলায় আমের প্রচুর ফলন ৷ তাই এবার 6-7 টাকা কিলো দরেই কাঁচা আমের স্লাইস আমাদের বিক্রি করে দিতে হচ্ছে ৷ আমাদের জেলা কিংবা রাজ্যে তেমন কোনও আচার কোম্পানি নেই ৷ এখানে তেমন কোম্পানি থাকলে আমাদের লাভ বেশি হত ৷ দরও ভালো পাওয়া যেত ৷ আশা করছি, আগামীতে এই রাজ্যেও বড় আচার কোম্পানি গড়ে উঠবে ৷ আমাদেরও লাভ বাড়বে ৷"
আরও পড়ুন: ভোটের গেড়োয় মালদায় বাতিল আম মেলা, মনখারাপ আমচাষি ও বিক্রেতাদের
মালদা ম্যাঙ্গো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা জানান, এ বছর জেলায় বৃষ্টি তেমন হয়নি ৷ সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে টানা তীব্র তাপপ্রবাহ চলেছে ৷ ফলে কাঁচা অবস্থাতেই আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে ৷ গাছ থেকে আম ভাঙার সময়ও প্রচুর আম মাটিতে পড়ে ফেটে যাচ্ছে ৷ আবহাওয়ার জন্য আমের গায়ে দাগ দেখা দিচ্ছে ৷ এছাড়াও গাছে কাঁইট আমের সংখ্যা বেড়েছে ৷ স্থানীয় ভাষায় কাঁইট অর্থাৎ যে আম আর পাকবে না ৷
তিনি বলেন, "এই আম প্রক্রিয়াকরণ করে কিছু ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন রাজ্যের আচার ফ্যাক্টরিগুলিতে রফতানি করছেন ৷ সাত থেকে 10 টাকা কিলো দরে এই প্রক্রিয়াজাত কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ৷ এই আম যাতে সংগঠিত উপায়ে আমরা ভিনরাজ্যে রফতানি করতে পারি তার জন্য আমরা রাজ্য উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের সঙ্গে কথা বলছি ৷ তাতে এই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমচাষিরাও উপকৃত হবেন ৷"