মালদা, 25 মে: জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তি চা বাগানের কর্মী করিমুল হকের কাহিনী শুনেছেন ৷ সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছতে না-পারায় যিনি মাকে খুইয়ে মোটরবাইককে অ্যাম্বুল্যান্স বানিয়ে মানুষকে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন ৷ করিমুলের কাহিনী ভাবিয়ে তুলেছিল তাঁকে ৷ মাসতিনেক আগে টোটো কিনেছেন তিনি ৷ এক রাতে নিজের টোটোয় চাপিয়ে রোগী নিয়ে গিয়েছিলেন মালদা মেডিক্যালে ৷ সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসতে না-পারায় সেই রাতে শহরতলির এক রোগীর মৃত্যু তাঁর মনে ঝড় তুলেছিল ৷ তারপরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর টোটো শুধুই পকেট ভরানোর যন্ত্র হবে না, তার গায়ে লেগে থাকবে মানবিকতার পরশও ৷
যেমন সিদ্ধান্ত, তেমন কাজ ৷ এই মুহূর্তে মালদা শহর ও শহরতলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে জিতেনের টোটো অ্যাম্বুল্যান্স ৷ টোটোর গায়ে লেখা রয়েছে ফোন নম্বরও ৷ যে কোনও সময় ওই নম্বরে ফোন করলে রোগীকে মেডিক্যালে নিয়ে যেতে হাজির জিতেনের টোটো ৷ তিনি চাইছেন, তাঁর ফোন নম্বর আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাক ৷ মালদা শহর সংলগ্ন বাগবাড়ি বাঁধে জিতেনের বাড়ি ৷ পুরো নাম জিতেন চৌধুরী ৷ বাবা বাবলু চৌধুরী পেশায় লরিচালক ৷ পড়াশোনা বেশিদূর হয়নি জিতেনের ৷ এদিকে বয়স 21 পেরিয়ে 22 ৷ নিম্নবিত্ত সংসার শুধু বাবার উপার্জনে চলছে না ৷ তাই মাস তিনেক আগে একটি টোটো কিনে ফেলেন জিতেন ৷ শুরু হয়ে যায় তাঁর উপার্জন ৷ একই সঙ্গে মানুষের দুর্দশা পরিদর্শন ৷ এভাবেই জিতেন ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরোনো সেই বার্তা, মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য ৷
জিতেন বলেন, "একদিন আমি এক রোগীকে টোটোয় চাপিয়ে হাসপাতাল নিয়ে যাই ৷ হাসপাতালে কিছু ঘটনা দেখে আমার মাথায় আসে, শুধু পেট ভরাতে টোটো চালানো নয়, এই টোটো ব্যবহার করে বিনা পয়সায় মানুষের সেবাও করব ৷ তাই টোটোকে অ্যাম্বুল্যান্স বানিয়ে ফেলি ৷ মালদা মেডিক্যালের চার কিলোমিটারের মধ্যে যে কোনও মানুষ তাঁর রোগীকে আমার টোটোয় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবেন ৷ সবার পক্ষে তো আর অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করা সম্ভব হয় না! তবে সবসময় যে চার কিলোমিটারের মধ্যে থেকেই রোগী নিয়ে যাওয়ার ফোন আসবে, তার কোনও মানে নেই ৷ প্রয়োজনে আমি টোটো নিয়ে 5-6 কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারি ৷"
আরও পড়ুন: পাচারের আগে তিন নাবালিকাকে উদ্ধার করে শহরের হিরো টোটো চালক খুরশেদ
তিনি আরও বলেন, "কাউকে না করতে পারব না ৷ আমার পরিবারের সবাই এই কাজে আমার সঙ্গে রয়েছে ৷ জলপাইগুড়ির করিমুল সাহেবের মানবসেবার কথা আমি শুনেছি ৷ তাঁর কাহিনী শুনে আমি মানবসেবায় প্রভাবিতও হয়েছি ৷ টোটো কেনার একমাস পর থেকেই আমি মানুষকে এই পরিষেবা দিচ্ছি ৷ এতে হয়তো আমার উপার্জন কিছুটা কম হবে ৷ কিন্তু একজন মানুষ হয়ে বিপদে মানুষের পাশে তো দাঁড়াতে হবেই ৷ তবে এখনও আমার এই পরিষেবা সবাই জানে না ৷ মাত্র 6-7 জন রোগীকেই এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি ৷ তাই আমি চাই, আমার 8436919366 ফোন নম্বরটা ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক ৷ যখন প্রয়োজন পড়বে, সবাই যেন আমাকে ফোন করেন ৷ আমার এই টোটো অ্যাম্বুল্যান্স পীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে ৷"