মালদা, 23 অগস্ট: মিজোরামে রেলসেতু ভেঙে মৃতের সংখ্যা বেড়ে 23 হয়েছে ৷ বুধবার সন্ধেয় অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বৈভব চৌধুরী জানিয়েছেন, ওই দুর্ঘটনায় মালদার 23 জনের মৃত্যুর খবর জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে ৷ এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশংকা করেছেন তিনি ৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের পুখুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার 16 জন রয়েছেন ৷ পাঁচজন ইংরেজবাজারের বিনোদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৷ গাজোল ও কালিয়াচকের দু’জনও এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৷
বুধবার সকালে দুর্ঘটনা এবং হতাহতের খবর রতুয়ার কোকলামারি চৌদুয়ার গ্রামে পৌঁছতেই শোরগোল পড়ে যায় গ্রামে ৷ গ্রামে প্রায় 400 ঘর মানুষের বাস ৷ সবাই পরিযায়ী শ্রমিক ৷ কারও তেমন জমিজমা নেই ৷ সংসার প্রতিপালনে ভিনরাজ্যের উপরেই ভরসা করেন ৷ জানা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের পর 52 জন শ্রমিকের একটি দল মিজোরামের সাইরাং এলাকায় একটি রেলসেতু নির্মাণের কাজ করতে গিয়েছিলেন ৷ এই শ্রমিকরা রেলসেতু নির্মাণে পারদর্শী ৷ আজ সকাল 10টা নাগাদ নির্মীয়মাণ সেই সেতু ভেঙে পড়ে ৷ প্রথমে জানা যায়, দুর্ঘটনায় 17 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা ৷
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামে উপস্থিত হয় শাসকদলের নেতৃত্ব ৷ পরে বাম নেতাদের একটি দলও সেখানে যায় ৷ এ বিষয়ে আইএনটিটিইউসির মালদা জেলা সভাপতি শুভদীপ সান্যাল বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা ৷ এই জেলার অনেক শ্রমিক মিজোরামে কাজ করতে গিয়েছিলেন ৷ শুধু রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের পুখুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত নয়, ইংরেজবাজারের নরহাট্টা ও বিনোদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রমিকরাও কর্মরত ছিলেন ৷ সকাল 10টা নাগাদ ওই রেল ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে ৷ তখন সেখানে যত শ্রমিক কাজ করছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই মারা গিয়েছেন ৷ তবে মৃতের সংখ্যা আমরা সঠিকভাবে বলতে পারব না ৷ কারণ, এখনও উদ্ধারকাজ চলছে ৷ ওই কাজ শেষ না হলে এ নিয়ে সঠিক কিছু বলা যাবে না ৷ মৃতদের মধ্যে আমরা কোকলামারি চৌদুয়ার গ্রামেরই 18 জনের নাম পেয়েছি ৷ তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে ৷ কারণ, বিনোদপুর অঞ্চলের পাঁচজনের নাম পাওয়া গিয়েছে ৷ এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা ও রাজ্য প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করেছে ৷ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জানেন ৷ এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী ও আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ সব মানুষের পাশে ছিলেন ৷ আগামী দিনেও থাকবেন ৷”
আরও পড়ুন: মিজোরাম দুর্ঘটনায় স্বামী-ছেলে-জামাই-নাতিকে হারিয়ে দিশেহারা সারথিদেবী
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বৈভব চৌধুরী জানান, “এই ঘটনায় হতাহতদের পরিবারকে আমরা সবরকম সাহায্য করতে তৈরি রয়েছি ৷ মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা আমরা নিচ্ছি ৷ ইতিমধ্যে আমাদের মুখ্যসচিব মিজোরাম সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ৷ সেখানকার জেলাশাসকের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে ৷ এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনায় মৃত মালদা জেলার 23 জনকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি ৷ উদ্ধার কাজ এখনও চলছে ৷ মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷”
প্রশাসন এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনায় মালদা জেলার মৃতদের যে তালিকা হাতে পেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন কোকলামারি চৌদুয়ার গ্রামের সামিরুল হক, নাসিম রহমান, আনসারুল হক, সেনাউল, মণিরুল নাদাপ, মোজাম্মেল হক, রহিম শেখ, সইদুর রহমান, মোজাফ্ফর আলি, আসিম আলি, সাহিন আখতার, কাশিম শেখ, সারিফুল শেখ ও সাকিরুল শেখ ৷ এছাড়াও রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের পরানপুরের মাসকেরুল ও সুলতানগঞ্জের নুরুল হক এই দুর্ঘটনার শিকার ৷ ইংরেজ বাজারের সাটটারি গ্রামের ঝাল্লু সরকার, জয়ন্ত সরকার, রঞ্জিত সরকার, সুমন সরকার ও নব চৌধুরী, গাজোলের আলিনগর গ্রামের সেবুল হক এবং কালিয়াচকের মহম্মদ জাহিদুল শেখও এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৷