মালদা , 13 ফেব্রুয়ারি : অভিযোগ, হুকিং করে বাড়িতে আলো জ্বালায় গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ৷ একইভাবে চুরি করে বাড়িতে আলো জ্বালায় শাসকদলের কর্মীরাও ৷ এদিকে হুকিং-এর জেরে গোটা গ্রামকে ভুগতে হচ্ছিল লো-ভোল্টেজ সমস্যায় ৷ এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন গ্রামের এক BJP কর্মী৷ গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিদ্যুৎ দপ্তরের ৷ দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল, হুকিং বন্ধ করার পাশাপাশি গ্রামে বসাতে হবে ট্রান্সফরমার ৷ তার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ৷ এরপরেই গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রান্সফরমারের টাকা জোগাড় করতে শুরু করেন ওই BJP কর্মী, ৫১ বছরের মহাদেব মণ্ডল৷ টাকা চাইতে যান অভিযুক্ত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন সাহার কাছেও ৷ টাকা দেয়নি মিঠুন ৷ উলটে তার বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের একজোট করায় সে মহাদেববাবুকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ৷ প্রায় বছর দেড়েক পর সেই হুমকিকে বাস্তবে রূপ দেয় সে৷ গতকাল সন্ধেয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হন মহাদেববাবু ৷ খুনের চেষ্টা করা হয় তাঁকে৷ ধারালো হাঁসুয়া আর লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত হন তিনি ৷ ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক ৩ ব্লকের কুম্ভীরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সুখপাড়া গ্রামে ৷ এই ঘটনায় পুলিশ সদর্থক ভূমিকা না নিলে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জেলা BJP নেতৃত্ব ৷
মহাদেববাবুর স্ত্রী অর্চনা মণ্ডল বলেন, “গতকাল আমার স্বামী বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল ৷ রাস্তায় তৃণমূলের লোকজন ওর রাস্তা আটকায় ৷ ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে কোপায় ৷ মাটিতে ফেলে লাঠিপেটা করে ৷ স্বামীর মাথাতেও আঘাত লাগে ৷ খবর পেয়ে আমি স্বামীকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম ৷ ওরা আমাকেও ধরে ফেলে ৷ আমি কোনোরকমে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচি৷ পরে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে স্বামীকে উদ্ধার করে স্থানীয় দারিয়াপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই ৷ রাতে স্বামীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দেন৷ রাতেই স্বামীকে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি ৷ গতকাল মিঠুন সাহা, সত্যজিৎ সাহা, হরিপদ সাহা, অমর সাহা সহ ৮-১০ জন তৃণমূল কর্মী আমার স্বামীকে মারধর করেছে৷ মিঠুন সাহা আমাদের গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য৷ ওরা গত দেড় বছর ধরে আমার স্বামীকে মারার ছক কষছিল ৷ গ্রামে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বসানো নিয়ে সেই বিবাদ শুরু হয়েছিল ৷ ওরা সবাই হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি করে৷ আমার স্বামী এই চুরির প্রতিবাদ করেছিল ৷ আমি বৈষ্ণবনগর থানায় সব ঘটনা জানিয়েছি ৷”BJP-র জেলা মুখপাত্র অজয় গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনাপ্রসঙ্গে বলেন, “গতকাল সুখপাড়া গ্রামে BJP র একনিষ্ঠ কর্মী মহাদেব মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রীর উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় সেখানকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন সাহা ও তার দলবল ৷ গোটা রাজ্যেই যেখানে BJP-র সংগঠন বাড়ছে, তৃণমূলের হামলাও বাড়ছে ৷ মালদা জেলার মানুষ এখন তৃণমূলের উপর থেকে নিজেদের আশীর্বাদের হাত তুলে নিয়েছে৷ এটাই তৃণমূলের সহ্য হচ্ছে না ৷ আমরা সব লক্ষ্য রাখছি ৷ গতকালের ঘটনায় পুলিশ যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয় তবে BJP নিজের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে ৷ এলাকার মানুষকে নিয়ে তৃণমূলকে শায়েস্তা করা হবে ৷ তার রাস্তা আমাদের জানা রয়েছে ৷”
বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ তবে মৌখিকভাবে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে৷ পুরোনো পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে ৷ লিখিত অভিযোগ দায়ের হলেই ঘটনার যথাযথ পুলিশি তদন্ত শুরু হবে ৷