মালদা, 9 ডিসেম্বর: এবার শাসকের রোষের মুখে পুলিশ ৷ মঞ্চ থেকে পুলিশের পশ্চাৎদেশে বিচুটি ঘষে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা ৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতাদের রাজনৈতিকভাবে কবর দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা ৷ এই ঘটনা নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর জুড়ে ৷ বিরোধীদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটে ল্যাজেগোবরে হয়ে মাথা ঠিক রাখতে পারছেন না তৃণমূলের নেতারা ৷
শনিবার হরিশ্চন্দ্রপুরের শহিদ মোড়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয় ৷ উপস্থিত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মোশারফ হোসেন, জেলা সহ-সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, সংগঠনের ব্লক সভাপতি সাহেব দাস, জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য বুলবুল খান, যুব ব্লক তৃণমূল সভাপতি জিয়াউর রহমান, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মক্রম আলি-সহ আরও অনেকে ৷ আর সেই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিকাশবাবু বলেন, "কিছু অফিসার পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে বিজেপির হাওয়ায় দুলছেন ৷ তাঁদের সুড়সুড়ি লাগছে ৷ বিচুটি দিয়ে ঘষে সুড়সুড়ি বন্ধ করে দেওয়া হবে ৷"
একই মন্তব্য পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা তৃণমূল নেতা স্বপন আলিরও ৷ তিনি বলেন, "এখনই দলের সবাইকে চব্বিশের নির্বাচনের আগে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে কবর দেওয়ার শপথ নিতে হবে ৷ এবারের পঞ্চায়েত ভোটে পুলিশ বিরোধীদের হয়ে কাজ করেছে ৷ তৃণমূল সরকার সব শ্রেণির মানুষের জন্য প্রচুর প্রকল্প করেছে ৷ কিন্তু অনেকেই তার সুবিধে পাচ্ছে না ৷ পঞ্চায়েত কিংবা ব্লকের কোনও অফিসার বা বিডিও অথবা হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কোনও অফিসার মানুষের কথা না শোনে তবে প্রয়োজনে তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে অফিস-থানা ঘেরাও করা হবে ৷ মানুষকে বঞ্চিত করলে তাঁরা ছেড়ে কথা বলবেন না ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কিছু অফিসার সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির দালালি করেছে ৷ তাদের পশ্চাৎদেশে বিচুটি পাতা ঘষে দিতে তাঁরা জানেন ৷ পুলিশ এখন বেছে বেছে তৃণমূলের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে ৷ এটা চলতে পারে না ৷"
পরে স্বপন আলি বলেন, “পাঁচ বছর ধরে এই এলাকার সাংসদ বিজেপির খগেন মুর্মু ৷ এতদিন তিনি কী করেছেন ! সবদিক থেকেই এই এলাকা পিছিয়ে ৷ এলাকাবাসী ভেবেছিল, দিল্লিতে বিজেপি সরকার আছে ৷ সাংসদের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন হবে, হয়নি ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কিছু পুলিশ অফিসার সরাসরি সিপিআইএম-কংগ্রেসের হয়ে দালালি করেছেন ৷ আমরা চাই, হরিশ্চন্দ্রপুরের পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন নিরপেক্ষ হোক ৷ কিন্তু কিছু অফিসার পক্ষপাতিত্ব করছেন ৷” একই বক্তব্য বিকাশবাবুরও ৷ তিনি বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু সুড়সুড়ি যাচ্ছে ৷ তৃণমূল সরকার মানুষের সরকার ৷ কিন্তু এখানে কিছু অফিসার যেখানে ছিল সেখান থেকে সরে ক্রমশ মানুষের বিরুদ্ধে যাচ্ছে ৷ আমাদের কাজ হল তাদের জনগণের পক্ষে নিয়ে আসা ৷” তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের কু-মন্তব্য নিয়ে কোনও কথা বলেননি তাঁরা ৷
এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপিও ৷ দলের উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলেন, “এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি ৷ এদের আসল রূপ মানুষ বুঝতে পেরেছে ৷ গোটা দেশে তৃণমূল ধরাশায়ী হয়ে যাচ্ছে ৷ এরা ইন্ডিয়া জোট গড়েছে ৷ সেটাও ধরাশায়ী ৷ এরা বুঝতে পেরেছে, এদের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ তাই পাগল হয়ে গিয়েছে ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে বলেছিল, বিজেপিকে এখান থেকে ধুয়ে সাফ করে দেবে ৷ উলটে ওরাই সাফ হয়ে গিয়েছে ৷ লোকসভা ভোটে মানুষ ওদের সব বুঝিয়ে দেবে ৷ আর ছাব্বিশের আগে তৃণমূল রাজ্য থেকে বিদায় হয়ে যাবে ৷ এখানে পুলিশ যে সঠিকভাবে কাজ করেছিল, তা আগেই প্রমাণ হয়েছিল ৷ তাতেই শাসকদল পুলিশের উপর চাপ দিয়েছিল ৷ তাই পুলিশকে ভয়ে কাজ করতে হচ্ছে ৷ নিরপেক্ষ কাজ করতে পারছে না ৷ মানুষ সেটাও বুঝে গিয়েছে ৷”
আরও পড়ুন