রতুয়া (মালদা), 5 ফেব্রুয়ারি: ফের প্রকাশ্যে শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ৷ হাই মাদ্রাসার পরিচালন সমিতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রবিবার রণক্ষেত্র হয়ে উঠল মালদার রতুয়া (High Madrasah Management Committee Elections)। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে এলাকায় চলল ভাঙচুর ও বোমাবাজি । এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে নামানো হল র্যাফ ও পুলিশ বাহিনী ।
গত 29 জানুয়ারি রতুয়ার বাটনা হাই মাদ্রাসার (Batna High Madrasah)পরিচালন সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা বাতিল হয়ে যায় । এরপর রবিবার 5 ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে সেই নির্বাচন শুরু হয় । জানা গিয়েছে, পরিচালন সমিতির এই নির্বাচনে বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি । 6টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী । সকাল থেকে ভোটদান স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকলেও বেলা বাড়তেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলতে শুরু করে । নিমেষে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । দু'পক্ষের গোষ্ঠী কোন্দলে এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় । চলে বোমাবাজি, গুলিও। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা মতিউর রহমান ।
খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে আসে র্যাফ ও অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী । স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় পুলিশকর্মীরা গুলিবিদ্ধ নেতাকে উদ্ধার করে সামসি গ্রামীণ হাসপাতালে ভরতি করেন । পরে তাঁকে মালদা মেডিক্যালে রেফার করা হয় । ওই মাদ্রাসায় পাঠরত এক ছাত্রীর বাবা খালেদুর রহমান বলেন, "ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরে নিজের নথিপত্র প্রিসাইডিং অফিসারকে দিই । উনি সমস্ত কিছু দেখে বলেন আমার ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে । আমি ভোট দিতে পারিনি । অর্থাৎ, এখানে ছাপ্পা ভোট চলছে । বিষয়টি কয়েকজনকে জানালাম তারা বলল দেখছি ।"
আরও পড়ুন : এবার মালদায় বিক্ষোভের মুখে 'দিদির দূত' জেলা পরিষদের সভাধিপতি
গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতা মতিউর রহমানের ভাই রেজাবুল হক বলেন, "দাদা এলাকায় নেতা হিসেবে ভোটের কাজ করেন । সেই মতোই বাড়ি বাড়ি যাচ্ছিলেন ভোটার আনতে । সেই সময় দাদাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় । শুনতে পেলাম বিহারী নামে কেউ গুলি চালিয়েছে । তবে তার আসল নাম জানা নেই । দাদাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । আমরা সবাই তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী ৷ "
এই বিষয়ে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে নিয়ে রতুয়ার তৃণমূল নেতা ফজলুল হক বলেন, "এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় । আর তাঁকে মদত দিচ্ছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বিধায়ক আবদুর রহিম বকসি । এনারা একটা ছোট্ট মাদ্রাসার ভোটেও হস্তক্ষেপ করছেন । বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন । তাদের এই কর্মকাণ্ডে তৃণমূল কর্মী হিসেবে লজ্জাবোধ করছি । আমরা তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী । ওনারা নবাগত তৃণমূল । দলে এসেছেন ব্যবসা করতে । এনারা পঞ্চায়েতের টিকিট বিক্রি করবেন । তবে মানুষ সচেতন, তাঁরা যোগ্য জবাব দেবেন ।"
ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সভাপতি আবদুর রহিম বক্সি বলেন, "সিপিএম-কংগ্রেসের মাথা ঠিক নেই । সেই কারণে ওরা এসব বলছে । প্রশাসন কাজ করছে বলেই, রাজ্যে সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছে । বাটনা হাই মাদ্রাসায় এখনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট চলছে । বিরোধীরা যে অভিযোগ করছে তা ভিত্তিহীন ।" যদিও এই ঘটনায় জেলা পুলিশের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।
আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল ভরাতে খাতা-পেন হাতে রাস্তায় বিডিও ও পুলিশ !