মালদা, 17 জুন: মনোনয়ন পর্ব মিটতেই আবারও খুন ৷ কালিয়াচক থানার সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল নেতা মোস্তফা শেখকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ । যদিও এই ঘটনা রাজনৈতিক, নাকি অসামাজিক কার্যকলাপ; তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা ৷ তারমধ্যেই জেলাশাসককে ফোন করে ঘটনার রিপোর্ট তলব করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা । পাশাপাশি এই ঘটনায় রাজভবনের তরফেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে ৷
অন্যদিকে, এই খুনের ঘটনায় সরাসরি কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ৷ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে কংগ্রেস ৷ সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মোস্তাফা শেখ পরিচিত সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে ৷ স্ত্রী জিবু বিবি 2013 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জিতে সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন ৷ এবার অবশ্য মোস্তাফা কিংবা তাঁর স্ত্রী প্রার্থী হতে অস্বীকার করেন ৷ দলের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধিতেই তাঁরা মনোনিবেশ করেছিলেন ৷ বিশেষ করে মোস্তাফা এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন ৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন বলেই দাবী করছেন স্থানীয়রা ৷ তবে তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় বেআইনি জুয়ার আসর চালানোর অভিযোগ রয়েছে ৷ অভিযোগ, এই কাজে তাঁর সহযোগী ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সোহরুল বিশ্বাসের ভাই সফিকুল ৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার দুপুরে মসজিদে নমাজ পড়তে গিয়েছিলেন মোস্তাফা ৷ সেখান থেকে ফেরার সময় কয়েকজনের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি ৷ স্থানীয়দের তরফে জানা গিয়েছে, জুয়ার আসরের টাকা-পয়সা নিয়েই সেই বিরোধ বাধে ৷ এরই জেরে তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ৷ যদিও পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগেই শাসকদলের নেতা খুনে শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায় ৷
মোস্তাফার পুত্রবধূ আখতারি খাতুন বলেন, “আমার শ্বশুর জোহরের নমাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিল ৷ তখন রাস্তায় আসমাউল আর মান্নান ঝামেলা শুরু করে ৷ কী নিয়ে ওরা ঝামেলা পাকিয়েছিল জানা নেই ৷ আমার শ্বশুর ভালোভাবে ভোটটা মিটে যাওয়ার কথা বলে ৷ তখনই ওরা শ্বশুরকে পিটিয়ে মেরে ফেলে ৷ একজন রাস্তা থেকে আমার শ্বশুরকে বাড়ি নিয়ে আসে ৷ পাঁচ বছর আগেও ওরা হামলা চালিয়েছিল ৷ ওদের কোনও নির্দিষ্ট দল নেই ৷ আমরা ওদের কঠোর শাস্তি চাই ৷”
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে ফের রক্তাক্ত মুর্শিদাবাদ! নবগ্রামে খুন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি
এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং খুনিদের কঠোর শাস্তির দাবিতে বেশ কিছুক্ষণের জন্য সুজাপুর স্ট্যান্ডে 12 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা ৷ যদিও পুলিশি আশ্বাসে ঘণ্টাখানেক পর তাঁরা অবরোধ তুলে নেন ৷ খবর পেয়ে মোস্তাফার পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে যান রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ৷ তিনি বলেন, “খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ৷ এটা রাজনৈতিক খুন ৷ যারা মোস্তাফাকে খুন করেছে, আমরা তাদের এবার টিকিট দিইনি ৷ এরা আমাদের দলে থেকে তৃণমূলকে নষ্ট করেছে ৷ তাই ওরা কংগ্রেসে গিয়ে টিকিট নেয় ৷ ভোটে ফায়দা তুলতে আজ ওরা আমাদের প্রাক্তন প্রধানের স্বামীকে পিটিয়ে খুন করেছে ৷ আমরা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছি ৷ খুনিদের কঠোর শাস্তি হোক ৷”
যদিও তৃণমূলের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি মোত্তাকিন আলম ৷ তিনি জানান, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ৷ তবে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই ৷ বেআইনি জুয়ার আসরের টাকা-পয়সার বিবাদে ওই ব্যক্তিকে তাঁর দলের লোকজনই পিটিয়ে খুন করেছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে ৷ আমরাও ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছি ৷ তবে যাঁকে খুন করা হয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনের সময় আমাদের প্রার্থী ইশা খান চৌধুরীর উপর হামলার ঘটনায় তিনিও জড়িত ছিলেন ৷ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে ৷”
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের ডাকলেও গেলেন না রাজ্য নির্বাচন কমিশনার