মালদা, 18 অগস্ট : রতুয়ার পর এবার হরিশ্চন্দ্রপুর । ব্লক সভাপতি পদে রদবদল নিয়ে ফের শোরগোল তৃণমূলে (Trinamool Congress) । শোরগোল যত বাড়ছে, দলের গোষ্ঠী কোন্দলের ফাঁকফোকরটা ততই উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ । দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুলেছেন তৃণমূলের তুলসিহাটা অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম । প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায়, পরে ক্যামেরার সামনেই তিনি নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন (TMC Factionalism in Malda) ।
তাঁর বক্তব্য, এই মুহূর্তে দলে ব্যক্তিবাদ চলছে । তাই দলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে । ব্যক্তিবাদ বন্ধ করতে না পারলে দল কোনোদিন দুর্নীতিমুক্ত হতে পারবে না । দলের এই রদবদলে তিনি দুষেছেন দলীয় বিধায়কদের । যদিও চাঁচলের বিধায়ক এই অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে উলটে দলে মনোজ রামেরই গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন (TMC Factionalism in Malda due to Oraganisational Change in Block Level) ।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে জেলা ও ব্লক সভাপতি পদে রদবদল করেছে তৃণমূলের রাজ্য কমিটি । তার জেরে পদ হারিয়ে এলাকার বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দু’দিন আগেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রতুয়া-1 ব্লকের অপসারিত সভাপতি ফজলুল হক । রাজ্য কমিটি এবার হরিশ্চন্দ্রপুর-1 ব্লককে দু’টি সাংগঠনিক ব্লকে ভাগ করেছে । কারণ, এই ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত চাঁচল এবং বাকি চারটি পঞ্চায়েত হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত । একটি সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি করা হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী তাজমুল হোসেন ঘনিষ্ঠ মোশারফ হোসেনকে । অন্যটির সভাপতি হয়েছেন চাঁচলের বিধায়ক ঘনিষ্ঠ মানিক দাস ।
রাজ্য কমিটির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই সরব হয়েছেন মনোজবাবু । দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলেছেন । তিনি বলছেন, “দল নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে বিধায়করাই সব কমিটি ঠিক করবেন । এতদিন হরিশ্চন্দ্রপুর-1 ব্লকে আমরা একসঙ্গে দলের কাজ করেছি । হঠাৎ করে কোনও আলোচনা না করেই এই ব্লকের কমিটি দু’ভাগ করে দেওয়া হল । এক বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাকে অন্য কেন্দ্রের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে । এতদিন ধরে দল করছি । 2007 থেকে সংগঠন চালাচ্ছি । এখনও আমার বিরুদ্ধে ছ’টি মামলা চলছে । একসময় যারা আমার রক্ত ঝরিয়েছে, এখন তাঁরা আমাদের মাথায় এসে ফের আমার রক্ত ঝরাচ্ছেন । এতদিন ধরে দল করেও গুরুত্ব না পেলে অন্তরাত্মা তো কাঁদবেই । তাই আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের আবেগ প্রকাশ করেছি ।”
মনোজবাবু আরও বলেন, “দলের এসব খামখেয়ালিপনায় অনেক পুরনো কর্মী বসে গিয়েছেন । অনেকে মুখ খুলছেন না । কারণ সবাই জানে । হয়তো আবেগ প্রকাশের জন্য আমাকে উপহারস্বরূপ দল থেকে বহিষ্কার কিংবা পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে । চামচাগিরি বন্ধ না হলে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে দলে এর প্রভাব পড়বে । সবসময় এনআরসি কাজ করবে না । ব্যক্তিবাদ থেকে মুক্ত না হলে দলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে থাকবে । এসব নিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানাচ্ছি । আগামীতে পথে নেমে প্রতিবাদ জানাব । তারপর কী হবে, তা সময়ই বলবে ।”
মনোজবাবুর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, “জেলা বা ব্লক কমিটি রাজ্য থেকেই হয়েছে । এখানে বিধায়কের কোনও হাত নেই । কিন্তু উনি বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ক’টা ভোট করিয়েছিলেন, তা কি বলতে পারবেন ?”
আরও পড়ুন : অপসারিত হতেই জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ব্লক সভাপতি