মালদা, 29 অগস্ট: পুলিশ না পারলে তৃণমূলই ব্যবস্থা নিয়ে নেবে ৷ চাঁচলের জালালপুরে যুবক খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার এই মন্তব্য করে কার্যত বদলা নেওয়ার হুমকি দিলেন তৃণমূলের মালদা জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ এই ঘটনায় তিনি চাঁচল থানার এক পুলিশ অফিসারকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছেন ৷ তাঁর দাবি, জমি বিবাদের বিষয়টিকে ঢাল করে কংগ্রেসিরাই সহিদুরকে খুন করেছে ৷ এই ঘটনায় স্থানীয় কংগ্রেস নেতা ইমদাদুল হককে কাঠগড়ায় তুলেছেন রহিম সাহেব ৷ এরপরেই একটি ভিডিয়ো বার্তায় ইমদাদুল সাহেব আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই ঘটনায় তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে ৷
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে চাঁচল 2 নম্বর ব্লকের জালালপুরে বাড়িতে ঢুকে সহিদুর রহমান নামে 30 বছরের এক যুবকের মাথায় গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা ৷ মাত্র এক বিঘা জমির দখল নিয়ে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সহিদুরদের বিবাদ চলছিল বলে পারিবারিক সূত্রে খবর ৷ এই ঘটনায় নাম জড়ায় আহাদ আলি, মোস্তফা, মাজহারুল এবং এজাবুল নামে চারজনে ৷ তারা সবাই জালালপুর এলাকারই বাসিন্দা ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় 40 বছর আগে স্থানীয় পরানিনগর গ্রামে তিন ভাই, মোজাম্মেল, ইলিয়াস ও আমজাদ আলি সাড়ে তিন বিঘা জমি কেনেন ৷ এতদিন তাঁরাই ওই জমির ভোগ দখল করে আসছিলেন ৷ কয়েকবছর আগে দেখা যায়, এই সাড়ে তিন বিঘার মধ্যে আড়াই বিঘা জমি তিন ভাইয়ের নামে রেকর্ড হয়েছে ৷ বাকি এক বিঘা জমি পুরনো মালিকের নামেই রেকর্ড রয়েছে ৷ ওই এক বিঘা জমি পুরোনো মালিকের কাছ থেকে কিনে নেয় আহাদ আলি, মোস্তফা, মাজহারুল আর এজাবুল ৷ এলাকায় তারা জমি মাফিয়া হিসাবেই কুখ্যাত ৷ জমি কেনার পর তা নিজেদের নামে রেকর্ডও করে নেয় তারা ৷ এনিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় ৷ আদালতে মামলাও হয় ৷ এখনও সেই মামলা আদালতে বিচারাধীন ৷ আজ সকালে ওই বিতর্কিত জমি দখল করতে যায় আহাদ-মোস্তাফারা ৷ তাদের বাধা দেন মোজাম্মেলের ছেলে সহিদুর ৷ এর কিছুক্ষণ পরেই আহাদরা চারজন বাড়িতে ঢুকে সহিদুরের মাথায় গুলি করে ৷
জালালপুর গ্রামটি তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মালতিপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বকসির সংসদীয় ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে ৷ খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, "জালালপুরের মাটি থেকে তৃণমূলকে উচ্ছেদ করতে কংগ্রেসিরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছিল ৷ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের কর্মীদের তারা হুমকি দিচ্ছিল ৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জালালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তারা জয়ী হয়েছে ৷ সেদিন থেকে তারা আমাদের কর্মীদের জালালপুর স্ট্যান্ডে থাকতে দিচ্ছে না ৷ আমাদের দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে, বাড়িঘর ভাঙচুর করছে ৷ আজ তারাই সহিদুরকে খুন করেছে ৷ জমি বিবাদ আসল ইস্যু নয় ৷ মূল ইস্যু তৃণমূলকে উচ্ছেদ করা ৷ এর নেতৃত্বে রয়েছেন ইমদাদুল সাহেব ৷ রয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধানও ৷ আজ সবাই মিলিতভাবে সহিদুরকে খুন করেছে ৷ রাজ্যে এমন ঘটনা কোথাও ঘটে না ৷ প্রশাসন যদি এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পিছিয়ে যায়, তৃণমূল নিজেই সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ৷ এর সঙ্গে চাঁচল থানার মেজবাবুও জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা ৷ আমরা তাঁকে অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানাচ্ছি ৷"
রহিম সাহেবের বক্তব্য কানে যেতেই এলাকার কংগ্রেস নেতা ইমদাদুল হক একটি ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, "আজ সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ফোন মারফৎ জানতে পারি, জালালপুরে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে গোলমাল চলছে ৷ সেই সময় আমি মালতিপুরে ছিলাম ৷ এই ঘটনায় রাজনীতির কোনও বিষয় নেই ৷ পুরোটাই জমি সংক্রান্ত ঝামেলা ৷ এবারের নির্বাচনে তৃণমূল এই এলাকায় হেরেছে ৷ তাই এখন তারা বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে ৷ বাস্তবে কী রয়েছে, প্রশাসন তা দেখবে ৷"
আরও পড়ুন : জমি বিবাদের জেরে গুলিতে যুবকের মৃত্যু, পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ স্থানীয়দের