মালদা, 5 ফেব্রুয়ারি : শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলনের জেরে রাতভর ঘেরাও ছিলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার৷ যার জেরে অসুস্থ বোধ করেন তিনি ৷ সোমবার রাতে ঘেরাও থাকার পর গতকাল সকালেও তাঁকে ঘেরাও হয়ে থাকতে হয় ৷ সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবস্থান শুরু করেন অস্থায়ী কর্মীরা ৷ তাঁদের বক্তব্য, রেজিস্ট্রাকে আগে শিক্ষাকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে৷ তারপরই স্বাভাবিক হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম ৷
10 দফা দাবি নিয়ে লাগাতার এক মাস কর্মবিরতি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মীরা ৷ টানা 30 দিন কর্মবিরতিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ তার রেশ এখনও টাটকা ৷ শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বুঝে তড়িঘড়ি এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠক ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ গত ডিসেম্বরে কলকাতায় আয়োজিত সেই বৈঠকে শিক্ষাকর্মীদের প্রায় সব দাবিই মেনে নেওয়া হয় ৷ কিন্তু সমস্যা বাধে গত 24 জানুয়ারির EC বৈঠকে ৷ সেই বৈঠকে আগের বৈঠকের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ৷ সেই বৈঠকে শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয় ৷ এরপরেই ফের উত্তপ্ত হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরমহল ৷ নিজেদের দাবিতে অশিক্ষক কর্মীরা ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ৷ সোমবার দুপুরে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৷ ঝাড়ু হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করেন অশিক্ষক কর্মীদের সঙ্গে সাফাইকর্মীরাও ৷ তাঁদের দাবি, তাঁদের গ্রুপ ডি কর্মীর মর্যাদা দিতে হবে ৷ মিছিল শেষে সবাই ঢুকে পড়ে কন্ট্রোলারের দপ্তরে ৷ সেই সময় সেখানে ছিলেন ডেপুটি কন্ট্রোলার বিনয় হালদার ও ইন্সপেকটর অফ কলেজেস অপূর্ব চক্রবর্তী ৷ আন্দোলনকারীদের নিশানায় ছিলেন বিনয়বাবু ৷ শিক্ষাকর্মীদের বক্তব্য, গত 24 জানুয়ারির EC বৈঠকে বিনয়বাবু উপস্থিত থাকলেও তিনি তাঁদের স্বার্থে মুখ খোলেননি ৷ এই কারণে রাতভর আটকে রাখা হয় বিনয়বাবুকে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা ৷
ETV ভারতকে বিনয়বাবু বলেন, “আমাকে কেন এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, তা নিজেও বুঝতে পারছি না ৷ অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীদের মূল দাবি, স্থায়ী কর্মীদের মতো তাঁদেরও 2019 সালের রোপা অনুযায়ী বেতন দিতে হবে ৷ এনিয়ে EC-তে আলোচনা হয়েছে ৷ কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের নেই ৷ একমাত্র সরকারি কোনও নির্দেশিকা বেরোলে এই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় ৷ রাতভর এখানে আটকে থেকে আমি অসুস্থ বোধ করছি ৷ গতকাল রাতেই আমি আন্দোলনকারীদের বলেছি, আমি এখানকার কর্মী ৷ আমাকে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেই হবে ৷ তাই আমাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু তারা আমার কথায় কর্ণপাত করেনি ৷ আমি চাই, এই সমস্যার সমাধান হোক৷”
আন্দোলনকারীদের পক্ষে সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির গৌড়বঙ্গ শাখার কার্যকরী সভাপতি প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, “আমাদের 10 দফা দাবির ভিত্তিতে 20 ডিসেম্বর EC বৈঠক হয়েছিল ৷ সেখানে সব দাবি মেনেও নেওয়া হয় ৷ কিন্তু 24 জানুয়ারির EC বৈঠকে আগের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় ৷ ডেপুটি কন্ট্রোলার বিনয় হালদার আমাদের বলেছিলেন, 2019 রোপা এন্ট্রি লেভেল অনুযায়ী আমরা বেতন পাব ৷ তিনি তার জন্য আমাদের হয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব৷ তাঁর কথায় আমরা একমাসের আন্দোলন প্রত্যাহার করি৷ কিন্তু আমরা দেখলাম, পরে তিনি আমাদের বিরুদ্ধেই কলকাঠি নাড়লেন ৷ সেই কারণেই তাঁকে রাতভর আটকে রাখা হয়েছে ৷ তিনি অসুস্থ বোধ করলে আমরা তাঁকে অবশ্যই হাসপাতাল নিয়ে যাব ৷ তবে আমরা মেইন গেট তালাবন্ধ করে রাখলেও পড়ুয়া বা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোনও সমস্যা হয়নি ৷ পাশের গেট আমরা খোলা রেখেছি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনও স্বাভাবিক গতিতেই চলছে৷ আজ রেজিস্ট্রারের আসার কথা রয়েছে৷ তাঁকে আমরা আজ গেটেই আটকাব৷ আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েই তিনি ভিতরে যেতে পারবেন ৷"