মালদা, 25 জানুয়ারি : মাঘের মাঝামাঝি৷ কাজ শুরু করে দিয়েছেন জেলার আমচাষিরা ৷ আম বাগানগুলিতে শুরু হয়ে গিয়েছে জেলার প্রধান অর্থকরী ফসলের চাষ ৷ গত কয়েক বছর এই জেলায় আমের উৎপাদন ভালো হলেও তা কদর পায়নি দেশের অন্যান্য রাজ্য কিংবা বিদেশের বাজারে ৷ কারণ, মালদা জেলায় আমচাষে ব্যবহার করা হচ্ছে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ৷ ফলে উৎপাদন ভালো হলেও লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছে না বেশিরভাগ আমচাষি ৷ এনিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই চাষিদের সচেতন করে চলেছে জেলার উদ্যানপালন ও ফল প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর ৷ তাতে কিছুটা কাজ হলেও এখনও বেশিরভাগ চাষিই চাষের ক্ষেত্রে রাসায়নিকের উপরেই ভরসা করেন ৷ এবার এনিয়ে চাষিদের সচেতন করতে আসরে নেমেছেন চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী ইন্সটিটিউশনের জীববিদ্যার শিক্ষক কমলকৃষ্ণ দাস ৷ গত 13-14 বছর ধরে তিনি আম নিয়ে কাজ করছেন৷ আজ তিনি চাঁচলের কলিগ্রামে একটি শিবিরে স্থানীয় চাষিদের জৈব পদ্ধতিতে আম উৎপাদনের বিষয়ে সচেতন করেন ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন মালদা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল হোসেন ৷
কমলবাবু বলেন, “এই জেলার আবহাওয়ার চরিত্র অনুযায়ী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে আমগাছে মুকুল আসে ৷ ফলে এখনও যেসব গাছে মুকুল আসেনি, তার জন্য চাষিদের ঘাবড়ানোর কোনও কারণ নেই৷ এবার জেলায় অনেকদিন ধরে তাপমাত্রা অনেকটাই কম ছিল ৷ জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 14-15 ডিগ্রির আশেপাশে ছিল ৷ তাপমাত্রা 20 ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরোলেই মুকুল বেরোতে শুরু করবে ৷ এই মুহূর্তে কিছু প্রজাতির মুকুল বেরিয়েছে ৷ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য আমরা চাষিদের 13-14 বছর ধরে সচেতন করে আসছি৷ এই সময় শুধুমাত্র জল দিয়ে গাছ ধুয়ে দিলেই চলবে ৷ গাছের পাতায় জমে থাকা ধুলো পরিষ্কার হলে গাছের সালোকসংশ্লেষ ভালো হবে৷ এতে বোঁটা শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না ৷ আমচাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যায় ৷ কিন্তু তার মাত্রা বুঝতে হবে ৷ এখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় ৷ তাই চাষিদের কাছে আবেদন, তাঁরা যেন উদ্যানপালন কিংবা কৃষি দপ্তরের পরামর্শ মেনে আমচাষ করেন ৷”
কমলবাবু আরও জানান, রাসায়নিক সার বর্জন করে জৈব পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে বর্ষার পর গাছের গোড়া শুকোতে হবে ৷ এরপর গোড়ায় গোবর ও খড়ের জলীয় দ্রবণ প্রয়োগ অত্যন্ত কার্যকরী৷ নিমপাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল কিংবা নিমের তেল জলে গুলে গাছে স্প্রে করলে পোকামাকড় দূরে থাকবে ৷ এছাড়া পোকার জন্য আলোর ফাঁদ ও কটন-কেরোসিন পদ্ধতি ব্যবহার করা কার্যকরী ৷ তাঁরা বছরভর চাষিদের এসব হাতেকলমে শেখানোর চেষ্টা করেন ৷
জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল হোসেন বলেন, “মালদা জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম ৷ সেই ফসলের উৎপাদন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, চাষিরা কীভাবে উপকৃত হতে পারবেন, তার দিকে আমাদের নজর রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আম ও ড্রাগন ফ্রুটের চাষ কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার দিকে জোর দিচ্ছেন৷ সেই কারণেই আমরা ফিল্ড ভিজিট করছি ৷ কমলবাবু দীর্ঘদিন ধরে আম নিয়ে কাজ করছেন৷ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য চাষিদের সচেতন করেন তিনি৷ বিভিন্ন সময় আম বাগানগুলি পরিদর্শনও করেন তিনি৷ মালদা জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের মাধ্যমে প্রতিবছর দিল্লিতে আম পাঠানো হয় । সেখানেও এই জেলার আমের কদর দেখা দিয়েছে৷ গত বছর মালদা সেখানে প্রথম হয়েছিল৷ তাই এবার আমাদের উদ্যোগ আরও বেড়েছে৷”
কলিগ্রামের আমচাষি মুর্শেদ হাসান বলেন, “গতবছর কমলবাবুর কথা মতো আম চাষ করে ভালো ফল পেয়েছিলাম ৷ এবার এখনও গাছে সেভাবে মুকুল আসেনি৷ কমলবাবু শুধু জল দিয়ে গাছ ধোওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ তাঁর কথা মতোই এবারও আমি চাষ করব৷ আশা করছি, জল স্প্রে করার পর 8 থেকে 15 দিনের মধ্যে সব গাছে মুকুল চলে আসবে৷ ফলনও ভালো হবে৷” এলাকার আরেক কৃষক সামশুল হকও বলেছেন, "এবার কমলবাবুর পরামর্শ মেনে আম চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছি ৷ আশা করছি এই পদ্ধতিতে চাষ করে এবার ভালো ফলন পাব ৷"