মালদা, ১১ মার্চ : রেহাই মিলল না সুপ্রিম কোর্টেও । কলকাতা হাইকোর্ট জামিনের আবেদন নাকচ করার পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ২০১৭ সালে বন্যাত্রাণ দুর্নীতির মূল অভিযুক্তরা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে (SC dismiss Anticipatory Bail)।
২০১৭ সালে উত্তর মালদার ভয়াবহ বন্যায় কয়েক হাজার বাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। সেই সময় রাজ্য সরকার ঘোষণা করে, যাঁদের বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের ৭০ হাজার টাকা এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৩৩০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই মতো পঞ্চায়েতর তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়। সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১৪ হাজার মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েও দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, প্রকৃত উপভোক্তারা ক্ষতিপূরণ পাননি। ত্রাণের টাকা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছিল হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক মোস্তাক আলমও কলকাতা হাইকোর্টে এনিয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলার রায়ে হাইকোর্ট পঞ্চায়েত প্রধান সোনামণি সাহা, হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ রৌশনারা খাতুন ও তৃণমূল নেতা আফসার হোসেনকে গ্রেফতারির নির্দেশ দেয়। এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল তিন অভিযুক্ত পলাতক। আদালতের নির্দেশে সোনামণি সাহার বাড়িও সিল করেছে প্রশাসন।
হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মূল তিন অভিযুক্ত। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। উলটে অভিযুক্তদের ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে যেতেই ফের চাঞ্চল্য ছড়ায় হরিশ্চন্দ্রপুরে। মামলার অন্যতম আবেদনকারী, পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, “আইনের উপর আমাদের সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। অভিযুক্তরা সুপ্রিম কোর্টে গেলেও তাঁদের জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে গিয়েছে। আশা করছি, বন্যাত্রাণ দুর্নীতিতে আমরা নায্য বিচার পাব।”
আরও পড়ুন:মালদার ফলবাজারে বিধ্বংসী আগুন, কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এনিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া জানাচ্ছেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম, সঠিক তদন্ত হলে গোটা হরিশ্চন্দ্রপুরের অনেক রাঘববোয়াল ধরা পড়বে। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের সেই বক্তব্যকেই মান্যতা দিয়েছে। আমরা সব ঘটনার উপর নজর রাখছি। এই সরকার বেশিদিন থাকবে না।” অন্যদিকে তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, “দুর্নীতিকে দল কখনই সমর্থন করে না। মুখ্যমন্ত্রীও বারবার সেকথা বলেছেন। এক্ষেত্রেও আইন আইনের পথে চলবে।”