মালদা, 29 জানুয়ারি: 'অভিষেক টুয়েলভ পাশ ছেলে ৷ তাঁর এমবিএ ডিগ্রিটাই ভুয়ো ৷ তিনি অমর্ত্য সেনের মতো নোবেল প্রাপক সম্পর্কে বড় বড় কথা বলছেন ৷ আমি আর কী বলব !' পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মালদায় এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে এই ভাষাতেই বিদ্রুপ করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ তাঁর এই মন্তব্য রাজ্য-রাজনীতিতে ফের বিতর্ক উসকে দিল বলা যায় ৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রবিবার মালদায় ছিলেন বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার ৷ বামনগোলা ও হবিবপুর এলাকায় দু'টি জনসভা করেন সুকান্ত ৷ তার মধ্যে একটি ছিল হবিবপুর ব্লকের আকতৈল গ্রাম পঞ্চায়েতের 11 মাইল এলাকায় ৷ মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন ৷ তাঁর মুখে উঠে আসে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস প্রসঙ্গও ৷ উপস্থিত মানুষজনকে জানান, নরেন্দ্র মোদির আমলেই উত্তরবঙ্গে দেশের সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচল করছে ৷
এদিন মঞ্চ থেকে বিডিওদের হুঁশিয়ারি দেন সুকান্ত মজুমদার ৷ তিনি বলেন, "অনেকে বলছে, এবার নাকি ভোট করতে দেবে না ৷ বিডিওরা নাকি ভোট হতে দেবে না ৷ আমরা কি লুডো খেলব ! বিডিও নিরপেক্ষ থাকলে তবে তিনি বিডিওর মতো সম্মান পাবেন ৷ আর তৃণমূলের হয়ে কাজ করলে তৃণমূলের গুণ্ডাদের সঙ্গে আমরা যেমন করি, বিডিওর সঙ্গেও সবাই তেমন করবেন ৷" বক্তব্য শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সুকান্ত কার্যত বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "বিডিওর কাজ সংবিধান রক্ষা করা ৷ তা না করে তারা তৃণমূলের স্বার্থ রক্ষার কাজ করছে ৷ এটা বিডিওর কাজ না ৷ বিডিওরা এখন বেচারা দিদির অফিসার হয়ে গিয়েছে ৷"
সুকান্ত আরও বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল বাংলায় প্রাদেশিকতাবাদ তৈরি করার চেষ্টা করছেন ৷ এর সঙ্গে বেশ কিছু সংগঠনও রয়েছে ৷ আজ যাঁরা এই রাজ্যের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেন, তাঁদের কত শতাংশ বাংলায় চাকরি করেন ! তাঁরা তো গুজরাত, বেঙ্গালুরু-সহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করতে যাচ্ছেন ৷ তাহলে তাঁদের তো সেখান থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ৷ এই প্রাদেশিকতাবাদ পশ্চিমবঙ্গের জন্য খুব খারাপ ৷"
আরও পড়ুন: জমি বিতর্কে জবাব অমর্ত্যের, আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে ফের চিঠি বিশ্বভারতীর
অমর্ত্য সেন ইস্যুতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, "ওনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত সমস্যা হয়েছে ৷ সেই সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া উচিত ৷ জমি মাপলেই তো সমস্যা মিটে যাবে ৷ আমি নোবেল পেয়েছি মানেই কী আমি কারও জমি দখল করতে পারব ! সেই অধিকার তো আমার নেই ৷ তিনি সম্মানীয় ব্যক্তি ৷ বাংলা তথা দেশের বিশিষ্ট সন্তান ৷ এই সমস্যা যত তাড়াতাড়ি মিটে যায় ততই ভালো ৷ ওঁনার মতো নামের সঙ্গে এই ধরনের বিষয় জড়িয়ে থাকা আমার মতে ঠিক নয় ৷"
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অমর্ত্য সেনের সম্পর্কে মন্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অমর্ত্য সেন সম্পর্কে এত বড় বড় কথা বলছেন, এটা বাঙালির আক্ষেপের বিষয় ৷ লজ্জার বিষয় ৷ যাঁর এমবিএ ডিগ্রিটাই ভুয়ো, টুয়েলভ পাশ ছেলে, তিনি একজন নোবেল লরিয়েট সম্পর্কে বড় বড় কথা বলছে ৷ আর নোবেল পুরস্কারের বিষয়টা তো ইতিহাস ৷ ইতিহাস তো অস্বীকার করা যায় না ৷ অ্যালফ্রেড নোবেল যে ক'টা পুরস্কার চালু করে গিয়েছিলেন, তার মধ্যে অর্থনীতি ছিল না ৷ এটা তো ঐতিহাসিক সত্য ৷ এ নিয়ে বিতর্ক হওয়াই উচিত নয় ৷"
আরও পড়ুন: 'অমর্ত্য সেন নোবেলজয়ী নন !' ফের বিস্ফোরক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী