মালদা, 27 এপ্রিল: বুধবারের আতঙ্ক থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি পুরাতন মালদার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের পড়ুয়ারা ৷ ওইদিন এই স্কুলেরই সপ্তম শ্রেণির কক্ষে গুলিভরতি পিস্তল, ড্যাগার আর পেট্রোল বোমা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়ুয়া ও শিক্ষকদের আটক করে রেখেছিল স্থানীয় নেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা দেব বল্লভ ৷ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা ৷ এদিকে আজই 10 দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃত দেব বল্লভকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করেছে মালদা থানার পুলিশ ৷ আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্য দায়রা বিচারক ধৃতের সাত দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন ৷ যদিও দেব বল্লভ এদিন পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর ছেলেকে কিডন্যাপ করার অভিযোগ করেছে ৷
গতকালের ঘটনার পর এদিন ওই স্কুলের সামনে পুলিশের তরফে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বাগতম সাহা জানান, বুধবার ওই ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিল ৷ সপ্তম শ্রেণির একটি রুমে ঢুকে সে টেবিলের উপর পেট্রোল বোমা সাজিয়ে রেখেছিল ৷ তার হাতে ছিল রিভলভার ৷ পুলিশকে প্রধান শিক্ষকই খবর দেন ৷ পুলিশ তাঁকে পরামর্শ দেয়, তাঁরা যেন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে থাকেন ৷
পড়ুয়াদের পিছনের দরজা দিয়ে বাইরে বের করার চেষ্টার কথা বলা হয় পুলিশের তরফে ৷ সেটাই তাঁরা করছিলেন বলে জানান স্বাগতম সাহা ৷ কিন্তু ওই ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেই শুধু কথা বলার জন্য তৈরি ছিল ৷ তাই তিনি উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে ক্লাসরুমের দরজা পর্যন্ত নিয়ে যান ৷ কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ স্কুলে চলে আসে ৷ পুলিশ দেখে ওই ব্যক্তি হুমকি দেয়, পুলিশ ঘরে ঢুকলে তিনি গুলি চালাবে ৷ তখন একজন সাদা পোশাকের পুলিশ অফিসার সাংবাদিক সেজে দরজার সামনে চলে যান ৷ তিনিই অকস্মাৎ ক্লাসরুমে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে কবজায় আনেন ৷
প্রধান শিক্ষক বলেন, "আমাদের স্কুলে 1852 জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৷ কিন্তু গতকালের ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ পড়ুয়াদের উপস্থিতি খুবই কম ৷ দেড়শো থেকে দু'শো জনের বেশি পড়ুয়া আজ স্কুলে আসেনি ৷ ওই ঘটনায় শুধু পড়ুয়া নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এখনও আতঙ্কে রয়েছেন ৷ প্রশাসনের তরফে সবাইকে কাউন্সেলিং করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷ এ নিয়ে আমি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ আজ প্রেয়ার লাইনে মাইকে পড়ুয়াদের স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি ৷ আজ পুলিশের তরফেও স্কুলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ তবে আমাদের স্থায়ী কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই ৷ এ নিয়ে আমি আগামী পরিচালন কমিটির বৈঠকে আলোচনা করব ৷"
এ দিকে নেমুয়া গ্রামে দেব বল্লভের বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধ বাবা ছাড়া কেউ নেই ৷ তাঁর বোন অনিমা মণ্ডল অন্য গ্রাম থেকে এসে রোজ বাবাকে দেখাশোনা করে যান ৷ তিনি জানিয়েছেন, দাদা এমন ছিল না ৷ এখনও সে কৃষিকাজ করে ৷ আগে বিজেপি করত ৷ বউদিকে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড় করিয়েছিল ৷ ভোটে জেতার পর বছর চারেক আগে বউদি পারিবারিক কারণে বাবার বাড়ি চলে যান ৷ ছেলে তখনও দাদার কাছেই থাকত ৷
পরে বউদি ছেলেকেও নিয়ে চলে যান ৷ তারপর থেকেই দাদা কেমন যেন হয়ে গিয়েছে ৷ এক বছর আগেও পিস্তল, বোমা-সহ ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় ৷ পুলিশ দেবকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ৷ পরে জামিনে ছাড়া পায় সে ৷ আসলে দাদা ছেলের জন্য পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেন অনিমা ৷ কিন্তু সে মানসিক ভারসাম্যহীন নয় ৷ কোথা থেকে সে পিস্তল পেল, সেটাও তারা জানেন না, দাবি করেন অভিযুক্তের বোন ৷
এদিকে বৃহস্পতিবার আদালতে যাওয়ার পথে দেব বল্লভ বলে, "আমি এমন নই ৷ পুলিশ আমাকে এসব করতে বাধ্য করেছে ৷ ক’দিন আগেও ছেলে আমার সঙ্গে কথা বলেছে ৷ সে আমার কাছে আসতে চাইছে ৷ কিন্তু পুলিশই আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করে রেখেছে ৷ সেই ভিডিয়ো আমার কাছে আছে ৷ তৃণমূলের কিছু নেতা ওকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছে ৷ সেই অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে ৷ তৃণমূলের নেতারা এখন দুই দিকেই খেলছে ৷"
আরও পড়ুন: হাড়হিম করা ঘটনা মালদার স্কুলে, পিস্তল দেখিয়ে পড়ুয়াদের পণবন্দির চেষ্টা যুবকের !