মালদা, 2 ডিসেম্বর: দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারই এক বন্ধুর বাবার বিরুদ্ধে ৷ ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ তার ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে (Malda Student Death Case) ৷ ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের তুলসিহাটা গ্রামের মস্তান মোড়ে ৷ খবর পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠিয়েছে ৷ আত্মঘাতী ছাত্রীর নাম স্নেহা সাহা (17) ৷
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্নেহার খুব কাছের বন্ধু জ্যোতি শাহ ৷ জ্যোতির বাড়ি বিহারের আজিমনগর এলাকায় ৷ তুলসিহাটায় তার দাদুর বাড়ি ৷ দাদুর কাছে থেকেই পড়াশোনা করত সে ৷ কিছুদিন আগে জ্যোতি তার প্রেমিকের সঙ্গে দাদুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ৷ সে তার প্রেমিককে বিয়েও করে ৷ এই ঘটনায় স্নেহাকে দায়ী করে জ্যোতির পরিবার ৷ অভিযোগ, জ্যোতির বাবা মনোজ শাহ এনিয়ে স্নেহাকে সবসময় দোষারোপ করতেন ৷ এমনকী তিনি নাকি ফোনে জ্যোতিকে বাড়িঘর ভাঙচুর-সহ নানা ধরনের হুমকিও দিতেন ৷ পরিবারের দাবি, মনোজবাবুর হুমকিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় স্নেহা ৷ এই ঘটনায় মনোজবাবুকেই দায়ী করেছেন স্নেহার পরিবারের সদস্যরা ৷
আরও পড়ুন: দুষ্টুমির 'শাস্তি', চড় মেরে নার্সারির পড়ুয়ার গালে দাগ বসালেন শিক্ষিকা
স্নেহারা তিন বোন ৷ বাবা মিন্টু সাহা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৷ মধ্যবিত্ত পরিবার ৷ মিন্টুবাবু বলেন, "কিছুদিন আগে জ্যোতি নামে মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তার প্রেমিককে বিয়ে করে ৷ এর জন্য আমার মেয়েকেই দায়ী করত জ্যোতির বাবা ৷ 27 নভেম্বর রাতে তাঁর লোক মেয়েকে ফোন মারফৎ হুমকি দেয়, আমাদের 11 লাখ টাকা দিতে হবে ৷ নইলে মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে ৷ বাড়িঘর ভাঙচুর করবে ৷ জ্যোতির বাবার লোকজনই মেয়েকে হুমকি দিত ৷ ওরা সব বিহারের বাসিন্দা ৷ জ্যোতি পালিয়ে যাওয়ার পর ওরা আমার মেয়ের নামে থানায় অভিযোগ করে ৷ যদিও পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেছে ৷ আমি মেয়ের ফোনের সিমকার্ড খুলে নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু ওরা মেয়ের সোশাল মিডিয়ার আইডিতে যোগাযোগ করে হুমকি দিচ্ছিল ৷ শেষ পর্যন্ত আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ৷ আমার কাছে সমস্ত প্রমাণ রয়েছে ৷ আমি জ্যোতির বাবার নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করব ৷"
একই বক্তব্য স্নেহার কাকা দিলীপকুমার সাহারও ৷ তিনি বলেন, "জ্যোতির বাবা প্রথম থেকেই বলতে শুরু করেছিল, আমার ভাইঝিই নাকি তাঁর মেয়েকে প্রেমিকের সঙ্গে পালাতে মদত জুগিয়েছে ৷ অথচ স্নেহা এর মধ্যেই ছিল না ৷ জ্যোতির বাবা ভাইঝিকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছিলেন ৷ গতকাল রাতেও হুমকি দিয়েছেন ৷ তার সমস্ত প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে ৷ অশান্তিতেই মেয়েটা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল ৷ স্নেহার সৎকার্য মিটলেই আমরা জ্যোতির বাবার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাব ৷"
আরও পড়ুন: বকেয়া 3 মাসের বেতন, পড়ুয়াকে স্কুলে আটকে রাখার অভিযোগ
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ৷ আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ অভিযোগ দায়ের হলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে ৷