Registration of Migrants: ভিনরাজ্য়ে মালদার শ্রমিকদের মৃত্যুমিছিল অব্যাহত, নাম নথিভুক্তির উদ্যোগ প্রশাসনের

Special Camp of Administration for Registration of Migrants: মালদা থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে ৷ ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুর খবর প্রায়ই পাওয়া যায় ৷ এর পরও জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পূর্ণ তথ্য প্রশাসনের কাছে নেই ৷ ফলে এই নিয়ে উদ্বেগে প্রশাসন ৷ এই নিয়ে প্রচার শুরু করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে ৷

মালদা, 11 সেপ্টেম্বর: প্রথমে মিজোরাম, তারপর অসম ও উত্তর প্রদেশ, শেষে হায়দরাবাদ ৷ ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে মালদার পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুমিছিল অব্যাহত ৷ কিন্তু এখনও জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পূর্ণ তথ্য প্রশাসনের কাছে নেই ৷ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে রাজ্য সরকারকেও ৷ সেই কারণেই এবারের দুয়ারে সরকার শিবিরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে ৷ যদিও তাতে এখনও পর্যন্ত তেমন সাফল্য মেলেনি বলেই প্রশাসনিক সূত্রে খবর ৷ তাই প্রশাসনের তরফে গ্রামগঞ্জের সঙ্গে শহর এলাকাতেও জোর প্রচার শুরু করা হয়েছে ৷

মিজোরামে নির্মীয়মান রেলব্রিজ ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল মালদার 23 শ্রমিকের ৷ মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছিল সারা দেশ ৷ প্রশ্ন উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থানের বিষয় নিয়ে ৷ একসঙ্গে এত শ্রমিকের মৃত্যু হয়তো নাড়িয়ে দিয়েছিল সারা দেশকে ৷ কিন্তু প্রায়শই ভিনরাজ্যে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মালদার শ্রমিকরা ৷ ওই ঘটনার পর অসমে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন রতুয়া-1 ব্লকের এক শ্রমিক ৷ উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে মৃত্যু হয়েছে চাঁচল-1 ব্লকের কলিগ্রামের বাসিন্দা, 40 বছরের গঙ্গা তুরির ৷ এবার হায়দরাবাদে বাড়ি তৈরির সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন কালিয়াচক-1 ব্লকের শেরশাহী গ্রামের 28 বছরের যুবক আকিদুল শেখ ৷

মাসখানেক আগে এলাকার আরও অনেক শ্রমিকের সঙ্গে হায়দরাবাদে বহুতল নির্মাণের কাজে যান রাজমিস্ত্রি আকিদুল ৷ স্ত্রী ও নাবালক তিন সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশাতেই তাঁর ‘বিদেশ’ যাত্রা ৷ গত শনিবার তিনি লোহার মাচায় চেপে ড্রিল মেশিনের কাজ করছিলেন ৷ সেই মেশিনের তার থেকে লোহার মাচা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যায় ৷ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন আকিদুলও ৷ সহকর্মীরা দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন ৷ তড়িঘড়ি আকিদুলকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে ৷ চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ সোমবার মাঝরাতে তাঁর দেহ হায়দরাবাদ থেকে বাড়িতে ফিরে আসার কথা ৷

আকিদুলের পরিবারের তরফে মহম্মদ হাজিবুল জানাচ্ছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ভিনরাজ্যে কাজে যান ৷ কিন্তু সরকারিভাবে আকিদুলের নাম পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে নথিভুক্ত নেই ৷ নাম রেজিস্ট্রেশন ছিল না মিজোরাম দুর্ঘটনায় মৃত 23 শ্রমিকেরও ৷ বিষয়টি যে যথেষ্ট চিন্তার, তা মেনে নিচ্ছেন মালদা জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন ৷ তিনি বলছেন, “রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে দু’লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে ৷ স্বাভাবিক মৃত্যু হলে পরিবার পাবে এক লাখ টাকা আর আহতরা পাবেন 50 হাজার টাকা ৷ সমস্যা হচ্ছে, জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের পুরো তথ্য প্রশাসনের কাছে নেই ৷’’

এই নিয়ে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘শ্রমিকরা প্রশাসনকে কিছু না জানিয়েই ভিনরাজ্যে কাজে চলে যান ৷ তাই রাজ্য সরকার এই শ্রমিকদের ডেটা বেস তৈরি করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ৷ এবারের দুয়ারে সরকার শিবিরে এই শ্রমিকদের নাম রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে ৷ কোনও শ্রমিক কিংবা তাঁর পরিবার শিবিরে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন ৷ এতে শ্রমিকদেরও উপকার হবে ৷ কোনও কারণে তাঁদের মৃত্যু হলে রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের সুবিধা পাবেন পরিবারের সদস্যরা ৷ আমরা গ্রামেগঞ্জে এর প্রচার শুরু করেছি ৷”

গত 1 সেপ্টেম্বর থেকে জেলায় শুরু হয়েছে দুয়ারে সরকার শিবির ৷ প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখনও পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণে খুব একটা সাফল্য পাওয়া যায়নি ৷ এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলাশাসক নিতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে জেলা জুড়ে প্রচার করা হচ্ছে ৷ কোনও পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে থাকলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা শিবিরে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন ৷ এর জন্য প্রতিটি শিবিরে বিশেষ কক্ষ করা হচ্ছে ৷ আশা করা যাচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিক কিংবা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারবেন ৷